প্রদীপ সাহা, সাপাহার

০৮ ফেব্রুয়ারি , ২০২০ ১৭:২৮

সাড়ে ৩ ফুট উচ্চতার আকবরের স্বপ্ন একটি বাড়ি

নওগাঁর সাপাহার উপজেলার আইহাই গ্রামের দরিদ্র পরিবারের সন্তান প্রতিবন্ধী আকবর এখনো স্বপ্ন দেখে নিজের একটি বাড়ি হবে, বিয়ে হবে আরও কতো কী। প্রতিবন্ধী আকবর বয়স ৪৮, পিতা আব্দুল্লাহ, মাতার নাম আকবরের মনে নেই, পিতা-মাতা দুজনেই মারা গেছেন অনেক বছর আগে।

সীমান্তবর্তী এই উপজেলার সীমান্ত ঘেঁষা গ্রাম সেখানে কর্মসংস্থানের কোন ব্যবস্থা না থাকায় কাজের সন্ধানে আকবরের ৩ ভাই মনতাজ, লতিফ ও বাবু অন্য দেশে পাড়ি জমায়, আর এক মাত্র বড় বোন বিবাহ সূত্রে রয়ে যায় এদেশে। প্রকৃতির খেয়ালে ৩ ফুট ৬ ইঞ্চি উচ্চতার আকবর বেঁচে থাকার তাগিদে কাজের সন্ধানে চলে আসে সাপাহার সদরে। সাপাহার জিরো পয়েন্টে স্বর্গীয় নিবারণ সাহার হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টে প্রথম সে কাজ নেয় প্লেট ধোয়ার, ৩ বেলা খেয়ে কাজ শেষে রাতে তার কাজের বেতন হিসেবে ১০ টাকা করে পেতো। এভাবেই চলছিলো তার জীবন।

তৎকালীন সময়ে সাপাহার শীতকালীন মাসব্যাপী মেলায় সার্কাসের মালিক ও কিছু কর্মী আকবরকে দেখে তাকে সার্কাসে আসার জন্য আহবান করেন এবং তাদের কথায় সে রাজি হয়ে ২/৩ দিন শোতে অংশগ্রহণ করে। কিন্তু আকবর সেখানে টিকতে পারলো না। ফিরে এলো তার আগের কর্মস্থলে। এর মধ্যে সে মোকতার নামের একটি মেয়েকে বিয়ে করে। সংসার শুরু হতে না হতেই আকবরের সংসার জীবনে নেমে আসে কালবৈশাখী ঝড়। সামান্য উপার্জন দারিদ্র ও জরাজীর্ণ একটি মাথা গোজার ঠাঁই সর্বোপরি আকবরের খর্বাকার শারীরিক গঠন পছন্দ হয়নি তার স্ত্রীর। তিলে তিলে জমানো ১০ হাজার টাকা ও কিছু জিনিসপত্র নিয়ে আকবরকে ছেড়ে চলে যায় স্ত্রী মোকতারা বানু।

বর্তমানে সাপাহার আদি চাঁপাই হোটেলে মাসিক বেতন সাড়ে ৪ হাজার টাকায় ভোর থেকে রাতের ১০টা পর্যন্ত হোটেলের এটো খালাবাসন পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে। ঐ হোটেলে দোতালায় ছোট্ট একটি চিলেকোঠায় মাসিক ৪৫০ টাকা ভাড়ায় রাত্রযাপন করে।

এই প্রতিবেদক এবং মার্কেন্টাইল ব্যাংক সাপাহার শাখার ব্যবস্থাপক মাহবুব মোরসেদ দু’জন একদিন রাস্তায় যেতে যেতে আলাপ করতে করতে হঠাৎ দেখেন- রেস্টুরেন্টের সামনে দাড়িয়ে থাকা অটোরিকশায় পা ঝুলিয়ে হুটে মাথাটা এলিয়ে দিয়ে আকবর একাকি কী যেন ভাবতে থাকে? তার জীবনের অতীত না বর্তমান? তার তিলে তিলে জমানো টাকায় ২ শতাংশ জমি কিনেছে। তার শেষ আশা বা স্বপ্ন একটি বাড়ি বানানো। একটি বাড়ি না থাকায় তার স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে গেছে। বাড়ি তৈরি হলে আবারো বিয়ে করে অন্যান্যদের মতো সংসার করবে। লাজুক হাসি দিয়ে মাথা নিচু করে আকবর জমানো মনে মনে দুটি মেয়েকে পছন্দ করে রেখেছে। একটির উচ্চতা বেশি, অন্যটির কম। সুযোগ হলে কম উচ্চতার মেয়েটিকে বিয়ে করবে।

এতকিছুর পরেও সে দেশের বিভিন্ন খোঁজখবর রাখে এর মধ্যে সে জানতে পারেন সরকার গরীব মানুষদের নাকি বাড়ি বানিয়ে দিচ্ছে। আবার মুজিববর্ষ উপলক্ষে সারাদেশের গরীবদের ৬৮ হাজার বাড়ি বানিয়ে দেওয়া হবে? তারও তো ২ শতাংশ জমি আছে সে কি একটি পেতে পারে? ৪৮ বছর বয়সী প্রতিবন্ধী আকবর জানেনা কত দিনে সে একটি বাড়ি তৈরি করতে পারবে? কথগুলো বলতে বলতে চোখ ছলছল করতে থাকে আকবরের। চোখের পানি আটকাতে বৃথা চেষ্টায় তাকিয়ে থাকে দুর সীমানায়। সরকারের অনুদানের বাড়ি কি জুটবে আকবরের কপালে?

আপনার মন্তব্য

আলোচিত