সিলেটটুডে ডেস্ক

০১ মে, ২০১৬ ১৮:০৪

চেয়ারম্যান পদে ‘রাজাকারপুত্র’, ক্ষুব্ধ প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা

পনের বছর বয়সে ছাত্রলীগে যোগ দিয়ে ৫৭ বছর ধরে তিনি আওয়ামী লীগের সঙ্গে। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে একাধিকবার চেয়ারম্যান হয়েছেন। স্বপ্ন ছিল শেষ বয়সে দলের নৌকায় নির্বাচন করবেন। কিন্তু, নৌকা তিনি পাননি। পেয়েছেন এমন একজন স্থানীয়ভাবে যিনি ‘রাজাকারপুত্র’ হিসেবে পরিচিত।

‘দলের প্রতীক না পাওয়ার কষ্টতো আছেই, তার চেয়েও বেশি কষ্ট যে শেষ জীবনে তিনি এক রাজাকারপুত্রকে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করতে দেখছেন,’ পিতা মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ তালুকদারের কষ্টের কথা বলছিলেন তার ছেলে মো. শহীদুল ইসলাম যিনি নিজেও একসময় ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন এবং এখন স্থানীয় আওয়ামী লীগের সংগঠক।

শহীদুল ইসলাম বলেন, বিষয়টা শুধু তাদের পরিবারের কষ্টের কারণ না। আগিরা ইউনিয়নতো বটেই, নেত্রকোণা জেলার পূর্বধলা উপজেলার পুরো আওয়ামী লীগ পরিবারের জন্যই রাজাকারপুত্রের নৌকা মার্কা পাওয়া এক বিশাল মনোকষ্টের কারণ।

তিনি বলেন, স্থানীয় নেতা-কর্মীদের দাবি অনুযায়ী এরইমধ্যে তিনি আগিরা ইউনিয়নে সানোয়ার হোসেন চৌধুরীর মনোনয়ন বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বরাবর অভিযোগ দায়ের করেছেন (অভিযোগ নম্বর ৩৬২)।

তিনি জানান, তার পিতা আব্দুল ওয়াহেদ তালুকদার ১৯৫৯ সালে ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন, ১৯৬২ সাল থেকে স্থানীয় পর্যায়ে আওয়ামী লীগের নেতা। ২০০৩ সাল থেকে তিনি পূর্বধলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য। এর আগে বিভিন্ন সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এবং ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এর বাইরে উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি ছাড়াও বিভিন্ন সময় তিনি অন্যান্য সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করেছেন।

শহীদুল ইসলাম বলেন, শিক্ষকতার পাশাপাশি একাধিকবার তিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এবার দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হবে জানার পর থেকেই তার স্বপ্ন ছিল জীবনে একবার হলেও প্রিয় সেই নৌকা তার নামের সঙ্গে যুক্ত হবে যে নৌকার জন্য তিনি নিজের পরিবারকে তুচ্ছ জ্ঞান করে সারাজীবন দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন।

শুধু প্রার্থী হতে আগ্রহী এক আওয়ামী লীগ নেতার ছেলেই যে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছে অভিযোগ করেছেন এমন নয়। স্থানীয় আওয়ামী লীগও সরাসরি আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে এক ‘রাজাকারপুত্র’র মনোনয়নের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে।

নেত্রকোণার পূর্বধলা উপজেলার আগিরা ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ সভাপতি মির্জা আব্দুল আজিজ রুবেন তার অভিযোগপত্রে (অভিযোগ নম্বর ৩৬৭) বলেন, দলীয় মনোনয়ন পাওয়া সানোয়ার হোসেন চৌধুরীর পিতা আব্দুল বাছিত চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধের সময় শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন।

এ তথ্য জানানোর পাশাপাশি ৭৫’র ১৫ আগস্টের পর আব্দুল বাছিত চৌধুরী কী করেছেন সে কথাও উল্লেখ করেছেন তিনি।

রুবেন জানান, বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর আব্দুস সোবহান (পিতা মৃত আব্দুল আলিম মাস্টার, গ্রাম বেড়াইল, পূর্বধলা) নামে এক যুবক গায়েবানা জানাযার আয়োজন করলে আব্দুল বাছিত চৌধুরী মিথ্যা মামলা দিয়ে সোবহানকে দুই বছর জেল খাটান। মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে কারাগার থেকে ফেরার পর সোবহান আর কখনোই স্বাভাবিক হতে পারেননি।

ওই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে আগ্রহী আরেকজন স্থানীয় নেতা সিরাজুল ইসলামও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছে একইরকম অভিযোগ (নম্বর ৩৬৮) এনেছেন।

সঙ্গে তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া সানোয়ার হোসেন চৌধুরীর ভাই, ভাতিজা, বোন, বোনজামাই সকলেই বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, সানোয়ার হোসেন চৌধুরী নিজেও তাই ছিলেন। ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কোন ভাই বা সাহেবের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে হঠাৎ আওয়ামী লীগ হয়ে তিনি মনোনয়ন লাভ করেছেন।’

‘ইউনিয়নের কোন মানুষ জানে না যে তিনি কবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বা এর অঙ্গ সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বা দলীয় কোন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন,’ বলে দাবি করেন সিরাজুল ইসলাম।

আওয়ামী সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে অভিযোগপত্রে তারা তিনজনই ওই প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার পাশাপাশি বলেছেন, লোকমুখে শোনা যাচ্ছে মনোনয়নের ক্ষেত্রে অর্থ লেনদেন এবং স্বজনপ্রীতি হয়েছে।
সূত্র: চ্যানেল আই অনলাইন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত