সাহাদুল সুহেদ, স্পেন

২১ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ১৭:০৬

স্পেনে সহস্রাধিক প্রবাসী বাংলাদেশি করোনায় আক্রান্ত

লকডাউনসহ নানা বিধিনিষেধ আরোপ করে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আনা দেশ স্পেন আবারও করোনার কবলে পড়তে যাচ্ছে। গত দুই সপ্তাহে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতিতে করোনার ‘দ্বিতীয় তরঙ্গ’ বা ‘দ্বিতীয় ধাপ’ এর আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে দেশটির আঞ্চলিক সরকারগুলো পৃথকভাবে নানা বিধিনিষেধ জারি করেছে।

করোনার দ্বিতীয় ধাপে দেশটিতে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজধানী শহর মাদ্রিদ, পর্যটন নগরী বার্সেলোনাসহ দেশটির বিভিন্ন শহরে বসবাসরত হাজারের উপর প্রবাসী বাংলাদেশি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে একটি মানবাধিকার সংস্থা জানিয়েছে। এর মধ্যে ৪৭ জনের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটায় তাদেরকে আইসিইউ-তে স্থানান্তর করা হয়েছে।

বৈশ্বিক মহামারি করোনার ছোবলে ইউরোপের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ স্পেন ১৪ মার্চ থেকে ২১ জুন পর্যন্ত লকডাউনের আওতায় ছিলো। পরবর্তীতে মাসখানেক পরিস্থিতি অনেকটা স্বস্তিজনকপর্যায়ে থাকার পর আবারও নতুন করে করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকে। বিশেষ করে গত দুই সপ্তাহে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় ‘দ্বিতীয় তরঙ্গ’ বা ‘দ্বিতীয় ধাপ’ এর আশঙ্কায় দেশটির সরকার বিভিন্ন সতর্কতামূলক কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এরইমধ্যে মাদ্রিদ আঞ্চলিক সরকারের পক্ষ থেকে করোনায় বেশি সংক্রমিত মাদ্রিদের ৩৭টি এলাকাতে লকডাউনের আদলে নানা বিধিনিষেধ জারি করেছে।

বিজ্ঞাপন

করোনা সংক্রমণে স্পেন প্রবাসী বাংলাদেশিরাও নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছেন। গত মহামারির সময় এত সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি আক্রান্ত হননি বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। মাদ্রিদের বাংলাদেশি মানবাধিকার সংস্থা ‘ভালিয়ান্তে বাংলা’ দাবি করেছে যে তাদের কাছে তথ্য রয়েছে- এখন পর্যন্ত পুরো স্পেনে এক হাজারের উপর প্রবাসী বাংলাদেশি করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কিংবা নিজ গৃহে আইসোলেশনে আছেন। এর মধ্যে দেশটির বিভিন্ন হাসপাতালে ৪৭ জন প্রবাসী বাংলাদেশি সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় আইসিইউ-তে আছেন বলেও জানিয়েছেন ‘ভালিয়ান্তে বাংলা’ এর সভাপতি মো. ফজলে এলাহী, যিনি নিজেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে নিজ ঘরে আইসোলেশনে আছেন।

স্পেনে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় তরঙ্গে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বেশি আক্রান্ত হওয়ার কারণ হিসেবে নিজেদের অসচেতনতাকেই দায়ী করেছেন কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ইন স্পেন এর সভাপতি কাজী এনায়েতুল করিম তারেক বলেন, আমাদের উচিত করোনা বিষয়ে স্পেন সরকার প্রদত্ত নিয়ম কানুন মেনে চলা। করোনার উপসর্গকে হালকাভাবে দেখা যাবে না। করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী যদি ঘরে থাকতে বলা হয়, তবে নিজ ঘরেই থাকা উচিত। বাংলাদেশি কোন ব্যবসায়ী যদি করোনা আক্রান্তদের কাজে যেতে বাধ্য করেন, তবে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশনকে জানানোর অনুরোধ জানান তিনি। এব্যাপারটা কমিউনিটির স্বার্থে অ্যাসোসিয়েশন কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

‘ভালিয়ান্তে বাংলা’ এর সভাপতি মো. ফজলে এলাহী বলেন, আমরা সচেতন নই। দেখা গেছে, করোনার উপসর্গ নিয়ে অনেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন। নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা কাজে যোগ দিচ্ছেন। এতে করে অনেককেই সংক্রমিত করছেন। তাছাড়া আমাদের কাছে এমনও অভিযোগ এসেছে যে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক তার কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত জেনেও কাজে যেতে বাধ্য করছেন এ বলে যে, উনি না আসলে আরেকজনকে কাজে নিয়ে নেবেন। তাছাড়া দেখা গেছে যে কর্মচারী সুস্থ থাকলেও তিনি যে বাসায় থাকেন, সেখানকার এক বা একাধিক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ পর্যায়ে তার বাসায় কোয়ারেন্টিনে থাকা উচিত। অথচ কাজ টিকিয়ে রাখতে উনি কাজে যোগ দিচ্ছেন। একসময় তিনিও আক্রান্ত হচ্ছেন এবং অন্য সহকর্মীদের মাঝেও ভাইরাসটি ছড়িয়ে দিচ্ছেন।

স্পেন বাংলা প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক লোকমান হোসেন বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যাচেলররা সাধারণত মেস করে থাকেন। দেখা গেল মেসের কেউ একজন করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন। কিন্তু তিনি উপসর্গ থাকা সত্ত্বেও মেসের সদস্যদের জানাচ্ছেন না বা বিষয়টা লুকিয়ে রাখছেন। এতে করে মেসের অন্যান্য সদস্যরাও আক্রান্ত হচ্ছেন। পাশাপাশি তারা যখন বাইরে বেরুচ্ছেন, তখন বাইরের মানুষের মাঝেও সংক্রমণ ছড়িয়ে দিচ্ছেন। আসলে নিজেদের সচেতনতা ছাড়া করোনার সংক্রমণ থামানো যাবে না অমাদের কমিউনিটিতে।

এদিকে স্পেনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের একজন কর্মচারীর করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ায় দূতাবাসের কয়েকজন কর্মকর্তা হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন বলে জানা গেছে।

এরই প্রেক্ষিতে দূতাবাস ৬ সেপ্টেম্বর এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে ৭ সেপ্টেম্বর থেকে দূতাবাসের কনস্যুলার সার্ভিস সাময়িক বন্ধের ঘোষণা দেয়। পরবর্তীতে ১৭ সেপ্টেম্বর আরেকটি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ দূতাবাস জানায়, একটি নির্দিষ্ট নম্বরে হোয়াটস এ্যাপ-এ ম্যাসেজ পাঠিয়ে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেয়ার মাধ্যমে দূতাবাসের কনস্যুলার সার্ভিস চলমান থাকবে।

প্রসঙ্গত, আন্তর্জাতিক জরিপকারী সংস্থা ওয়াল্ডোমিটার এর তথ্য অনুসারে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার বিবেচনায় ইউরোপের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হচ্ছে স্পেন। দেশটিতে ছয় লাখ ৫৯ হাজারের অধিক মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং ৩০ হাজারের অধিক মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত