শাহ শরীফ উদ্দিন

২৭ ডিসেম্বর, ২০১৮ ২২:০২

আওয়ামী লীগে উৎসবের আমেজ, বিএনপিতে আতঙ্ক

সিলেটে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা সম্পন্ন

শুক্রবার সকাল ৮টার মধ্যে নির্বাচনী প্রচারণা শেষ করার নির্দেশনা থাকলেও সিলেটে বৃহস্পতিবারই প্রচারণা শেষ করেছে প্রধান দুই দল। শেষদিনের প্রচারণায় দুই দলে দেখা গেছে বিপরীতমুখী চিত্র। আওয়ামী লীগের প্রচারণায় ছিলো উৎসবের আমেজ, আর বিএনপিতে ছিলো আতঙ্ক।

বিকেলে নগরীর কোর্ট পয়েন্ট থেকে মিছিল শুরু করে শহীদ মিনারে শেষ নির্বাচনী সভা করেন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ড. আব্দুল মোমেন। তার শেষ সভায় নেতাকর্মীদের ঢল নামে। অপরদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির সন্ধ্যায় কোর্ট পয়েন্টে শেষ নির্বাচনী সভা করেন। গ্রেপ্তার আতঙ্কে এই জনসভায় এমনিতেই উপস্থিতি ছিলো কম, তার ওপর সভা পরবর্তীতে মিছিলে বাধা দিয়ে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সন্ধ্যায় মুক্তাদিরের প্রধানন নির্বাচনী কার্যালয় থেকেও কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (২৭ ডিসেম্বর) বিকাল ৩ টায় নগরীর কোর্ট পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায় বিভিন্ন দিক থেকে 'উন্নয়নের মার্কা নৌকা, শেখ হাসিনার মার্কা নৌকা, জয় বাংলা, মোমেন ভাইয়ের মার্কা নৌকা' সহ বিভিন্ন স্লোগান সহকারে জড়ো হচ্ছে নৌকার মিছিল। সকলের গায়ে সিলেট-১ আসনের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ড. একে আব্দুল মোমেনের ছবি সম্বলিত নৌকা প্রতীকের সাদা টি-শার্ট, অনেকের হাতে নৌকা প্রতীকের বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড, রয়েছে নৌকার প্রতীকী। গান-বাজনা, বাদ্যযন্ত্র নিয়েও হাজির হন অনেকে। বাদ যাননি শিশুকিশোর এবং মহিলারাও।

সকল মিছিল এক সাথে জড়ো হয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ভাই ড. একে মোমেনের নেতৃত্বে বিশাল শোডাউন করে সকলে নির্বাচনী সভাস্থল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এসে পৌঁছায়। এর পর শুরু হয় নির্বাচনী সভার কার্যক্রম। বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটে শুরু হয়া এ সভা চলে ৫ টা ১০ মিনিট পর্যন্ত।

সভায় মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিনের সঞ্চালনায় ও সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের সভাপতিত্বে এসময় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, সিলেট-১ আসনের আওয়ামী লীগ ও মহাজোট মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ড. একে আব্দুল মোমেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী।

এ সভায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত তার ভাই মোমেনকে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে নির্বাচিত করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনারা অতীতে এই আসনে আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। আমি গত ১০ বছর চেষ্টা করেছি আপনাদের সেবা করার, চেষ্টা করেছি উন্নয়নের। সে অধিকার থেকে আপনাদের কাছে অনুরোধ করছি, এবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার ভাই মোমেনকে মনোনীত করেছেন। তাই আগামী ৩০ তারিখ আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে তাকে জয়ী করবেন।

আব্দুল মোমেন বলেন, দুর্নীতিমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত, জঙ্গিবাদ মুক্ত, আলোকিত বাংলাদেশ গড়তে পুনরায় নৌকায় ভোট দিন। পুনরায় শেখ হাসিনাকে নির্বাচিত করে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান তিনি।

অপরদিকে সন্ধ্যা ৬টায় সিলেটের কোর্ট পয়েন্টে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত সিলেট-১ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরের শেষ দিনের নির্বাচনী সভা করার কথা থাকলে সাড়ে ৬টা পর্যন্ত সেখানে গিয়ে হাতেগোনা কিছু মানুষের উপস্থিতি আর একটি প্রচার গাড়ি ছাড়া কিছু দেখা যায়নি। এক পর্যায়ে নেতাকর্মীদের নিয়ে আসেন খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির। এসেই তার নেতৃত্বে জিন্দাবাজার অভিমুখে শুরু করেন শোডাউন। শোডাউনটি জিন্দাবাজারস্থ অগ্রগামী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে আসা মাত্র কয়েকজন নেতাকর্মীকে আটকের চেষ্টা করে পুলিশ। তখনই ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় বিএনপির নেতাকর্মীরা। এসময় বেশ কয়েকজনকে আটকও করে বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা। এতে আতঙ্ক ছড়ায় সর্বত্র। এর পর আর সভা না করে দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন বিএনপির সমর্থকরা।

এদিকে কোর্ট পয়েন্টে সমাবেশ না করে স্থান ত্যাগ করার পূর্বে সিলেট-১ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী খন্দকার মুক্তাদির সড়কে দাঁড়িয়ে পথচারীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা দেখেছেন তারা (আওয়ামী লীগ) আমাদেরকে পুলিশ দিয়ে কীভাবে হয়রানি করাচ্ছে। পুলিশ দিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের আটকের মাধ্যমে আমাদের নানাভাবে বাধা দিয়ে যাচ্ছে।

নেতাকর্মীদের বাসা বাড়িতে তল্লাশি করে নেতাকর্মীদের ভীতি সৃষ্টি করা হচ্ছে অভিযোগ করে তিনি আরও বলেন, প্রতি রাতে আমার নেতাকর্মীদের বাসায় পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে। তাদেরকে না পেয়ে তাদের বৃদ্ধ বাবা-মাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

তিনি ৩০ তারিখ সকলকে ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে ধানের শীষকে জয়ী করার আহ্বান জানান।

এদিকে সমাবেশে কোন রকম বাধা দেওয়া হয়নি জানিয়ে কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহেল মিয়া সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোরকে জানান, তাদের সমাবেশে কোন বাধা দেয়া হয়নি। আমরা মামলার আসামি গ্রেপ্তার করেছি। তারা নিয়মিতই তাদের সভা সমাবেশ করতে পারছে।

কজনকে আটক করা হয়েছে এমন প্রশ্নে ওসি বলেন, ১৪ থেকে ১৫ জনকে আটক করা হয়েছে। সঠিক সংখ্যা এখনও তিনি জানেন না বলে জানান।

এদিকে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন বিএনপির এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, অপরাধি যে দলেরই হোক আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে এটাই স্বাভাবিক। কেউ যদি কোন মামলার আসামি থাকে তাহলে প্রশাসন তাকে আটক করবে এটাইতো নিয়ম।

আসাদ উদ্দিন আরও বলেন, সিলেটে এখনো ভোটের পরিবেশ ভালো। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা আছে। কিছু কিছু জায়গায় আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে তাছাড়া প্রচারগাড়িতেও হামলা করা হয়েছে। এছাড়া আর কোন বড় সমস্যা এখনো হয়নি।

বিএনপির অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অভিযোগ দেয়া বিএনপির স্বভাব। এটা নতুন কিছু না।

অপরদিকে সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ মামলা হামলার অভিযোগ করে বলেন, সামগ্রিক ভাবে সুষ্ঠু ভোটের কোন পরিবেশ নেই। সারা সিলেটের বিভিন্ন জায়গায় গায়েবি মামলা দিয়ে নেতাকর্মীদের ফাঁসানো হচ্ছে।

আলী আহমদ আরও বলেন, বিভিন্ন জায়গায় বাসাবাড়িতে গিয়ে পুলিশ আমাদের এজেন্টদের খোঁজছে। এমনকি ঘরে তাদের না পেয়ে আগামী ২ তারিখ পর্যন্ত বাসায় না আসার হুমকিও দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

তিনি বলেন, ৭১ সালে যেরকম রাজাকাররা যেমন মানুষের বাড়ি চিনিয়ে দিয়েছিলো ১৮ সালে এসেও আওয়ামী লীগের কর্মীরা আমাদের নেতাকর্মীদের বাড়িঘর দেখিয়ে দিয়ে তার পুনরাবৃত্তি করছে।

তবে ধানের শীষের যে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে এতে সামান্যতম নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে জয় তাদের হবে বলেও জানান আলী আহমদ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত