জাহিদ উদ্দিন, গোলাপগঞ্জ

২৮ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০১:২৭

শেষ সময়ে উত্তাপ আর উৎকণ্ঠা

সিলেটে-৬

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচার প্রচারণা শেষ হচ্ছে শুক্রবার (২৮ ডিসেম্বর) সকাল ৮ টায়। তবে বৃহস্পতিবারই শেষ করে ফেলেছেন প্রার্থীরা। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই সিলেট-৬ (গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার) আসনে শান্তিপূর্ণ প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছিলেন আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা। কিন্তু শেষ সময়ে হঠাত উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে এ আসনের গোলাপগঞ্জ উপজেলার নির্বাচনী মাঠ। উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে জনমনে।

গত মঙ্গলবার (২৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় গোলাপগঞ্জ উপজেলার হেতিমগঞ্জ বাজারে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী সিলেট জেলা ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক ফয়সল চৌধুরীর পথসভা ছিল। এ সময় রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির অভিযোগে মোবাইল কোর্ট অভিযান পরিচালনা করতে গেলে বিএনপি নেতাকর্মীদের হামলায় আহত হন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, গোলাপগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুমন্ত ব্যানার্জী। এ ঘটনার পর থেকেই এ আসনের নির্বাচনী মাঠে উত্তাপ শুরু হয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করে। এ মামলায় ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী ফয়সল চৌধুরীকে প্রধান আসামী করে ৫৭জনের নাম উল্লেখ ও ২৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামী করা হয়। একই দিন বিকেলে উপজেলার শরীফগঞ্জ ইউনিয়নে মহাজোট প্রার্থী, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের নির্বাচনী অফিস ভাংচুরের অভিযোগ করে আওয়ামী লীগ। এ ঘটনায় তারা একটি মামলা দায়ের করলে বিএনপির ২জন নেতাকে আটক করে পুলিশ।

এদিকে বুধবার (২৬ ডিসেম্বর) বিকেলে গোলাপগঞ্জ পৌর শহরে ধানের শীষ প্রতীকের শেষ নির্বাচনী সভা ছিল । বিষয়টি প্রচারিত হলে গোলাপগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিএনপি সমর্থকরা জনসভায় উপস্থিত হওয়ার জন্য উপজেলা সদরের চৌমুহনীতে অবস্থান নিতে থাকেন। এসময় চৌমুহনীতে জড়ো হওয়া বিএনপি ও ধানের শীষের সমর্থকরা মিছিল বের করে নূর ম্যানশনের সামনে জড়ো হতে চাইলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। পুলিশি ধড়-পাকড়ে ধানের শীষের সমর্থকরা দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে চলে যান। তখন চৌমুহনী এলাকা থেকে পুলিশ ১৪ জন বিএনপি নেতাকর্মীকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এতে পণ্ড হয়ে যায় ফয়সল আহমদ চৌধুরীর শেষ জনসভা।

এ সময় উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুমন্ত ব্যানার্জীর উপর হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার এজহারনামীয় ১৪জন আসামিকে আটক করা হয়েছে বলে পুলিশ জানায়। এ ঘটনার পর থেকে গোলাপগঞ্জ চৌমুহনীতে বিকেল থেকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। তাদের সঙ্গে রয়েছে বিজিবি ও ডিবি পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতিতে ব্যবসায়ীসহ সাধারণ জনগণের মধ্যে আতংকের সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে একই রাতে ভাদেশ্বর ইউনিয়নের মীরগঞ্জ বাজারে আওয়ামী লীগ প্রার্থী নুরুল ইসলাম নাহিদের পোস্টার ছেড়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতারা বিএনপি নেতাকর্মীদের দায়ী করেন।

অন্যদিকে বুধবার গোলাপগঞ্জ চৌমুহনীতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শেষ নির্বাচনী সভা করতে না দেয়ায় স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের সমালোচনা করে ফয়সল আহমদ চৌধুরী বলেন, আমাকে নির্বাচনী মাঠ থেকে সরাতে চেষ্টা চালাচ্ছে প্রশাসন। সরকারদলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে প্রশাসন আগ্রাসী ভূমিকা পালন করছে।

তিনি আরও বলেন, গোলাপগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুমন্ত ব্যানার্জীর উপর হামলার ঘটনার সাথে বিএনপির কোন নেতাকর্মী জড়িত নয়। নেতাকর্মীদের হয়রানী করতে এটা একটা ষড়যন্ত্র বলেও অভিযোগ তুলেছেন বিএনপির এই প্রার্থী।

বিগত স্থানীয় ইউপি ও পৌর নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট অনুষ্ঠিত হয়ে নজির স্থাপন করেছিল এ দুটি উপজেলা। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনো হামলা, সংঘাত, সহিংসতা ছাড়াই এসব নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছিল। ভোটাররাও নির্ভয়ে এসব নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি বড় দুই দলের এসব ঘটনায় সাধারণ ভোটাররা উদ্বেগ ও আতংকের মধ্যে রয়েছেন।

স্থানীয় ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন মাহমুদ বলেন, এতদিন সর্বত্রই ভোটের ভালো পরিবেশ ছিলো। কোথাও কোন সংঘর্ষ ছিলো না। কিন্তু হঠাত করে ভোটের পরিবেশ বদলাতে শুরু করেছে। বিশেষ করে এসিল্যান্ডের উপর হামলার পর থেকে সংঘাত আরও বেড়েছে। এমতাবস্থায় ভোটের দিন পর্যন্ত কোন পরিস্থিতি বিরাজ করবে তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন ওই ব্যবসায়ী।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত