সিলেটটুডে ডেস্ক

২৭ ডিসেম্বর, ২০১৮ ১৩:১২

ভোটের দায়িত্বে শাবির আওয়ামীপন্থীরাই

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রিসাইডিং ও সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হিসেবে প্রথমবারের মতো নিয়োগ পেয়েছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) এর ২৯ কর্মকর্তা। তাদের সবাই সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বা আওয়ামীপন্থী হিসেবে পরিচিত। নিয়োগ পাওয়াদের মধ্যে বেশ কয়েকজন প্রকাশ্যে নৌকার পক্ষে প্রচারণাও চালাচ্ছেন।

প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন কলেজ পরিদর্শক তাজিম উদ্দিন। এমসি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক নেতা তিনি। সিলেট-৫ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাফিজ আহমদ মজুমদারের পক্ষে নিয়মিত প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন তিনি। তার ফেসবুক প্রোফাইলেও শোভা পাচ্ছে এই ছবি।

শাহাদাত হোসেন (শিশির) শাবিপ্রবি ছাত্রলীগের একটি পক্ষ নিয়ন্ত্রণ করতেন। তবে ওই সময় ছাত্রলীগে কোনো কমিটি ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ পেয়েছেন সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে। নিয়োগ পাওয়া শাহাদাতও নৌকার পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হিসেবে। ২০ ডিসেম্বর ফেসবুকে ‘সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে নৌকা মার্কায় ভোট দিন’ লেখা তার কভার ছবি আপডেট করেছেন।

শাবিপ্রবি ছাত্রলীগের সাবেক নেতা রবিউল ইসলাম (জুয়েল)। প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নিয়োগ পাওয়া রবিউল ১০ ডিসেম্বর নগরীর হাফিজ কমপ্লেক্সে সিলেট-১ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এ কে আবদুল মোমেনের নির্বাচনী মতবিনিময় ও কর্মপরিকল্পনা সভায় যোগ দেন।

সাইদুর রহমানের (মিঠু) নামে শাবিপ্রবি ছাত্রলীগে একটি পক্ষ ছিল। বর্তমানে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিভাগের প্রশাসনিক কর্মকর্তা। সংসদ নির্বাচনে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। তিনি নৌকার প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন। ২০ ডিসেম্বর তার ফেসবুক প্রোফাইল ছবি পরিবর্তন করে ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীকে নৌকা মার্কায় ভোট দিন’ লেখা ছবি দিয়েছেন।

নির্বাচনী আচরণবিধির ১৪(২) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী কোনো প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালাতে পারবেন না। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় আইনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রচারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

প্রিসাইডিং ও সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পাওয়া এসব কর্মকর্তা নৌকার পক্ষে প্রচারে অংশ নেওয়ায় নির্বাচনী আচরণবিধি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে।

সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা রাসেন্দ্র দাস ও সিরাজুল ইসলাম উজ্জ্বলও শাবিপ্রবি ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। তারাও সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের প্রধান ইন্সট্রুমেন্ট কর্মকর্তা খন্দকার মমিনুল হক, সহকারী রেজিস্ট্রার শাহীন আহমেদ চৌধুরী, প্রশাসনিক কর্মকর্তা রাজীব সী ও মইনুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী হিসেবে পরিচিত মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ কর্মকর্তাবৃন্দ নামে একটি কর্মকর্তা পরিষদ থেকে বেশ কয়েকবার অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন নির্বাচন করেছেন।

নিয়োগ পাওয়া অন্য সব কর্মকর্তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামীপন্থী হিসেবে পরিচিত এই প্যানেলের সদস্য।

কলেজ পরিদর্শক তাজিম উদ্দিনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সিলেট সদর উপজেলার সাহেব বাজার এলাকায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীর গণসংযোগে আছেন বলে জানান।

প্রচারণা কেমন চলছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের সবাই (আ.লীগ প্রার্থী) বের হয়ে (জয়ী) আসবেন।’

ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা হয়েও দলীয় প্রার্থীদের প্রচারণায় অংশ নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সরকারের জয়ের জন্যই খাটছি।’

জনসংযোগ কর্মকর্তা শাহাদত হোসেন শিশির চাকরিজীবনে রাজনৈতিক সমর্থন প্রকাশ করছেন না বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘আমার দায়িত্ব আমি যথাযথভাবে পালন করব। তবে আমাকে বিভিন্নজন ফোন করে এ বিষয়ে উত্ত্যক্ত করছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা এম কাজী এমদাদুল ইসলাম বলেন, এ তালিকায় কারা আছেন, নামধাম প্রকাশ করার কোনো বিধান নেই। তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্যও করতে রাজি হননি।
সূত্র: প্রথম আলো

আপনার মন্তব্য

আলোচিত