সিলেটটুডে ডেস্ক

০৩ মার্চ, ২০২৩ ২২:৫০

পঞ্চগড়ে নিহত যুবক ‘জুমার নামাজ পড়ে বাড়ি ফিরছিলেন’

পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের (কাদিয়ানি) সালানা জলসাকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। নিহতের পরিবারের দাবি, সংঘর্ষের সময় তিনি নামাজ পড়ে বাড়িতে ফিরছিলেন।

নিহতের নাম আরিফুর রহমান (২৮)। তিনি পঞ্চগড় পৌরসভার মসজিদপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি শহরের একটি প্রিন্টিং প্রেসের ব্যবস্থাপক ছিলেন। পঞ্চগড় পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মাজেদুর রহমান চৌধুরী আরিফুরের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

নিহতের স্বজনেরা জানান, দুপুরে শহরের মসজিদপাড়া এলাকায় সংঘর্ষের সময় আরিফুরের মাথায় গুলি লাগে। তাকে প্রথমে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থান্তান্তর করা হয়। রংপুরে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আহমদিয়া সম্প্রদায়ের (কাদিয়ানি) সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে জুমার নামাজ শেষে বিভিন্ন মসজিদ থেকে বেরিয়ে লোকজন পঞ্চগড় শহরের প্রাণকেন্দ্র চৌরঙ্গী মোড়ে সমবেত হন। পরে তারা মিছিল বের করেন। মিছিল থেকে ইটপাটকেল ছোড়া হলে পুলিশ বাধা দেয়। এ নিয়ে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের সঙ্গে বিজিবি ও র‍্যাবের সদস্যরা যোগ দেন। কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছোড়েন তারা। এ সময় বিক্ষুব্ধরা পুলিশ ও বিজিবির গাড়ি ভাঙচুর করে।

দুপুরের এই ঘটনার সময় ৯ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে পঞ্চগড় সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কাউয়ুম আলী, ভবেস চন্দ্র পাল, ট্রাফিক পরিদর্শক কাজী কামরুল ইসলাম, সহকারী উপরিদর্শক (এএসআই) মো. আবদুল্লাহ, পুলিশ সদস্য আল-আমিন, ফরিদুর রহমান ও কামরুজ্জামানের নাম পাওয়া গেছে। আহত অন্য ব্যক্তিরা স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। প্রাথমিকভাবে তাদের নাম জানা যায়নি।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১৭ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে বলে সংস্থাটির জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

সংঘর্ষ চলাকালে শহরের উপকণ্ঠে আহম্মদনগর এলাকায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের অন্তত ২০-২৫টি বাড়িঘর ও জেলা শহরের চারটি দোকানের মালামাল বের করে অগ্নিসংযোগ করা হয়। শহরের করতোয়া সেতু-সংলগ্ন ট্রাফিক পুলিশের একটি কার্যালয় পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ সময় শহরের মূল প্রবেশপথ করতোয়া সেতুর মাঝখানে বিক্ষোভকারীরা বাঁশ ফেলে ও আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে। এতে যানবাহনসহ পথচারীদের চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়।

ঘটনার পর বিকেল সাড়ে চারটার দিকে পথচারীদের চলাচল শুরু হলেও সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে ধাক্কামারা এলাকায় পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়ক বন্ধ করে দেয় বিক্ষোভকারীরা। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে জেলা শহরের চৌরঙ্গী মোড়ের পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও জেলা শহরের ধাক্কামারা এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছিল একদল জনতা। এ সময় আহম্মদনগর এলাকার আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ওপর বিক্ষিপ্তভাবে হামলা চলছিল বলে জানা যায়। হামলার ঘটনায় শহরের বিভিন্ন এলাকার বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ আছে।

এরআগে গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে তেঁতুলিয়া-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পঞ্চগড় শাখাসহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা। পরে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকজনের বেশ কয়েকটি বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে।

তবে শুক্রবার দুপুরে মিছিল বের করার বিষয়ে ইসলামী আন্দোলনের নেতারা অস্বীকার করেছেন। মসজিদ থেকে লোকজন নিজেরাই মিছিল বের করেছেন বলে তাদের দাবি।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, শুক্রবারের মিছিলের বিষয়ে তাদের কোনো নির্দেশনা ছিল না। কারা মিছিল বের করেছেন, তা তাদের জানা নেই।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত