এম এইচ মকিম, পাবনা

২৪ ডিসেম্বর, ২০১৬ ১২:০১

দুই যুগেও লাভের মুখ দেখেনি পাবনা সুগার মিল

দীর্ঘ দুই যুগে ২৭৭ কোটি টাকা লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারছে না পাবনা সুগার মিল।  পাবনা সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী একেএম তোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী জানান, কৃষকরা আখ উৎপাদনে নিরুৎসাহিত হওয়ায় এমন লোকসান গুনতে হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির। তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা থাকা স্বত্বেও লোকসানে থাকা এই প্রতিষ্ঠানটি ঘুরে দাঁড়ানোর কোন চেষ্টা পরিলক্ষিত হয়নি বলে সচেতন মহল মনে করেন। এরমাঝে গত ৯ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছে ১৯তম আখ মাড়াই মৌসুম।

প্রতিষ্ঠার দুই যুগ পার হলেও লাভের মুখ দেখতে পারেনি সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটি। পর্যাপ্ত আখের অভাবে লক্ষ্যমাত্রা পূরণে চিনি উৎপাদন করতে পারছেনা বলে দাবী কর্তৃপক্ষের। অপরদিকে আখের ন্যায্য দাম না পাওয়ায় আখ চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন চাষিরা। এরপরেও প্রতি বছর অবিক্রীত থাকছে হাজার হাজার মেট্রিকটন চিনি।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, ১৯৯২ সালে পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার দাশুড়িয়ায় ৬০ একর জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় পাবনা সুগার মিল। ১৯৯৬ সালে বাণিজ্যিক উৎপাদনের যাওয়ার পর থেকে দুই যুগেও লাভের মুখ দেখাতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। আখ স্বল্পতা, উৎপাদিত চিনি অবিক্রীত থাকাসহ নানা সংকটে প্রতি বছরই মিলটি লোকসানের বোঝা ভারি করেই চলেছে।

মিল কর্তৃপক্ষের হিসেবে, লোকসানের পরিমাণ গিয়ে দাঁড়িয়েছে ২৭৭ কোটি ৩৩ লাখ টাকায়। গত দুই মৌসুম মিলিয়ে বর্তমানে মোট চিনি অবিক্রীত রয়েছে ৪ হাজার ৭৬৬ দশমিক ৯৫ মেট্রিকটন। প্রতি মৌসুমেই বর্ণিল ও নানা সাজসজ্জায় আখ মাড়াই মৌসুম শুরু করা হলেও লাভের মুখ থেকে বিচ্যুতই থেকে যাচ্ছে এই প্রতিষ্ঠানটি।

পাবনা সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী একেএম তোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী বলেন, চিনি উৎপাদনে যে পরিমাণ আখ সরবরাহ করা হচ্ছে তা পর্যাপ্ত নয়। এছাড়াও উৎপাদন সামগ্রী ও বিভিন্ন মালামালের দাম বৃদ্ধি কারণে ক্রমাগত লোকসানের মুখেই পড়তে হচ্ছে আমাদের।

তিনি আরও বলেন, মিলকে লাভজনক করতে কৃষকদের মাঝে আখ চাষে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি অন্যান্য ফসলের সাথে মিল রেখে আখের দাম নির্ধারণ করা প্রয়োজন।

এদিকে মিলের শ্রমিক ইউনিয়নের যুগ্ম সম্পাদক রবিউল ইসলাম বলেন, সরকার শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন বাড়ালেও সে অনুপাতে বাড়েনি চিনির দাম। ফলে চিনি উৎপাদনের খরচ বাড়ার সাথে বাড়ছে লোকসানের পরিমাণও।

চাষিরা বলছেন, অন্য ফসল কম সময়ে, স্বল্প খরচে উৎপাদন করা যায়। আর আখ উৎপাদনে ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় দিনদিন চাষিরা আখ উৎপাদন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। ন্যায্য মূল্য পেলে হয়তো আবারও তারা আখ চাষের দিকে ঝুঁকবে বলে মনে করেন চাষিরা।

মিল সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে ৪১১৫ একর জমিতে আখ আবাদ করা হয়েছে। আবাদ থেকে লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭০ হাজার মেট্রিকটন। চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫২৫০ মেট্রিক টন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত