দেবকল্যান ধর বাপন

১১ মার্চ, ২০২০ ০১:৩০

ধুলোয় ধুসর নগরী

বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

ধুলোয় অন্ধকারাচ্ছন্ন সড়ক। ছবিটি নগরীর জিন্দাবাজার এলাকা থেকে সম্প্রতি তোলা

সিলেট নগরীর জিন্দাবাজার থেকে নয়াসড়ক সড়ক। প্রায় দুই মাস ধরে এই সড়কে সংস্কার কাজ চলছে। ড্রেন নির্মাণ, কালভার্ট নির্মাণের পর এখন চলছে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন মাটির নিচ দিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ। এইসব উন্নয়ন কাজের কারণে দিনের বেলাও ধুলোয় প্রায় অন্ধকার থাকে এই সড়ক। ফলে এই সড়ক দিয়ে যাত্রী ও পথচারীদের চলাচলই দায় হয়ে পড়েছে।

কেবল এই একটিমাত্র সড়ক নয়। নগরীর বেশিরভাগ সড়কেরই এখন এমন দশা। বেশিরভাগ সড়কেই চলছে উন্নয়ন কাজ। উন্নয়নের খেসারত হিসেবে সৃষ্টি হচ্ছে ধুলো। ফলে পুরো নগরীই এখন ধুলোয় ধুসর। ফলে যাত্রী ও পথচারীদের চোখ মুখ বন্ধ করে নাক চেপে ধরে নগরীর সড়কে চলাচল করতে হচ্ছে। এতে করে সাম্প্রতিক করোনা আতঙ্কের আগে থেকেই সিলেটে বেড়েছে মাস্কের ব্যবহার।

এদিকে মাত্রাতিরিক্ত ধুলাবালির কারণে হাঁচি, কাশি, জ্বর, সর্দি চোখ ওঠাসহ নানা ধরণের চর্মরোগের শিকার হচ্ছেন নগরবাসী।

ধুলো প্রতিরোধে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না নেওয়া ও নগরীর উন্নয়ন কাজের ধীরগতিতে ক্ষুব্ধ সিলেটবাসী। জিন্দাবাজার এলাকার পথচারী কলেজ শিক্ষার্থী রাহাত আলম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, স্বাভাবিক কারণে প্রতিদিন রাস্তায় কিছু ধুলা জমে। এগুলো ঠিকমতো অপসারণ না করার ফলে ধুলা জমতেই থাকে। চলন্ত যানবাহনের কারণে এসব ধুলো বাতাসে মিশে পুরো সড়ক চলাচলের অনুপযোগি করে তুলেছে। এছাড়া বিভিন্ন পরিষেবার সংযোগ মেরামত, বৃদ্ধি ও নতুন সংযোগ স্থাপনের সময় রাস্তা খননে সৃষ্ট মাটি রাস্তার ওপরেই স্তূপ করে রাখা হয়। যা থেকেও ধুলোর সৃষ্টি হচ্ছে।

তিনি বলেন, সিলেট নগরীতে সড়ক সম্প্রসারণ ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নতি হলে আমরাই এর সুফল ভোগ করবো। কিন্তু বর্তমানে নগরীর যে অবস্থা তাতে আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ছি।

এদিকে নগরীর সড়কের পাশের দোকানপাট ও বাড়িগুলোর অবস্থা একেবারে নাজুক। ধুলোয় নষ্ট হয়ে পড়ছে ঘরবাড়ির আসবাবপত্র ও দোকানপাটের পণ্যসামগ্রী।

মাস্ক পরা অবস্থায় নগরীর চৌহাট্টা এলাকায় রিকশা চালাচ্ছিলেন রংপুরের সোয়রাব মিয়া। তিনি বলেন, অনেক দিন ধরেই রাস্তার কাজ চলছে। এতে আমরা রিকশা চালকরা সবচেয়ে বেশি বিপদে আছি। ধুলাবালির কারণে রিকশা চালাতে খুব সমস্যায় পড়তে হয়। ধুলাবালিতে মাস্ক ব্যবহার করি কিন্তু কতক্ষণ আর মাস্ক পড়ে থাকা যায়? এর একটা স্থায়ী সমাধান দরকার।

চিকিৎসকরা বলছেন, সড়কের ধুলাে থেকে তৈরি হচ্ছে সিসা, নাইট্রিক অক্সাইডসহ নানা ধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ। ধুলার ফলে শ্বাসকষ্ট, যক্ষ্মা, হাঁপানি, চোখের নানা ধরনের রোগ, ব্রঙ্কাইটিসসহ বিভিন্ন রোগে মানুষ আক্রান্তের ঝুঁকি বাড়ছে। আর পরিবেশবিদদের মতে, উন্নয়ন কার্যক্রম চলাকালীন, বারবার পানি দেয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না।

তবে সিসিক বলছে, যেসব এলাকায় ধুলাবালি খুব বেশি সেসব এলাকায় প্রতিদিনই পানি ছিটানো হয়।

এ ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী লোকবল সঙ্কটকে দায়ী করে বলেন, আমাদের লোকবলে অনেকটা ঘাটটি রয়েছে, তারপরও আমরা আমাদের প্রকৌশলীদের সাথে কথা বলেছি এ ব্যাপারে, যাতে যত দ্রুত সময়ের মধ্যে এ কাজগুলো শেষ করা যায়। তিনি আরও বলেন, নগরীরে ধুলা-বালু নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সিসিক। এছাড়া নগরীতে ধুলাবালি নিয়ন্ত্রণে নিয়মিতভাবে আমরা পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালাচ্ছি। যে সকল এলাকায় বেশি ধুলাবালি উড়ছে সে সকল এলাকায় সিসিকের পক্ষ থেকে পানি ছিটানোর হচ্ছে।

সিসিকের এ কর্মকর্তা বলেন, আমরা নগরবাসীর পানির চাহিদাই পুরোপুরি মিটাতে পারছি না, সেখানে আলাদা করে নগরীর রাস্তাঘাটে পানি ছিটানোটাও একটা কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তারপরও আমি সিসিকের পানি শাখাকে বলবো নগরীর যে যে সড়কে বেশি ধুলাবালি উড়ছে সেখানে যেন তারা আরও বেশি করে পানি ছিটানোর ব্যবস্থা নেন।

ধুলোয় স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ার কথা উল্লেখ করে সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মণ্ডল সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ধুলোযুক্ত বাতাস গ্রহণের ফলে প্রাথমিকভাবে শ্বাসকষ্ট, নাসারন্ধ্রে ও ফুসফুসে ময়লা জমে বিভিন্ন রোগ দেখা দিতে পারে। এমনকি ধুলাবালি শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে মানুষের শরীরে গিয়ে ধীরে ধীরে ফুসফুসে ক্যান্সারেরও সৃষ্টি করতে পারে।

তিনি আরও বলেন, ধুলাযুক্ত বাতাসের সঙ্গে শরীরের ভিতরে ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করে, যার ফলে নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা, ব্রংকাইটিস, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট হতে পারে। আর যাদের আগে থেকেই শ্বাসকষ্ট আছে তাদের রয়েছে মৃত্যুঝুঁকি। এছাড়া ব্যাকটেরিয়া শরীরের ত্বকেরও অনেক ক্ষতিসাধন করে বিভিন্ন রকমের চর্মরোগ দেখা দেয়।

ডা. প্রেমানন্দ মণ্ডল বলেন, যতদিন পর্যন্ত নগরীতে সংস্কার কাজ বা উন্নয়নমূলক কাজ না শেষ হবে ততদিন পর্যন্ত ধুলাবালির হাত থেকে নগরবাসীর মুক্তি নেই। তবে যদি সিলেট সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নগরীতে পানিবাহি ট্রাকের মাধ্যমে পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করা যায় সেক্ষেত্রে কিছুটা হলেও কম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পরবেন নগরবাসী।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত