২১ জুন, ২০১৬ ০০:৫২
‘ছেলেকে যখন খুঁজছিলাম তখন ওরাও (খুনী) আমাদের সঙ্গে ছিল। ওদের দোকানের মাইকেই প্রচার করা হয়েছে আমার ছেলের নিখোঁজ সংবাদ। এমনকি জানাজাতেও অংশ নেয় ওরা। অথচ তারাই যে আমার ছেলের খুনি, তা ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারিনি।’
নিহত শিশু ফাহিম আহমেদের (৮) মা ফায়জুন্নাহার কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন এসব কথা।
গত ১৪ জুন থেকে নিখোঁজ ছিল ফাহিম। পরেরদিন সন্ধ্যায় কুশখালীর সীমান্ত এলাকার পাটক্ষেত থেকে ফাহিমের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ফাহিমের প্রতিবেশী সফুরা খাতুন ও তাঁর দুই ছেলে ইব্রাহিম ও ইসমাইল হোসেনকে আটক করেছে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, আটক তিনজনই ফাহিমকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। প্রতিবেশীর এক কেজি মাংস হারিয়ে ফেলার অপরাধেই খুন করা হয়েছিলো শিশু ফাহিমকে।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কুশখালী এলাকায় নানা হাজি মোহাম্মদ আলীর বাড়িতে থাকত ফাহিম ও তার মা ফায়জুন্নাহার। ফাহিমের বাবা মনিরুল ইসলাম মালয়েশিয়া প্রবাসী।
ফায়জুন্নাহার বলেন, ‘সেদিন দুপুরে বাজার থেকে মুরগির মাংস কিনে এনে রান্না করে খেয়েছিল তারা (সফুরা ও তার ছেলেরা), যাতে কেউ বুঝতে না পারে যে গরুর মাংস হারিয়ে যাওয়ায় তারা আমার ছেলেকে মেরে ফেলেছে। আমার ছেলের পায়ের এক জোড়া স্যান্ডেল তারা আমার বাড়ির সামনে ফেলে দিয়ে আসে। সেখান থেকেই সন্দেহ হয়। পরে তারা ধরা পড়ল পুলিশের হাতে।’
তিনি জানান, ঘটনার দিন বেলা ১১টার দিকে ফাহিম তার বন্ধু আসিফসহ কয়েক জনের সাথে কুশখালি বিজিবি ক্যাম্পের কাছে একটি গাছে পাখির ছানা ধরতে যায়। সেখানে গাছে উঠতে মানা করে বিজিবি সদস্যরা। এলাকার এক যুবক অন্যদের ও ফাহিমকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। এ সময় মামুনের সামনেই মুজিবর রহমানের ছেলে ইসরাফিল হোসেন ফাহিমকে ডেকে নিয়ে আসে বাড়িতে। জিজ্ঞেস করে সে মাংসের প্যাকেট কোথায়। ফাহিম জানায়, বাড়িতে কাউকে না পেয়ে ভ্যানের ওপর রেখে পাখি ধরতে গিয়েছিলাম। এ কথা শুনেই ইসরাফিলের মা সফুরা খাতুন ফাহিমের পেটে লাথি মেরে চিৎকার করে বলে ‘তোর গোশত কুকুর দিয়ে খাওয়াব’। ফাহিম লাথি খেয়ে ও ভ্যানের আঘাতে রক্তাক্ত হয়ে পড়ে এবং জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এরপর তাকে তারা ঘরে নিয়ে যায়। নানাভাবে জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করে এবং রক্ত বন্ধ করার চেষ্টা করে। এর পর তাকে বৈদ্যুতিক শক দেয় । পরে ফাহিম মারা যায়।
ফাহিমের নানা হাজি মোহাম্মদ আলী জানান, ইসরাফিলের স্ত্রী তামান্না খাতুন এ সবকিছুর প্রত্যক্ষদর্শী। তামান্না তাঁর বাবার বাড়িতে ফোন করে জানিয়েছেন, তিনি আর এ বাড়িতে থাকবেন না। এরা এক কেজি মাংসের জন্য একটি শিশুকে মেরে ফেলেছে। তামান্নার এ কথা এখন কুশখালি গ্রামের সবাই জানেন।
ফায়জুন্নাহার জানান, ফাহিম কুশখালির হেফজখানায় দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ত। ওর বয়স যখন ২৪ দিন তখন ওর বাবা মনিরুল ওকে ওর রেখে মালয়েশিয়া চলে যান। এখন ওর বয়স আট বছর । ওর বাবা ওকে বড় হলে আর দেখেনি। এখন তিনি বাড়ি আসবেন। ফায়জুন্নাহার বলেন, ‘তাকে কি জবাব দেব আমি?’ বলেই কেঁদে ফেলেন ফাহিমের মা ফায়জুন। ফায়জুনের মেয়ে মিম মাদ্রাসায় সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে।
আপনার মন্তব্য