সিলেটটুডে ডেস্ক

০৪ মার্চ, ২০২৩ ০১:৩১

পঞ্চগড়ে ধর্মীয় সহিংসতায় নিহত বেড়ে ২

পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের (কাদিয়ানি) সালানা জলসাকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় সহিংসতায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দুইয়ে দাঁড়িয়েছে।

দুপুরের দিকে সংঘর্ষ চলাকালে আরিফুর রহমান (২৮) নামের এক তরুণ নিহত হন। তার মাথায় গুলি লেগেছিল। তিনি পঞ্চগড় পৌরসভার মসজিদপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি শহরের একটি প্রিন্টিং প্রেসের ব্যবস্থাপক ছিলেন।

রাতে আরও একজনের মৃত্যুর তথ্য আসে। নিহত এই যুবকের নাম জাহিদ হাসান (২৩)। নিহত জাহিদ আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বলে জানা গেছে। তার বাড়ি নাটোরের বনপাড়া এলাকায়।

বিক্ষোভকারীরা জাহিদ হাসানকে করতোয়া নদীর ধারে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সালানা জলসার আহ্বায়ক আহমদ তবশের চৌধুরী।

পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা দুজন মারা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আহমদিয়া সম্প্রদায়ের (কাদিয়ানি) সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে জুমার নামাজ শেষে বিভিন্ন মসজিদ থেকে বেরিয়ে লোকজন পঞ্চগড় শহরের প্রাণকেন্দ্র চৌরঙ্গী মোড়ে সমবেত হন। পরে তারা মিছিল বের করেন। মিছিল থেকে ইটপাটকেল ছোড়া হলে পুলিশ বাধা দেয়। এ নিয়ে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের সঙ্গে বিজিবি ও র‍্যাবের সদস্যরা যোগ দেন। কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছোড়েন তারা। এ সময় বিক্ষুব্ধরা পুলিশ ও বিজিবির গাড়ি ভাঙচুর করে।

দুপুরের এই ঘটনার সময় ৯ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে পঞ্চগড় সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কাউয়ুম আলী, ভবেস চন্দ্র পাল, ট্রাফিক পরিদর্শক কাজী কামরুল ইসলাম, সহকারী উপরিদর্শক (এএসআই) মো. আবদুল্লাহ, পুলিশ সদস্য আল-আমিন, ফরিদুর রহমান ও কামরুজ্জামানের নাম পাওয়া গেছে। আহত অন্য ব্যক্তিরা স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। প্রাথমিকভাবে তাদের নাম জানা যায়নি।

সংঘর্ষ চলাকালে শহরের উপকণ্ঠে আহম্মদনগর এলাকায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের অন্তত ২০-২৫টি বাড়িঘর ও জেলা শহরের চারটি দোকানের মালামাল বের করে অগ্নিসংযোগ করা হয়। শহরের করতোয়া সেতু-সংলগ্ন ট্রাফিক পুলিশের একটি কার্যালয় পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

এরআগে গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে তেঁতুলিয়া-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পঞ্চগড় শাখাসহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা। পরে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকজনের বেশ কয়েকটি বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে। তবে শুক্রবার দুপুরে মিছিল বের করার বিষয়ে ইসলামী আন্দোলনের নেতারা অস্বীকার করেছেন। মসজিদ থেকে লোকজন নিজেরাই মিছিল বের করেছেন বলে তাদের দাবি। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, শুক্রবারের মিছিলের বিষয়ে তাদের কোনো নির্দেশনা ছিল না। কারা মিছিল বের করেছেন, তা তাদের জানা নেই।

পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সালানা জলসা বন্ধ করার জন্য তাদের অনুরোধ করা হয়েছে। তারা জলসা বন্ধ করে নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে যাওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত