সোশ্যাল মিডিয়া ডেস্ক

১০ জুলাই, ২০২০ ১৮:০৮

নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের ইতিহাসে সাহারা খাতুন আদিমাতার অবয়ব

বৃহস্পতিবার রাতে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন।

সাহারা খাতুনকে নিয়ে ফেসবুকে লিখেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক কাবেরী গায়েন

লেখাটি ফেসবুক থেকে হুবুহু প্রকাশ করা হলো-

পারিবারিক খুঁটি্র জোর ছাড়াই সাহারা খাতুনের জেনারেশনের কোন নারীর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়াটাকে উপেক্ষা করা চলে না। আমাদের নাগরিক সুশীলতায় তাঁর আচরণের অনেক খামতি চোখে পড়তেই পারে। কত ট্রল হয়েছে ওনাকে নিয়ে পত্রিকায়, সামাজিক মাধ্যমে। কিন্তু তিনি মাঠের রাজনীতি করে উঠে আসা নেতা। আমি একবার প্রেসক্লাবের সামনে থেকে তাঁকে মিছিল নিয়ে আসতে দেখেছি। কমদামী সাদা শাড়ির উপরে কালো কোট, আইনজীবীর। আমাকে বিস্মিত করেছিলো তাঁর ধুলিধূসর ফাটা পা। ওই একবারই দেখেছি একটু দূর থেকে রিকশায় বসে, মিছিলটা পাশ ঘেঁষে চলে যায়। শুনেছি দলীয় কর্মীদের পেটাতে এলে তিনি সামনে দাঁড়াতেন তাদের আড়াল করে। একারণে বহুবার আহত হয়েছেন।

বাংলাদেশের নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের ইতিহাসে সাহারা খাতুন, মন্নুজান সুফিয়ান, মতিয়া চৌধুরী, সাজেদা চৌধুরী এক একজন আদিমাতার অবয়ব। তাঁদের অবদান ক্ষমতায় থাকার সময়কার কিছু ভুলত্রুটিসহই ঐতিহাসিক, এবং আমরা, এখনের নারীরা রাজনৈতিক কমিটমেন্টের দিক থেকে তাঁদের ধারেকাছেও নই।

অনেকেই দেখছি তিনি কী কী পারেননি সেই ফিরিস্তি আজ তাঁর মৃত্যুদিনেও তুলেছেন। কম্পিটার-স্মার্টফোন থাকলে আর নেট সংযোগ থাকলে ঘরে বসে অনেক কথা লেখা যায়। তাঁর মন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাউঞ্জে একজন শিক্ষককে বলতে শুনেছি, 'ধূর, এই মা কালীর মুখ দেখে দিন শুরু হলে দিনটা অপয়া হবে। ওনাকে সকাল সকাল টেলিভিশনের পর্দায় আনা ঠিক না।' এই মানসিকতা ধারণকারী দেশে মাঠের রাজনীতি করে উঠে এসে আওয়ামীলীগের মত, তখন পর্যন্ত, নিবিড় পুরুষ নেতৃত্বপ্রধান বড় দলে দেশের প্রথম নারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হতে শক্তি লাগে, এবং শুধু এই অর্জন্টুকুই এক বিশাল যোগ্যতা।

অতি সাধারণ জীবনযাপনের এই শক্তিমান রাজনৈতিক নারীর প্রয়াণে শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করছি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত