নিজস্ব প্রতিবেদক

২১ ফেব্রুয়ারি , ২০২০ ১৫:১৪

শহীদ মিনারে এসে কাঁদলেন নিহত ছাত্রলীগ কর্মী অভিষেকের মা-বাবা

ছেলে হত্যার বিচার ও আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি

‘বাবু (অভিষেক) তুই কই গেলিরে বাবু। তুই আইছসনি শহীদ মিনার। দেখ তর লাইজ্ঞা ফুল লইয়া আইছি। আমরারতো আর কেউ রইলো না রে।’ এভাবেই সকাল ৭টা থেকে বিলাপ করছিলেন গত ৬ ফেব্রুয়ারি টিলাগড়ে খুন হওয়া ছাত্রলীগ কর্মী অভিষেক দে দ্বীপের বাবা-মা।
 
শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও শহীদ দিবস উপলক্ষে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ পুষ্পস্তবক অর্পণ করছিলেন। এ সময় শহীদ মিনারের বেদির এক পাশে বসে ছেলের ছবি বুকে নিয়ে বুক চাপড়াচ্ছিলেন আর চোখের পানি ফেলছিলেন নিহত অভিষেকের মা অনিতা। পাশে বসেই বুক চাপড়ে বিলাপ করছিলেন অভিষেকের বাবা দীপক দে। একমাত্র সন্তান হারানোর কান্না আর বুকফাটা আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠেছিল শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ।

আদরের ছেলেকে বাবু বলে ডাকতেন দীপক দে ও অনিতা দে। তাই বারবার বাবু বাবু বলে চিৎকার করে কাঁদছিলেন আর বলছিলেন, ‘আমার বাবু কোনো রাজনীতি করতো না। মাত্র এসএসসি পাশ করিয়া কলেজে ভর্তি হইছিল। রাতে খেলা দেখতে গেছিল টিলাগড় মাঠে। এরপর আর প্রাণ নিয়া ফিরে নাই আমার বাবু।’

অভিষেক দে দ্বীপ। ছবি: ফেসবুক

অভিষেকের মা অনিতা দে অভিযোগ করে বলেন, আমার বাবুকে (অভিষেক) যখন হাসপাতালে নেওয়া হয় তখন সৈকতও হাসপাতালে ছিল। তাকে পুলিশ আটক করেনি। সে নিজেই ধরা দিয়েছে। এটা তাদের একটা চালাকি। তা না হলে আমার ছেলে হত্যার আজ ১৫ দিন পার হলেও পুলিশ আর কোনো আসামিকে ধরছে না কেন?

অভিষেকের মা আরও বলেন, ঘটনার দিন রাতে অভিষেকের শিক্ষক পূজন তাকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যায়। রাত ১০টার দিকে আমাদেরকে বলা হয় বাবু এক্সিডেন্ট করছে। এরপর শুনি ওরে ছুরি দিয়ে খুন করা হয়েছে। শিক্ষক হয়ে কিভাবে পূজন আমার ছেলেটাকে হত্যা করলো। এই বলে কাঁদতে থাকেন অভিষেকের মা।

অভিষেকের বাবা দীপক দে বলেন, খুন হওয়ার পর জানতে পারি সরস্বতী পূজার কোন ঘটনা নিয়ে নাকি আমার ছেলেকে হত্যা করছে ওরা। আমার বাবু হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই আমি। পুলিশ কিছুই করছে না। আজ ১৫দিন পার  হলেও সৈকত ছাড়া একটি আসামিও ধরতে পারেনি পুলিশ। পুলিশের এত শক্তি এত সোর্স থাকতেও তারা আমার ছেলের হত্যাকারীদের ধরছে না। কেন, কোন কারণে পুলিশ নীরব হয়ে আছে।

এ ব্যাপারে শাহপরান থানার ওসি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, এ মামলার আসামিরা পলাতক আছেন। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি তাদের ধরার। কিন্তু আসামিদের সব ফোন বন্ধ। তারা সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ রেখেছে। তাই তাদের ধরতে দেরি হচ্ছে। আসামিদের ব্যাপারে যদি অভিষেকে পরিবারের কাছে কোনো তথ্য থাকে তাহলে সেটা আমাদেরকে জানালে আমরা ওদের তাড়াতাড়ি ধরতে পারবো।

সৈকতের গ্রেপ্তারের ব্যাপারে তিনি বলেন, সৈকতকে পুলিশই আটক করেছে। সে অসুস্থ ছিল তাই তাকে রিমান্ডে নেওয়া যায়নি। হাসপাতাল থেকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাই তার কাছ থেকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে যা পেয়েছি তার ভিত্তিতে তদন্ত চলছে। সৈকত সুস্থ হলে তাকে রিমান্ডে নেওয়ার পরিকল্পনা আছে আমাদের।

আসামিদের ধরতে রাজনৈতিক কোনো চাপ আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের না ধরতে এখন পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক চাপ আসেনি। কোনো তদবিরও আসেনি। আমরা আসামিদের ধরার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।

প্রসঙ্গত, গত ৬ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) রাতে বিবাদে জড়িয়ে ছাত্রলীগ কর্মী সৈকত রায় সমুদ্রের নেতৃত্বে একদল যুবকের হামলায় সিলেট নগরীর টিলাগড় এলাকায় অভিষেক দে দ্বীপ নামের ছাত্রলীগ কর্মী নিহত হন। নিহত দ্বীপ গ্রিনহিল স্টেট কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। এদিকে হামলায় নেতৃত্বদানকারী সৈকত রায় সমুদ্র সিলেট সরকারি কলেজের ছাত্র ও ছাত্রলীগ কর্মী। এছাড়া নিহত দ্বীপ ও অভিযুক্ত সমুদ্র দুইজনই আওয়ামী লীগ নেতা রণজিৎ সরকার গ্রুপের অনুসারী বলেও জানা গেছে। পুলিশ জানিয়েছে, সদ্য সমাপ্ত সরস্বতী পূজায় কথা কাটাকাটির জের ধরে এই হত্যার ঘটনা ঘটেছে।

পরে অভিষেক দে দ্বীপ হত্যায় ছাত্রলীগ কর্মী সৈকতকে প্রধান আসামি করে পূজন, সাগর ও সৌরভ এ চারজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও তিন-চারজনকে আসামি মোট আটজনের বিরুদ্ধে ৮ ফেব্রুয়ারি (শনিবার) সন্ধ্যায় নিহতের বাবা দীপক দে বাদী হয়ে শাহপরান থানায় মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সৈকত রায় সমুদ্র (২২) নামের ছাত্রলীগ কর্মীকে ঘটনার দিন রাতেই আটক করে পুলিশ। তবে অভিষেকের পরিবার বলছে সৈকতকে পুলিশ আটক করেনি। সে নিজেই পুলিশের কাছে ধরা দিয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত