এস আলম সুমন, হাকালুকি থেকে ফিরে

৩০ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০৫

হাকালুকিতে দেখা মিললো সংকটাপন্ন ছয় প্রজাতির পরিযায়ী পাখির

সন্ধান পাওয়া যায়নি রিং পরানো পাখির

এশিয়ার বৃহত্তম হাকালুকি হাওরে এবারও বৈশ্বিক মহাবিপন্ন প্রজাতির পাখি বেয়ারের ভুঁতিহাঁসসহ সংকটাপন্ন ৬ প্রজাতির পরিযায়ী পাখির দেখা মিলেছে। তবে সন্ধান পাওয়া যায়নি বার্ড রিং পরানো অতিথি পাখির। গত বছরের চেয়ে সামান্য পাখির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ২৮ ও ২৯ জানুয়ারি দুইদিন ব্যাপী হাকালুকি হাওরে পাখি শুমারিতে এ তথ্য ওঠে আসে।

বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের দুই দিনের জলচর পাখি শুমারি শেষে বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ও পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক সিলেটটুডেকে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, বিপন্ন ও প্রায় সংকটাপন্ন ৬ প্রজাতির পাখির দেখে মিলেছে। এর মধ্যে বিশ্বে মহাবিপন্ন পাখির একটি হলো বেয়ারের ভূঁতিহাঁস। ধারণা করা হচ্ছে সারা বিশ্বে ১শ' থেকে দেড়শটি ভূতিহাঁসের অস্থিত্ব রয়েছে। দেশের একমাত্র হাকালুকিতে এই পাখির দেখা মিলেছে। এই পাখি দেশে আর কোথাও দেখা যায় না।

ইনাম আল হক বলেন, শীত মৌসুমে উত্তরের তুন্দ্রা অঞ্চল বরফাচ্ছন্ন হয়ে যাওয়ায় বেয়ারের ভূঁতিহাঁস হাকালুকি হাওরসহ বিভিন্ন দেশে চলে আসে। কিন্তু বিষটোপসহ পাখি শিকারিদের বিভিন্ন নিধনযজ্ঞের কারণে অন্যান্য পাখির মতো ভুঁতিহাঁসও হুমকির সম্মুখীন। এদের নিরাপদ আবাস ও বিচরণের ব্যবস্থার মাধ্যমে এই পাখি সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে। হাওরের ফুট বিলে প্রথমবারের মত ৩টি মেটে রাজহাঁসের দেখা মেলে। এগুলো মুলত সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলে বিচরণ করে।

তিনি আরো বলেন, গত কয়েক বছর ধরে হাকালুকি হাওরটি অরক্ষিত থাকায় অবাধে শিকারীরা পাখি শিকার করছে। শুমারীর সময় হাওরে বিষটোপে মারা যাওয়া অতিথি পাখি পাওয়া যায়। এবং বন্দুক দিয়ে পাখি শিকার করছেন অনেকে সেটাও দেখা যায়। বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক। অবিলম্বে হাওরকে পরিকল্পনার আওতায় এনে আবারো অতিথি পাখির অভয়াশ্রম করা হোক।

শুমারীর তথ্যমতে ও সরেজমিন হাকালুকি ঘুরে জানা যায়, বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব ও আইইউসিএন বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে দুদিনব্যাপী দু’টি গ্রুপে ভাগ হয়ে হাকালুকি হাওরের হাওয়াবন্যা, কালাপানি, রঞ্চি, দুধাই, গৌড়কুড়ি, চকিয়া, উজান-তরুল, ফুট, হিংগাউজুড়ি, নাগাঁও, লরিবাঈ, কাংলি, কুড়ি, চেনাউড়া, পিংলা, আগদের বিল, চাতলা, নামা-তরুল, নাগুয়া-ধলিয়া, মাইছলা-ডাক, চন্দর, মালাম, ফুয়ালা, পলোভাঙা, হাওরখাল, কইর-কণা ৪০টি বিলে জলচর পাখিশুমারি করা হয়।

শুমারিতে সর্বমোট ৫৩ প্রজাতির ৪০,১২৬ টি জলচর পাখি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে চকিয়া বিলে সর্বোচ্চ ৫৪৩০টি পাখি, চাতলা বিলে ২য় সর্বোচ্চ ৫১৪৭টি পাখি পাওয়ায় যায়। শুমারিতে বিপন্ন প্রজাতির বেয়ারার ভূঁতিহাঁসসহ সংকটাপন্ন  মরচেরঙ ভূতিহাঁস, ফুলুরি-হাঁস ও কালামাথা-কাস্তেচড়া উত্তুরে-টিটি, উদয়ী-গয়ার এই ছয় প্রজাতির জলচর পাখি দেখা যায়।

বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ইনাম আল হক ও পল থম্পসনের নেতৃত্বে বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের সদস্যদের একটি দল পাখি শুমারিতে অংশ নেয়। শুমারিতে অন্যান্যদের মধ্যে অংশগ্রহণ করেন বার্ড ক্লাবের সদস্য শাহেদ ফেরদৌস, ওমর শাহাদাত, সফিকুর রহমান, তারেক অনু, সিবিইসিএ প্রজক্টের কুলাউড়া অফিসের  প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাঈদ আল শাহিন ও সূচনা প্রকল্পের অফিস সহকারি মো.শফিউল্লাহ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত