তাহিরপুর প্রতিনিধি

১০ এপ্রিল, ২০২০ ১৯:০০

তাহিরপুরে ধান কাটার শ্রমিক সংকট

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় এবার একফসলি বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু করোনাভাইরাস ও শ্রমিক সংকটের কারণে ধান কাটা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। তাই উৎবেগ আর উৎকণ্ঠার মাঝে কৃষক পরিবার দিন পার করছেন। এদিকে ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়েছে। তাই বাঁধ নিয়েও শঙ্কায় রয়েছেন হাওরবাসী।

এদিকে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন স্থানীয় ধানকাটা শ্রমিকদের উদ্বুদ্ধ করে মাঠে নামাতে স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, সুধীজনদের আহবান জানিয়েছেন।

এছাড়াও শ্রমিকদের সুবিধার জন্য স্থানীয় কৃষক শ্রমিকদের হাওরপাড়ের বিদ্যালয়গুলোতে সাময়িকভাবে রাতে থাকার জন্য ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

জানা যায়,আবহমান কাল থেকেই এ জেলার প্রতি বছর এই সময়ে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে হাজার হাজার ধান কাটার শ্রমিক আসতেন। এসে বিভিন্ন দলে দলে ভাগ হয়ে হাওরে ধান কাটতেন। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে ফসল ডুবিসহ নানান কারণে শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। আর বর্তমান সময়ে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দোকানপাট, যানবাহনসহ সব কিছুই বন্ধ করা হয়েছে। তাই অন্য এলাকা থেকে আসতে পারছেন না শ্রমিকরা।

উপজেলা জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, জেলার প্রতিটি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা স্থানীয় ধানকাটা শ্রমিক দলের নেতাদের নম্বর সংগ্রহ করে তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এবং তাদের ধান কাটায় নামার প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। উপজেলার বৃহত্তর শনি, মাটিয়ান, মহালিয়া, শমসা, চুনখলা, বলদা, গুরমা, ফানা হাওরসহ ২৩টি ছোট বড় হাওরে ৭২ কিলোমিটার হাওর রক্ষা বাঁধ ও বেড়িবাঁধের জন্য ৭০টি হাওর রক্ষা প্রকল্প (পিআইসি) ব্যয় হয়েছে ১৩ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা। এ উপজেলায় ১৭৫২৭হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। ফলনও ভাল হয়েছে।

মাটিয়ার হাওর পাড়ের কৃষক সাদিুর রহমান জানান, একফসলি বোরোধানী জমির খাদ্য উদ্ধৃত হাওর জেলা সুনামগঞ্জ। বাংলা নতুন বছরেই পাকা ধান কাটা শুরু হয়ে পুরু বৈশাখ মাস জুড়েই চলে নবান্নে উৎসবের আনন্দ। এবার সব ভাটায় পড়েছে। কোন কারণে ফসলের ক্ষতি হলে জাতীয়ভাবে খাদ্য সরবরাহের প্রভাব পড়ে। তাই বর্তমান করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ স্থানীয় ধানকাটা শ্রমিক নেতাদের ঐক্যবদ্ধ করে উৎসাহিত করতে হবে। তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে হাওরের পাকা ধানকাটা শুরু করলে দ্রুত সময়ের মধ্যেই ধান কাটা শেষ হবে। না হলে শ্রমিক সংকট দুর হবে না কৃষকরা ক্ষতির মুখে পড়বে।

শনির হাওর পাড়ের কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, এবার ধানের ফলন ভাল হয়েছে। হাওরে কিছু কিছু জমিতে ধান পেকে গেছে আর আগামী সপ্তাহ থেকেই পুরোদমে কাটা শুরু হবে। কিন্তু শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। শ্রমিক সংকটের মধ্যে ভয়াবহ এই করোনার কারণে আরও শ্রমিক সংকট প্রকট হয়েছে। আর ওয়ার্কশপগুলো বন্ধ থাকায় কৃষিযন্ত্রপাতি মেরামত করতে পারছি না।

তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়ন বাণিজ্যিক কেন্দ্র বাদাঘাট বাজারে ওয়ার্কশপ মালিক তোফাজ্জল হোসেন ও আফজাল হোসেন জানান, কৃষিযন্ত্রপাতি ঠিক করার জন্য মেশিন মালিকগন আমাদের কাছে আসেন কিন্তু সরকারী নির্দেশনায় ওয়ার্কশপ বন্ধ থাকায় কৃষি যন্ত্রপাতি মেরামত কাজ ও ক্রয় করতে পারছেন না।

তাহিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসান উদ দোলা বলেন, যারা ধান কাটেন তাদের নিয়ে ১০৬টি টিম গঠন করা হয়েছে। তাদের সাথে কথা হয়েছে। আমাদের ধান কাটা মেশিন আছে এছাড়াও গ্রামে থেকে যারা শহরে গিয়ে কাজ করত তারা শহর থেকে ফিরে এসেছেন। বালু মহল, শুল্ক ষ্টেশন বন্ধ থাকার শ্রমিকগন বাড়িতেই অবস্থান করছে। তাদের ধান কাটায় লাগাতে পারলে শ্রমিক সংকট হবে না।

 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত