কামরুজ্জামান আল রিয়াদ,শায়েস্তাগঞ্জ

২৯ এপ্রিল, ২০২০ ১৯:৫৬

শায়েস্তাগঞ্জে দিশেহারা দুগ্ধ খামারিরা

উৎপাদিত দুধের অর্ধেকও বিক্রি হচ্ছে না

শায়েস্তাগঞ্জে করোনাভাইরাসের কারণে মিষ্টির দোকান, হোটেল রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকায় চরম বিপাকে পড়েছেন দুগ্ধ খামারিরা। দুধের চাহিদা না থাকা ও গোখাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন লোকসান গুনতে হচ্ছে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার খামারিদের।

এ নিয়ে কথা হয় শায়েস্তাগঞ্জ পৌর এলাকার দাউদনগর মহল্লার এগ্রো ফার্মের মালিক সৌরভ পাল চৌধুরীর এর সাথে। একাউন্টিং এ মাস্টার্স করে চাকরী না করে নিজ উদ্যোগে এই যুবক গড়ে তুলেছেন শায়েস্তাগঞ্জ এগ্রো ফার্ম ও এগ্রিটেক্ট ফার্ম লিমিটেড নামে দুটি প্রতিষ্ঠান । তার এই ফার্ম থেকে দৈনিক প্রায় ২শত লিটার দুধ উৎপাদন হয়।

দুধ মিষ্টির দোকান, হোটেল ও বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করে তিনি বেশ সাবলম্বী হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমন প্রতিরোধে দোকানপাট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেশ বিপাকে পড়েছেন তিনি। আগের মতো দুধ বিক্রয় হচ্ছে না এখন। ফলে প্রতিদিন অনেক টাকা লোকসান হচ্ছে তার ।এই সমস্যাটা শুধু সৌরভ পালের একার নয়। শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার ৩২টি খামারীরাও দুধ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন।

শায়েস্তাগঞ্জে দুগ্ধ খামারিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, করোনাভাইরাসের কারণে বন্ধ রয়েছে মিষ্টির দোকান, চায়ের দোকান বিভিন্ন বেকারিসহ অন্যান্য খাবারের দোকান। এই দোকানগুলোতে কাঁচামাল হিসেবে গরুর দুধের চাহিদা অনেক। বিশেষ করে মিষ্টান্ন উৎপাদনে দুধের চাহিদা বেশি কিন্তু করোনায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় দুধের চাহিদা নেই বললেই চলে। তবে সবকিছু বন্ধ থাকলেও দুধ উৎপাদন অব্যাহত রয়েছে। গরুর খাবার ও অন্যান্য খরচ দিয়ে এখন হিমসীম খাচ্ছেন তারা।

শায়েস্তাগঞ্জ এগ্রো ফার্মের মালিক সৌরভ পাল চৌধুরী বলেন, আমার ফার্ম থেকে দৈনিক প্রায় ২০০ লিটার দুধ উৎপাদন হচ্ছে। যা দিয়ে ৫ জন শ্রমিকসহ নিজের পরিবারের খরচ বহন করি। চাহিদা না থাকায় তার উৎপাদিত দুধের বেশির ভাগই গাভীর বাচ্চাকে খাওয়াতে হচ্ছে। কিছু দুধ আমরা ছানা তৈরী করে রাখছি। এতে মারাত্মক লোকসান গুনতে হচ্ছে । খামার প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হয়েছে। বাজারে পশু খাদ্যর দামও বেশি। এভাবে চলতে থাকলে পথে বসতে হবে।

মায়া ডেইরি ফার্মের মালিক মিজানুর রহমান রাসেল বলেন, শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলায় দৈনিক প্রায় সাড়ে ২ হাজার লিটার দুধ উৎপাদন হয়। প্রায় প্রত্যেকটি খামারের মালিকরা পথে বসতে শুরু করেছেন। দুধের দাম কমিয়েও বিক্রয় করতে পারছি না আমরা। এই অবস্থায় আমরা কি করবো ভেবে পাচ্ছি না। তাছাড়া এখন গরুর খাদ্যে দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের অনেক লোকসান হচ্ছে।

আরেক খামারি সালমা বেগম বলেন, করোনাভাইরাসের কারনে দুধ দিয়ে তৈরি করা সকল প্রকার খাবারের দোকান বন্ধ রয়েছে। ফলে আমাদের খামারের উৎপন্ন দুধ বিক্রি করতে পারছি না। এরই সাথে গরুর খাদ্যের দাম অতিরিক্ত বেড়েছে। খামারের গাভীদের খাবার দেয়াই কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। এ রকম চলতে থাকলে খামার ব্যবসা ধ্বংস হয়ে যাবে।

এ বিষয়ে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার রমা পদ দে বলেন, শায়েস্তাগঞ্জে বড়, ছোটো মিলে ৩২টি দুগ্ধ খামার রয়েছে। করোনা পরিস্থিতে বেশীরভাগ দোকান বন্ধ থাকায় উৎপাদিত দুধ বাজারজাত করতে পারছে না খামারীরা। আমরা সরকারি ভাবে দুগ্ধ খামারীদের তালিকা করছি। দুগ্ধ খামারীর বিষয়টি সরকারের নজরে আছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত