সিলেটটুডে ডেস্ক

১৬ নভেম্বর, ২০১৮ ১৯:৫৭

লুটপাটতন্ত্র-স্বৈরতন্ত্র -পরিবারতন্ত্র উচ্ছেদ কর: কমরেড রাজেকুজ্জামান রতন

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ এর ৩৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এবং রাশিয়ার মহান সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের ১০১তম বার্ষিকী পালন করা হয়েছে।

শুক্রবার বাসদ চট্টগ্রাম জেলার উদ্যোগে নগরীর বটতলী পুরাতন রেলস্টেশন চত্বরে সমাবেশ ও লাল পতাকা মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড রাজেকুজ্জামান রতন।

আরও বক্তব্য রাখেন বাসদ চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সদস্য কমরেড স.ম ইউনুস, নুরুল হুদা নিপু, সেলিম উদ্দীন, আকরাম হোসেন, আল কাদেরী জয়সহ অন্যান্য জেলা নেতৃবৃন্দ।

সভায় সভাপতিত্ব করেন বাসদ চট্টগ্রাম জেলা সমন্বয়ক মহিনউদ্দীন ও পরিচালনা করেন রায়হান উদ্দীন।

সমাবেশে কমরেড রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, "আজ থেকে ১০১ বছর আগে রুশ সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের নেতা কমরেড লেনিন মার্কসবাদী শিক্ষাকে সঠিকভাবে আয়ত্ত করে ১৯১৭ সালের ৭ নভেম্বর বিপ্লব সফল করে রাশিয়ায় সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার পত্তন করেছিলেন। বিশ বছরের মধ্যেই রাশিয়া থেকে ভিক্ষাবৃত্তি, পতিতাবৃত্তি, বেকারত্ব, দুর্নীতি উচ্ছেদ হয়ে গিয়েছিল। অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা, কাজ, বাসস্থান ইত্যাদি মৌলিক মানবাধিকার রূপে নিশ্চিত হয়েছিল।

তিনি বলেন, পুঁজিবাদ থেকে সমাজতন্ত্রের পথ পাড়ি দিয়ে সাম্যবাদে পৌঁছা এক দীর্ঘ ঐতিহাসিক যাত্রা। এক ধাপ থেকে পরবর্তী ধাপে সঠিকভাবে বিকশিত করা না গেলে সাম্যবাদের লক্ষ্যচ্যুতি ঘটে, তা আবার পুঁজিবাদে ফিরে আসে। আজকের রাশিয়ায় তাই ঘটেছে। কিন্তু সমাজতন্ত্রই যে মানবমুক্তির পথ, সমাজ বিকাশের অনিবার্য পরিণতি সেটা অনস্বীকার্য রয়ে গেছে। সেই শিক্ষাকে সামনে রেখে ৩৮ বছর আগে আমরা এদেশের মাটিতে বাসদ প্রতিষ্ঠা করেছিলাম।

তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশের জনগণও দীর্ঘ ব্রিটিশ ও পাকিস্তানি উপনিবেশিক শাসন-শোষণের নিগড় থেকে মুক্তির ধারাবাহিক আন্দোলনে শোষণমুক্ত সমাজতন্ত্রের আকুতিকেই চেতনার কেন্দ্রবিন্দুতে তুলে ধরেছিলেন এবং শোষণমুক্তির লক্ষ্যে সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনায় জনগণের ক্ষমতায়ন তথা গণতন্ত্রের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলো। কিন্তু দুঃখের বিষয় ৩০ লক্ষ শহিদ ও লক্ষ কোটি মা - বোনসহ সাড়ে ৭ কোটি মানুষের জীবনবাজি রাখা সংগ্রামে অর্জিত স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর জনগণের সে আকাঙ্ক্ষা ও চেতনার বাস্তব চেহারা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।

কমরেড রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, গণতন্ত্রের স্থলে সামরিক-অসামরিক স্বৈরতন্ত্র ,পরিবারতন্ত্র; সমাজতন্ত্রের স্থলে পুঁজিবাদী মুক্তবাজারী লুটপাটতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতার জায়গাকে সাম্প্রদায়িকতার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে। বুর্জোয়া দলসমূহে ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার পাল্লা দিয়ে চলেছে, জাতীয়তাবাদের স্লোগান দিয়ে নতজানু বিদেশ নির্ভরতা দিন দিন বাড়ছে। ১৯৭২ সালের তুলনায় কৃষকরা কৃষি উৎপাদন ৩ গুণের বেশি ফলিয়েছে আর জনসংখ্যা বৃদ্ধি হয়েছে দ্বিগুণ হারে। অথচ তারা ফসলের ন্যায্য মূল্য পায় না। গার্মেন্টস শ্রমিক বৈদেশিক মুদ্রা আনাসহ জাতীয় আয় বৃদ্ধি করছে অথচ তাদের আয় কমে যাচ্ছে, জীবনধারণের মান নিম্নগামী রয়েছে।

রতন বলেন, ১ কোটির বেশি প্রবাসী শ্রমিক অসীম দুঃখ কষ্টের বোঝা বয়ে বিদেশি মুদ্রা আনছে আর শাসকশ্রেণির পৃষ্ঠপোষকতায় লুটেরাশ্রেণি সে টাকা দেশের বাইরে পাচার করে দিচ্ছে । ধনী আরও ধনী হচ্ছে, গরীব হচ্ছে আরও গরিব। এই পরিস্থিতিতে সামনে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। ইতিপূর্বে দেশে ১০টি সংসদ নির্বাচন হয়েছে তাতে গণতন্ত্র আসেনি, সুশাসন প্রতিষ্ঠা পায়নি। একটা সংসদ নির্বাচন হয় তো দেশ এক সংকটে গিয়ে পড়ে। এইভাবে ২ রাষ্ট্রপতি খুন, ২ বার সরাসরি একবার পরোক্ষ সামরিক শাসন, ৫ বার জরুরি অবস্থা, জেল হত্যা, সহস্র রাজনৈতিক কর্মী- সৈনিক হত্যা, ১৮/১৯ বার ব্যর্থ অভ্যুত্থান, তত্ত্বাবধায়ক সরকার আনা ও বিদায় করা, লগি -বৈঠা, পেট্রোল বোমা সন্ত্রাস, প্রধান বিচারপতির দেশ থেকে বিতাড়ন, জঙ্গি সন্ত্রাস, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ইত্যাদি একটাকে অনুসরণ করে আরেকটা এসেছে।

তিনি বলে, অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে বুর্জোয়া অর্থেও একটা সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে নিয়মতান্ত্রিক ক্ষমতা হস্তান্তর করার ক্ষমতাও শাসকশ্রেণি হারিয়ে ফেলেছে। বিচারব্যবস্থা, নির্বাচন কমিশন, পাবলিক সার্ভিস কমিশন, আমলাতন্ত্র, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সকল প্রথা-প্রতিষ্ঠানসমূহ দুর্নীতি ও দলীয়করণের ফলে ভঙুর কিংবা অকার্যকর হয়ে পড়েছে। গণতান্ত্রিক-মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণের বদলে সংকোচনের পথেই একটার পর একটা কালো আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ বাকস্বাধীনতা হরণের সর্বশেষ নজির। বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনায় পর্যবসিত হয়েছে। রাজনৈতিক অধিকারসমূহ শাসক দলের ইচ্ছা বাস্তবায়নের স্বেচ্ছাচারে পরিণত করা হয়েছে। মামলা-হামলার প্রকোপ তা রয়েছেই।

সমাবেশের শেষে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১০ আসনে কমরেড মহিন উদ্দিন ও চট্টগ্রাম-১২ আসনে স.ম ইউনুসকে দলীয় প্রতীক 'মই' মার্কায় বাসদ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত