সিলেটটুডে ডেস্ক

২০ মে, ২০২৩ ০২:৫১

মহিষের হিমায়িত মাংসগুলো পড়ে আছে সংরক্ষণাগারে

প্রতীকী ছবি


প্রথমবারের মতো ভারত থেকে হিমায়িত মহিষের মাংস আমদানি করেছিল একটি প্রতিষ্ঠান। এক সপ্তাহের বেশি সময় পার হয়ে যাওয়ার পরও সেটা এখনো ছাড় দেয়নি কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

মাংসের চালান ছাড় না দিতে কাস্টমসকে চিঠি দিয়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। তাদের যুক্তি, বিদেশ থেকে মাংস আমদানি করতে হলে আগে থেকে তাদের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হয়।

গত ৯ মে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে এক মেট্রিক টন মহিষের মাংস এনেছিল তেজগাঁওয়ের মেসার্স মিডলাইফ প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড নামে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান। মহিষের ওই মাংস দিয়ে চাটনি তৈরি করে সেটা দুবাইয়ে রপ্তানির পরিকল্পনা করেছিল প্রতিষ্ঠানটি।

জানা গেছে, সাভারের ভাকুর্তায় কারখানা রয়েছে মিডলাইফ প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রিজের। তারা ১ টন মহিষের মাংস আমদানি করেছিল। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের আপত্তির কারণে ওই মাংস এখন কাস্টমসের তত্ত্বাবধানে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের একটি সংরক্ষণাগারে রয়েছে।

গত বছরের এপ্রিলে আমদানি নীতি আদেশ ২০২১-২৪ জারি হয়। তাতে প্রথমবারের মতো গরু, ছাগল ও মুরগির মাংস ও মানুষের খাওয়ার উপযোগী অন্যান্য পশুর মাংস আমদানির ক্ষেত্রে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পূর্বানুমতির বিধান আসে।

তবে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মিডলাইফ বলছে, শিল্প খাতে ব্যবহারের জন্য মাংস আমদানির ক্ষেত্রে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অনুমতি নেওয়ার দরকার হয় না। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে তারা শিল্পের কাঁচামাল আমদানি করতে পারে।

ভারত থেকে মহিষের মাংসের ওই চালান আসার পর মাংস ছাড় না করতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর হিলি স্থল শুল্কস্টেশনকে চিঠি দেয়। হিলি স্থলবন্দর প্রাণিসম্পদ কোয়ারেন্টিন স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক কাজী মাহবুবুর রহমান জানান, আমদানি করা এই মাংসের কোয়ারেন্টিন সনদ লাগবে কি না, তা তাদের কাছে জানতে চায় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

জবাবে কাজী মাহবুবুর রহমান বলেন, অবশ্যই সনদ লাগবে। কারণ, মাংস ঠিক আছে কি না, রোগজীবাণু আসছে কি না—এ ধরনের কিছু পরীক্ষার পর সনদ দেওয়া হয়। কিন্তু দেখা যায়, মাংস আমদানির জন্য প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পূর্ব অনুমোদন লাগে, সেটাই নেই মিডলাইফের। সে কারণে কোয়ারেন্টিন সনদ দেওয়া যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে নির্দেশনা চেয়ে আমদানি ও রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দপ্তরে ১১ মে একটি চিঠি দেয় হিলি স্থল শুল্কস্টেশন। ১৬ মে হিলি স্থল শুল্কস্টেশনকে সেই চিঠির জবাব দেয় আমদানি ও রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দপ্তর। তাতে আমদানি নীতি আদেশ ২০২১-২০২৪-এর শিল্প খাতে আমদানির ২০–এর (ক) ধারা এবং বাণিজ্যিক খাতে আমদানির ২৩–এর (৩৩) ধারা তুলে ধরে বলা হয়, ‘উল্লেখিত বিধানের আলোকে প্রতীয়মান হয় যে কোনো একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান তার নিজ প্রয়োজনে পোষক কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে নির্দিষ্ট পরিমাণ নিষিদ্ধ ও নিয়ন্ত্রিত পণ্য আমদানি করতে পারবে। বিষয়টি আপনার সদয় অবগতির জন্য নির্দেশক্রমে জানানো হলো।’

হিলি স্থল শুল্কস্টেশনের ডেপুটি কমিশনার অব কাস্টমস মো. বায়জিদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, আমদানি ও রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দপ্তর দেশের আমদানি-রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে আমদানি পণ্য ছাড় করতে হয়। এই মাংসের বিষয়ে তারা যে নির্দেশনা দিয়েছে, তার আলোকে বলা যায়, ছাড় করতে বাধা নেই। বিডা ৪০টি আইটেম আমদানির অনুমতি দিয়েছে। মিডলাইফ এসব আনতে পারবে।

ভারতের কলকাতাভিত্তিক মিডলাইফ গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান মিডলাইফ প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, যা বিডার নিবন্ধন নেওয়া একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান।

মিডলাইফ গ্রুপের পরিচালক ও মিডলাইফ প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিয়ন চৌধুরী বলেন, ২০০২ সালে কলকাতায় মিডলাইফ গ্রুপ যাত্রা শুরু করে। তারা ভারত থেকে রপ্তানি করলে ভর্তুকি পায় না। অপরদিকে বাংলাদেশ সরকার রপ্তানিতে ভর্তুকি ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশে শ্রমিকের খরচ কম। সেই সঙ্গে দুবাইয়ের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের আগ্রহ, তারা যেন বাংলাদেশ থেকে মহিষের মাংসের আচার রপ্তানি করে। এসব কারণে বাংলাদেশের সব আইন মেনে বিডা থেকে নিবন্ধন নিয়ে ২০২২ সালে মিডলাইফ প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রিজ গঠন করা হয়।

জিয়ন চৌধুরী বলেন, পরীক্ষামূলকভাবে মহিষের মাংসের আচার তৈরির জন্য এই এক টন মাংস আমদানি করা হয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত