সিলেটটুডে ডেস্ক

০৩ জুলাই, ২০১৭ ১০:৪৯

এখনও বাড়ি ফিরতে পারেনি লংগদুর অগ্নিদুর্গতরা

লংগদুতে অগ্নি-দুর্গতরা এখনও ফিরে পায়নি তাদের ঘরবাড়ি। ঘটনার একমাস পরও তাদের কাটাতে হচ্ছে বিভিন্ন বিদ্যালয়ের আশ্রয়কেন্দ্রে কিংবা আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে। প্রশাসন ক্ষতি-নিরূপণ করলেও এখনো শুরু হয়নি ঘর নির্মাণের কাজ।

এক মাস ধরে ঘরের বাইরে অবস্থান করায় দুর্গতদের জীবন এখনো স্বাভাবিক হয়নি। অগ্নি-দুর্গত এসব পাহাড়ি লোকজন মানিকজোড়ছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তিনটিলা বৌদ্ধ বিহারে ও আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে।

আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত কিরণ চাকমা বলেন, আমরা সঠিক পুনর্বাসন চাই। এখন পর্যন্ত আমাদের বাড়িঘর নির্মাণ করা হয়নি। পথেঘাটে রাত দিন কাটাচ্ছি। এভাবে আর কতদিন থাকতে হবে। আমরা দ্রুত বাড়ি ফিরতে চাই।

লংগদু সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কুলিন মিত্র চাকমা (আদু) বলেন, গত মাস ধরে মানুষগুলো বাড়িঘর ছাড়া। এই বর্ষা মৌসুমে বাইরে থাকার কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে ছোট বাচ্চাদের ওদের বই খাতা কিছুই নাই। সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তাদের পড়াশুনা হচ্ছে না। অনেক ছাত্র-ছাত্রী আছে যারা এখনো কলেজে ভর্তি হতে পারে নাই। অনেকে আবার স্কুলে যেতে ভয়ও পাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, গত ২৩ জুন পার্বত্য মন্ত্রণালয় থেকে জেলা পরিষদের মাধ্যমে কিছু সহায়তা পাওয়া গেছে এবং ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে আরও কিছু বরাদ্দ হয়েছে। ১০ মেট্রিক টন চাল ও ১১ লক্ষ টাকা। চাল খাদ্য গুদামে রক্ষিত আছে। ঈদের ছুটির কারণে টাকা এখনো এসে পৌঁছায়নি। আমরা যারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার তাদের জন্য খুব জরুরি এখন পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। সরকারের পক্ষ থেকে বারবার আমাদের আশ্বস্ত করা হচ্ছে, এখন আমরাও সেই আশায় আছি।

জেলা প্রশাসন থেকে পার্বত্য বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাহাড়িদের ২১৩টি বাড়ি ও আটটি দোকান পুড়ে ৬ কোটি ৬২ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি পূরণের টাকা হাতে পেলেই প্রশাসনও কাজ করবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।

রাঙামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা বলেন, গত ২৪ জুন (শনিবার) পার্বত্য মন্ত্রণালয় রাঙামাটি জেলা পরিষদের মাধ্যমে ত্রাণ সহায়তাসহ ও সার্বিক সহযোগিতা শুরু করেছে। প্রতি পরিবারের জন্য পাঁচ হাজার টাকা করে মোট এগারো লক্ষ টাকা, তিন লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকার কাপড় চোপড়, ২৫ মেট্রিক টন খাদ্য শস্য দেয়া হয়েছে।

লংগদু উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোসাদ্দেক মেহদী ইমাম বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা হয়েছে। ইতোমধ্যে ১০ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ হয়েছে এবং প্রায় তের লক্ষ টাকা দুই তিন দিনের মধ্যে এটাও হাতে পাওয়া যাবে। বরাদ্দ পেলেই ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের পুনর্বাসনের কাজ শুরু হবে।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (১ জুন) লংগদু উপজেলার সদর ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও মোটরসাইকেল চালক নুরুল ইসলাম নয়নের লাশ দীঘিনালার চারমাইল এলাকায় পাওয়া যায়। ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার (২জুন) সকালে লংগদুবাসীর ব্যানারে নয়নের লাশ নিয়ে একটি বিক্ষোভ মিছিল উপজেলা সদরে আসার পথে পাহাড়িদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করে। এসময় দুই শতাধিক বাড়ি আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত