০১ এপ্রিল, ২০২০ ১৮:৪৬
বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণে গত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত আরও ১০ বাংলাদেশির মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ নিয়ে করোনাভাইরাসে ৯ দেশে এ পর্যন্ত ৬০ বাংলাদেশির মৃত্যু হলো। এর মধ্যে শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই মারা গেছেন ৩৮ জন। করোনাভাইরাসে এ পর্যন্ত ৬০ জন মারা যাওয়ার পাশাপাশি অন্তত কয়েক শ আক্রান্ত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
এরাআগে যুক্তরাষ্ট্রে সোমবার কভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে অন্তত সাত বাংলাদেশীর মৃত্যু হয়। এর মধ্যে নিউইয়র্কে পাঁচজন, নিউজার্সিতে একজন ও মিশিগানে একজন প্রবাসী বাংলাদেশীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। প্রাণঘাতী রোগটিতে এখন পর্যন্ত দেশটিতে ৩৮ জন বাংলাদেশীর মৃত্যু হয়েছে। এ অবস্থায় নিউইয়র্কে প্রবাসীদের জরুরি চিকিৎসায় বাংলাদেশী চিকিৎসকদের সমন্বয়ে একটি প্যানেল গঠন করেছে নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেট।
জানা গেছে, ৩০ মার্চ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কুইন্সে ওজনপার্কের বাসিন্দা আনোয়ারুল আলম চৌধুরী (৭৫), জ্যামাইকার হিলসাইডে বসবাসরত নিশাত চৌধুরী (৩০), ব্রুকলিনের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা মো. ইব্রাহীম, জ্যামাইকার বাসিন্দা খালেদ হাসমত (৬০) ও আলোকচিত্রী সাংবাদিক স্বপন হাই নিউইয়র্কে মারা গেছেন। নিউজার্সি অঙ্গরাজ্যে মারা গেছেন আলী আকবর নামে আরেক বাংলাদেশী।
এছাড়া মিশিগান অঙ্গরাজ্যের ডেট্রয়েট সিটির বাসিন্দা গোলাপগঞ্জ সমিতির সহসভাপতি শেরুজ্জামান কোরেশী জাহানের বাবা শামসুল হুদা চৌধুরীর (৮০) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। তার বাড়ি সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ উপজেলার ফুলবাড়ী পূর্বপাড়া গ্রামে।
এর আগে ২৯ মার্চ রাত পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় কভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে নিউইয়র্কে আটজন বাংলাদেশীর মৃত্যু হয়। ২৮ মার্চ মৃত্যু হয়েছে কায়কোবাদ, শফিকুর রহমান মজুমদার, আজিজুর রহমান, মির্জা হুদা, বিজিত কুমার সাহা, মো. শিপন হোসাইন, জায়েদ আলম ও মুতাব্বির চৌধুরী ইসমতের।
এদিকে নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সোমবার পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে মারা গেছেন ১১ বাংলাদেশী। রোববার বাংলাদেশ সময় সকাল ৭টার দিকে লন্ডনের এনফিল্ডের একটি হাসপাতালে নভেল করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে মো. সোহেল আহমেদ (৫০) নামে এক প্রবাসী বাংলাদেশী মারা যান। তিনি দীর্ঘদিন ধরে পরিবার নিয়ে যুক্তরাজ্যে বসবাস করছিলেন। তার বাড়ি সিলেটের বড়ইকান্দি গ্রামে।
এর আগে শনিবার বেলা ২টায় লন্ডনের কিং জর্জ হাসপাতালে মারা যান আনোয়ারা বেগম চৌধুরী (৬৫) নামের এক ব্রিটিশ বাংলাদেশী। তিনি সিলেটের বালাগঞ্জের বাসিন্দা ছিলেন। একই দিন আলম আশরাফ আকন্দ (৫০) নামের আরেক বাংলাদেশী মারা যান। পাঁচ মাস ধরে তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন। দুই সপ্তাহ আগে তার নভেল করোনাভাইরাসে সংক্রমণ ধরা পড়ে। তাকে লন্ডনের ইউসিএল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তার বাড়ি জামালপুর জেলায়। এর আগে শুক্রবার লন্ডন স্থানীয় সময় আনুমানিক বেলা আড়াইটায় ম্যানচেস্টার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সাঈদ হোসেন জসিম (৬৫) নামে এক বাংলাদেশী। তার বাড়ি ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার মুন্সীর হাটে।
এর আগে গত ৮ মার্চ কভিড-১৯-এ আক্রান্ত যুক্তরাজ্যে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে মৃত্যুবরণ করেন ম্যানচেস্টারে বসবাসরত ৬০ বছর বয়সী এক বাংলাদেশী। পাঁচ-ছয় বছর আগে ইতালি থেকে এসে যুক্তরাজ্যে স্থায়ীভাবে বসবাস করছিলেন তিনি। দেশটিতে দ্বিতীয় বাংলাদেশী হিসেবে মৃত্যুবরণ করেন লন্ডনের বাঙালি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটসের রেহান উদ্দিন (৬৬)। হাসপাতালে আটদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ১৩ মার্চ পূর্ব লন্ডনের রয়েল লন্ডন হাসপাতালে মারা যান তিনি।
১৬ মার্চ তৃতীয় বাংলাদেশী হিসেবে মারা যান যুক্তরাজ্যে সফররত মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক কোষাধ্যক্ষ মাহমুদুর রহমান (৭০)। তিনি লন্ডনের গ্রেট অরমন্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এর আগে গত ২৩ মার্চ ওই হাসপাতালে মৃত্যু হয় টাওয়ার হ্যামলেটসের স্যাটেল স্ট্রিটের বাসিন্দা হাজী জমশেদ আলীর (৮০)। তিনি বিয়ানীবাজার উপজেলার ছনগ্রামের বাসিন্দা ছিলেন।
নভেল করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে ইতালিতে এ পর্যন্ত দুজন বাংলাদেশীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। সোমবার ইতালির স্থানীয় সময় বেলা ১টার দিকে দেশটির উত্তরাঞ্চল মিলানের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান অপু নামের এক ব্যবসায়ী। তার গ্রামের বাড়ি ঢাকা জেলায়। দীর্ঘদিন ধরে তিনি পরিবার নিয়ে মিলান শহরে বসবাস করছিলেন। এর আগে গত ২০ মার্চ মিলানেই কভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারান আরেক বাংলাদেশী। তিনিও দীর্ঘদিন ধরে সেখানে ব্যবসা করে আসছিলেন।
সৌদি আরবে এ পর্যন্ত নভেল করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে মারা গেছেন দুজন প্রবাসী বাংলাদেশী। এর মধ্যে মোহাম্মদ হাছান নামে এক বাংলাদেশী গতকাল সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মদিনার একটি সরকারি হাসপাতালে মারা যান।
মোহাম্মদ হাসানের ছেলে হেলাল উদ্দিন জানান, সৌদি আরবের মদিনা শহরের তাইবা মার্কেটে চাকরি করতেন তার বাবা। সৌদি আরবে কারফিউ জারি ও ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সবকিছু বন্ধ ঘোষণা করলে কয়েকদিন আগে মদিনা থেকে দূরে এক বন্ধুর কাছে বেড়াতে যান হাসান। পরবর্তী সময়ে সর্দি-কাশি-জ্বর দেখা দিলে হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। গতকাল তার মৃত্যু হয়।
এর আগে গত ২৪ মার্চ মদিনাতেই আল জাহুরা হাসপাতালে মৃত্যু ঘটে আরেক প্রবাসী বাংলাদেশীর। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে সোমবার এক চিঠির মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে জেদ্দায় স্থাপিত বাংলাদেশ কনস্যুলেট।
এ প্রসঙ্গে জেদ্দা কনস্যুলেটের কাউন্সেলর (শ্রম) মো. আমিনুল ইসলাম জানান, মদিনার আল জাহুরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নভেল করোনাভাইরাসে সংক্রমিত এক বাংলাদেশীর মৃত্যুর তথ্য জেদ্দার বাংলাদেশ কনস্যুলেটকে অবহিত করেছে। মৃত ব্যক্তির বাড়ি ঢাকার সাভারে। তিনি সৌদি আরবে সোলায়মান আল ফাহাদ কোম্পানিতে চাকরি করতেন। তার বিষয়ে পরবর্তী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য স্থানীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে বাংলাদেশ কনস্যুলেট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে।
এদিকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারে নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম মারা যাওয়া ব্যক্তিটি ছিলেন বাংলাদেশী। স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, গত ১৬ মার্চ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। পরে তার শরীরে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেয়ার পরও অন্যান্য জটিল রোগ থাকায় শনিবার মারা যান তিনি।
এ বিষয়ে কাতারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আসুদ আহমেদ বলেন, ‘এটা দুর্ভাগ্যজনক। করোনায় আক্রান্ত হয়ে কাতারে এটি প্রথম মৃত্যু। কাতারে কভিড-১৯ মোকাবেলায় একটি সুপ্রিম কমিটি ফর ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট গঠন করা হয়েছে এবং শনিবার তারা আমার সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করেছে।’
এদিকে জর্ডানে আরেক বাংলাদেশীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেলেও তার নভেল করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেনি সে দেশে নিযুক্ত বাংলাদেশী দূতাবাস।
জর্ডানের বাংলাদেশী দূতাবাসের প্রথম সচিব মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান (শ্রম) বলেন, যিনি মারা গেছেন তিনি সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন। বেশ কয়েকবার হাসপাতালেও গেছেন। তবে তার করোনায় মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত নয়।
আপনার মন্তব্য