নিজস্ব প্রতিবেদক

১৩ ফেব্রুয়ারি , ২০২০ ২০:১৩

‘আমরার পুয়ায় বিশ্বজয় করছে’

সিলেটের ওসমানীনগরের তাজপুর বাজার থেকে বালাগঞ্জের তিলকচানপুর গ্রামের দূরত্ব প্রায় ১৪ কিলোমিটার। এই দীর্ঘ সড়কের দুই পাশে অসংখ্য মানুষের ভিড়। এক কিশোরকে বরণ করে নিতে জড়ো হয়েছেন তারা। যারা জড়ো হয়েছেন তাদের অনেকেই কিশোরটির নাম জানেন না।

সড়কের পাশে দাঁড়িয়েই একজন আরেকজনের কাছ থেকে নাম জেনে নিচ্ছিলেন। আর তার চেহারা তো চিনেন না বেশিরভাগ লোকই। তারা কেবল এইটুকুই জানেন এই এলাকার এক ছেলে বিশ্বকাপ জয় করে এসেছে। সে বাড়ি ফিরছে আজ। তাকে বরণ করে নিতেই জড়ো হয়েছেন সকলে।

তাজপুর এলাকায় সড়কের পাশে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন বৃদ্ধ আছকর আলী। কেন দাঁড়িয়েছেন জানতে চাইলে, তিনি বলেন- ‘আমরার পুয়ায় (ছেলে) বিশ্বজয় করছে। সে আইজ আইবো (আসবে)। তারে দেখতে আইছি (আসছি)।’

এই ‘আমরার পুয়া’ হচ্ছে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড় তানজিম হাসান সাকিব। সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার বালাগঞ্জ সদর ইউনিয়নের তিলকচানপুর গ্রামের গৌছ মিয়া আর সেলিনা পারভীনের ছেলে সাকিব। বিশ্বকাপ জয় করে বৃহস্পতিবার বিকেলে নিজ বাড়িতে ফিরে সে।

আছকর আলীর সাথে আলাপের কিছুক্ষণ পরই মানুষের হৈ-হুল্লোড় আর মোটরসাইকেলের কান ঝালাপালা করা হর্ন শোনা গেলো। শব্দের থেকে নাকি আলোর গতি বেশি। কিন্তু এখানে শব্দের পরেই দৃশ্যমান হলো চিত্র। শতাধিক মোটরসাইকেলের বহর আসছে সড়ক দিয়ে। এই বহরেরই একটি মোটরসাইকেলের পেছনে দাঁড়িয়ে আছে সদ্য গোঁফ ওঠা এক কিশোর। গলায় ফুলের মালা আর হাতের বিজয় চিহৃই জানিয়ে দিলো- এই সেই বিশ্বজয়ী ছেলে। যে বেড়ে ওঠেছে এই গাঁয়েরই ধুলোমাটিতে।

সাকিবের বাড়িতে পৌছতে পৌছতে বিকেল গড়িয়ে গেল। আগে থেকেই পাড়া প্রতিবেশী জড়ো হয়েছেন বাড়িতে। মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা বাড়িতে পৌছতেই করতালি আর সাকিব সাকিব স্লোগানে তাকে বরণ করে নেওয়া হলো। বাংলাদেশের নামে স্লোগানও হলো কিছুক্ষণ।

সবাই নিজেদের মতো করে উদযাপনে ব্যস্ত। আলাদা করে কারো সাথে কথা বলার সুযোগ নেই। সাবিকের বাবা-মা তো শতশত অতিথিদের খাতির যত্ন করে কুলিয়ে উঠতে পারছেন না। তার উপর আছে সেলফির আবদার। এতো সব ডিঙিয়ে তাদের কাছে পৌঁছানোই দায়।

তার আগে এলাকাবাসীদের কাছ থেকেই জেনে নেওয়া গেলো কিছু তথ্য। কাতার প্রবাসী গৌছ মিয়া আর গৃহিণী সেলিনা পারভীনের ৪ সন্তানের তৃতীয় সাকিব। পড়েছেন স্থানীয় বালাগঞ্জ ডিএন স্কুলে। এরপর চলে গেছেন ঢাকায় বিকেএসপিতে।

এলাকাবাসীর আর সহপাঠীদের কাছ থেকে এরকম খুঁটিনাটি তথ্য জেনে নেওয়ার ফাঁকেই দেখা মিললো গৌছ উদ্দিনের। ছেলেকে বরণ করতে বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন তিনি।

গৌছ উদ্দিন বলেন, ছোটবেলায় খুব দুরন্ত ছিলো সাকিব। সারাক্ষণ খেলাধুলা নিয়ে থাকতো। এজন্য অনেকসময় আমরা রাগ করেছি। বকা দিয়েছি। কিন্তু যখন দেখলাম খেলাধুলার প্রতিই তার সব আগ্রহ তখন বিকেএসপিতে ভর্তি করতে সম্মত হই।

ছেলের বিজয়ে গর্বিত এই বাবা বলেন, আজ সাকিবরা পুরো দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে। তারা পুরো দেশের সন্তান।

এলাকার এই উচ্ছ্বাস আর ভালোবাসায় আপ্লুত সাকিবও। সে বলে, এলাকার মানুষের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। এলাকার মানুষকে দেশের মানুষকে আনন্দ দিতে পেরেছি। এটাই আমাদের সার্থকতা।

সাকিব জানায়, ফাইনালে উঠার পর আমাদের দলের সবাই জয়ের ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলাম। ম্যাচের আগেরদিনও টিম মিটিংয়ে জয় ভিন্ন অন্য কিছু নিয়ে আমরা ভাবিনি।

বৃহস্পতিবার সিলেটে সাকিবকে ঘিরে উৎসবটা শুরু হয় আসলে সকাল থেকেই। সকাল থেকেই ক্রীড়াপ্রেমীদের অনেকে জড়ো হন সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। দুপুর দেড়টার দিকে সাকিবকে বহনকারী বিমানবন্দর এসে পৌঁছালে তাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাকিবের এলাকা সিলেট-৩ আসনের সাংসদ মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরী কয়েস।

সংসদ সদস্য মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরী কয়েস জানান, বিজয়ী দলের সকল সদস্যকে সিলেট এনে সংবর্ধনা দেওয়া হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত