সিলেটটুডে ডেস্ক

১৭ জুলাই, ২০২১ ১০:০২

মেয়রের ঔদ্ধত্য!

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা

তিনি মেয়র, দেশের একটি পৌরসভার মেয়র। হতদরিদ্র বৃদ্ধের বুকে ঘুষি মেরে ফের আলোচনায় এসেছেন। নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা। সম্পর্কে তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছোটভাই, তবে দুজনের রাজনৈতিক বিরোধের বিষয়টি অপেনসিক্রেট যদিও সেটা একপাক্ষিকভাবে আবদুল কাদের মির্জার পক্ষ থেকে।

শুক্রবার সকালে পৌরসভা ভবনের সামনে দরিদ্রদের মধ্যে শাড়ি ও লুঙ্গি বিতরণকালে এক বৃদ্ধের বুকে ঘুষি মারেন আলোচিত-সমালোচিত এই মেয়র। এরপর ওই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।

কাদের মির্জার শাড়ি ও লুঙ্গি বিতরণের অনুষ্ঠানটি সরাসরি তার ফেসবুকে লাইভ করা হয়। এতে দেখা যায়, সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো নারী-পুরুষের মধ্যে শাড়ি ও লুঙ্গি এবং নগদ টাকা বিতরণ করছেন কাদের মির্জা। ২০ মিনিট ৫৮ সেকেন্ডের ওই লাইভের ১৭ মিনিট ৩১ সেকেন্ডের সময় ষাটোর্ধ্ব এক বৃদ্ধ কাদের মির্জার সামনে এলে তাকে একটি শাড়ি দেওয়া হয়। ওই বৃদ্ধ হাতে নেওয়ার পর পাঁচ-ছয় সেকেন্ডের মাথায় সেটির পরিবর্তে আরেকটি শাড়ি নেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় কাদের মির্জা বৃদ্ধের বুকে ঘুষি মারেন।

এ ঘটনার প্রায় ৩৫ সেকেন্ডের পর পাশের কেউ একজন এ বিষয়ে কাদের মির্জাকে কিছু বলেন। এ সময় একটি শাড়ি হাতে নিয়ে ওই ব্যক্তির দিকে ছুড়ে মারেন কাদের মির্জা। লাইভ থেকে কেটে নেওয়া ৬ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

একজন বৃদ্ধকে এভাবে প্রকাশ্যে অপদস্থ করার ঘটনায় কোম্পানীগঞ্জসহ গোটা নোয়াখালীর মানুষ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এ নিয়ে নানা সমালোচনামূলক মন্তব্য দেখা যায়।

তবে এই ঘটনার পর নিজের ফেসবুকে ঘুষি মারার বিষয়টি অস্বীকার করেন কাদের মির্জা। শুক্রবার রাত ৯টা ৪০ মিনিটে নিজের ফেসবুকে কাদের মির্জা লেখেন, ‘প্রিয় দেশবাসী, আপনারা জানেন মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউনে জনজীবন অবরুদ্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে আমি আমার পৌরসভা থেকে নিম্ন আয়ের অসহায় মানুষদের জন্য বিভিন্ন সহযোগিতা করে আসছি। এর আগেও আমি সর্বদা চেষ্টা করতাম, অসহায় গরিব-দুঃখী মানুষের পাশে থাকতে। আমার পৌরসভা ও আমার ব্যক্তিগত পক্ষ হতে, আমি শুধু কোম্পানীগঞ্জ নয়, কবিরহাট, দাগনভূঞা, সোনাগাজী, সেনবাগসহ বিভিন্ন জনপদের অসহায় মানুষদের সহযোগিতা করে আসছি। কখনও কোনো মানুষ সাহায্য প্রত্যাশা করে আমার কাছ থেকে খালি হাতে ফিরে যায়নি। আজও আমার পৌরসভাতে অসহায় মানুষদের এক হাজারের বেশি শাড়ি-লুঙ্গি, পাঁচশত জনকে নগদ অর্থ ও প্রায় দুই হাজার জনের মাঝে চাউল বিতরণ করা হয়। পৌরসভার ছোট্ট আঙিনায় সহস্রাধিক মানুষ একত্রিত হয়ে যাওয়ায় দ্রুততার সাথে কাপড় বিতরণ করতে হয়েছিল।

তিনি আরও বলেন, তাই যাদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে তাদের দ্রুত চলে যাওয়ার জন্য বলা হচ্ছিল। তখন একজন মানুষ কাপড় পাওয়ার পরও দাঁড়িয়ে থাকায় এবং একাধিকবার বলার পরও সে মাস্ক না লাগানোর কারণে তাকে দ্রুত সরে যাওয়ার জন্য হাত দিয়ে সরানো হচ্ছিল। এখানে তাকে আঘাত করা হয়নি। এ বিষয়ে তিনি কোনো আক্ষেপও করেননি। সহস্রাধিক মানুষের মাঝে একযোগে এতগুলো ত্রাণ বিতরণ করার সময় অজান্তে কিছু অসাবধানতা হতে পারে, এক্ষেত্রে ইচ্ছাকৃত কোনো কিছু করা হয়নি। আমি সব সময় অসহায় গরিব মানুষের পাশে আছি। কখনও কেউ আমার কাছে সাহায্যের জন্য এসে খালি হাতে ফিরে যায়নি। আমার সামর্থ্য অনুযায়ী আমি যতদিন বেঁচে থাকব অসহায় গরিব মানুষের সেবা করে যাব।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত