শাকিলা ববি

২৯ এপ্রিল, ২০২০ ২৩:৪১

সিলেটে মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষে আদা ও মসুরের ডাল

নগরীর মদিনা মার্কেট এলাকার একটি দোকানে এসে ১০০ গ্রাম আদা চাইলেন এক ক্রেতা। বিক্রেতা বললেন, ‘আদা নেই। দাম বেড়েছে তাই আদা রাখিনি দোকানে।’ এই বিক্রেতার মত মদিনা মার্কেট এলাকার বেশিরভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নেই আদা। শুধু মদিনা মার্কেট নয় নগরীর বেশিরভাগ পাড়া- মহল্লার খুচরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নেই আদা। যে ক'টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আদা আছে সেখানে বিক্রি হচ্ছে উচ্চ মূল্যে। ব্যবসায়ীদের অজুহাত পাইকারি বাজার থেকে অধিক মূল্যে আদা কিনেছেন তাই বিক্রি করতে হচ্ছে অধিক মূল্যে।

বিজ্ঞাপন

আদার এই ঝাঁজের ব্যাপক প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। গত এক সপ্তাহের মধ্যে দেড়শ টাকার আদা বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকার বেশি দরে। শুধু আদা নয় দাম বেড়েছে রসুন, পেঁয়াজ, তেল, ডাল, সয়াবিন তেলেরও।

প্রতি বছরই রমজান এলে বেড়ে যায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। এবার তার সাথে যুক্ত হয়েছে করোনাভাইরাস দুর্যোগ। একমাসের অধিক সময় ধরে চলা লকডাউনের কারণে সঙ্কট দেখা দিয়েে অনেক পণ্যে। বিশেষত আমদানি নির্ভর পণ্যের সঙ্কট বেড়েছে। ফলে বেড়েছে দামও।

নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় নিম্নবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত, তিন শ্রেণীর লোকজন পড়েছেন বিপাকে। একদিকে লকডাউনে খেটে লোকজনের আয় রোজগার শূন্যের কোঠায়। অপরদিকে দ্রব্যমূল্যের বাজারে এই উত্তাপের প্রভাব পড়েছে মানুষের ঘরে ঘরে।

নগরীর বিভিন্ন খুচরা বাজার থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, লকডাউনের শুরুতে প্রতি কেজি মসুর ডাল বিক্রি হয় ৫০টাকা দরে। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা দরে। আদা বিক্রি হতো ১২০ থেকে ১৫০ টাকা দরে। বর্তমানে আদা বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৪০০ টাকা দরে। রসুন ছোট ১০০ ও বড় ১২০ টাকা দরে বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ছোট ১৪০ ও বড় ১৮০ টাকা দরে। পেঁয়াজ বিক্রি হতো ৩৫ টাকা দরে, এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা দরে। প্রতি বস্তা মিনিকেট চাল বিক্রি হতো ১৬শ টাকা দরে, এখন বিক্রি হচ্ছে ২২৫০ টাকা দরে। চিনি বিক্রি হতো ৫০ টাকা দরে, এখন বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা দরে।

নগরীর বাগবাড়ি এলাকার গৃহিণী হুসনে আরা বিথি বলেন, ইফতারের জন্য খিচুরি, আখনি রান্না করা হয়, তাই আদা, পেয়াজ, রসুন রমজান মাসে একটু বেশি লাগে। বাজারে এসে দেখি দোকানে আদা নেই। যেসব দোকানে আছে সেগুলোতেও অনেক দাম। আদার পাশাপাশি তেল, ডাল, আদা, রসুন, চিনিরও দাম বেড়েছে। এক সপ্তাহ আগেও মসুর ডাল কিনেছি ৫০ টাকা কেজিতে। সেই ডাল এখন কিনতে হচ্ছে ১০০ টাকা কেজিতে। একদিকে লকডাউন, অপরদিকে বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। সরকার যদি বাজার নিয়ন্ত্রণে না নামে তাহলে এই রমজান মাসে অনেক কষ্ট হবে আমাদের।

ফাজিলচিসত এলাকার হাবিব আহমদ বলেন, প্রতিবছরই রোজার সময় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়। এবারও তাই হয়েছে। এক সপ্তাহ আগেও পেঁয়াজ কিনেছি ৩৫ টাকা কেজি। অথচ এখন কিনতে হচ্ছে ৬০ টাকা করে। আমরা খেটে খাওয়া মানুষ। করোনার কারণে এমনিতেই কাজ বন্ধ। এখন এভাবে দাম বাড়তে থাকলে খেয়ে বাঁচা মুশকিল হয়ে যাবে।

এদিকে খুচরা ব্যবসায়ীরা নিত্যপণ্যের এই উর্ধ্বমূল্যের দায় চাপাচ্ছেন পাইকারি ব্যবসায়ীদের উপর। মদিনা মার্কেট এলাকার ব্যবসায়ী রাজু আহমেদ বলেন, কালীঘাট থেকে আমরা এই পণ্যগুলো পাইকারি দামে কিনে আমি। এখন তারা যদি দাম বাড়ায় আমাদের দামে বিক্রি করতে হয়। এখন বেশি দামে কিনে এনে আমিতো কম দামে বিক্রি করতে পারবো না। তাছাড়া আমরা মালামাল মজুদও রাখি না। দু-একদিন পর পর কালীঘাট থেকে মাল এনে বিক্রি করে দেই।

বিজ্ঞাপন

আদার দাম বৃদ্ধি নিয়ে তিনি বলেন, পাইকারদের কাছে আদার দাম বেশি দেখে আদা ক্রয় করিনি। কারণ প্রতিদিন শুকিয়ে আদারও ওজন কমে যায়। আমি ৫কেজি আদা আনলেও ৫ কেজি বিক্রি করতে পারি না। এত আরও লস হয়। তার উপর ক্রেতাদের বুঝাতে পারি না আমি বেশি দামে আদা এনেছি। তাই আপাতত দোকানে আদা তুলিনি।

এ ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, বাজার মনিটরিং মূলত জেলা প্রশাসন করছে। তবুও আমরা আমাদের সিটির ম্যাজিস্ট্রেটকেও বলেছি। কোথাও যদি পণ্যের দাম বেশি রাখা হয় বা অসামঞ্জস্যপূর্ণ দাম রাখেন ব্যবসায়ীরা তাহলে মোবাইল কোর্ট করার জন্য। আমরা সিলেট চেম্বার অব কমার্সকে অনুরোধ করেছি তারা যেন ব্যবসায়ীদেরকে এ ব্যাপারে সতর্ক করে দেন। এ বিষয়ে নজরদারি বাড়াতে এবং আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আমরা সিসিকের পক্ষ থেকে সিলেট জেলা প্রশাসন ও সিলেট চেম্বার অব কমার্সকে চিঠি দিয়েছি। বাজার মনিটরিংয়ে সিসিকের পক্ষ থেকে মোবাইল কোর্ট অভিযান শীঘ্রই শুরু হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত