আশরাফুল আলম খোকন

০৭ ডিসেম্বর, ২০২০ ২৩:৪১

ফতোয়া ব্যবসায় বক ধার্মিকরাই যুগে যুগে রেখেছে ভূমিকা

হরেক রকম ফতোয়া আমরা দেখেছি। আর এই ফতোয়ার ব্যবসায় যুগে যুগে বক ধার্মিকরাই ভূমিকা রেখেছে। আর প্রকৃত ধার্মিকরা সত্যিকারের ধর্মটাই পালন করেছেন। ইসলাম ধর্মের শান্তির বাণী প্রচার করেছেন। ইংরেজি শিক্ষা হারাম এই ফতোয়া দিয়ে জাতিকে শত বছর পিছিয়ে দিয়েছে তারা। এখন তারা ইংরেজিতে বয়ানও দেয়।

নারী শিক্ষা হারাম এই ফতোয়া দিয়ে জাতিকে তারা পশ্চাৎপদ করে রেখেছে। এখন মেয়েদের জন্য মাদ্রাসাও তৈরি করে। এই ফতোয়ার বিরুদ্ধে বেগম রোকেয়ারা দীর্ঘদিন সংগ্রাম করেছে। সহশিক্ষাকেও তারা হারাম বলে ফতোয়া দিয়েছিল। নারী নেতৃত্বকেও তারা হারাম ফতোয়া দিয়েছে আবার বেগম জিয়ার সাথে জোটও করেছে। তাদের কাছে আলতা দেয়া হারাম, লিপস্টিক হারাম, নারী নার্স হারাম, মেয়েদের চাকরি হারাম।

১৮১৮ সালে তারা ফতোয়া দিয়েছিলো ভারতবর্ষ হচ্ছে দারুল হারব। এখানে জুমা ও ঈদের নামাজ হারাম। এমন ফতোয়াও এই ধর্ম ব্যবসায়ীরা দিয়েছিল।

পাকিস্তানি হানাদারদের প্রতি তাদের এতোটাই দরদ ছিল যে “যুদ্ধের সময় নারী ধর্ষণ জায়েজ”- এই ফতোয়াও তারা দিয়েছিলো। মহান মুক্তিযুদ্ধে আড়াই লক্ষ মা বোন তাদের সম্ভ্রম হারিয়েছিল।

উপমহাদেশে যখন প্রথম রেলগাড়ি আসে তখন তারা বলছিলো রেলগাড়ি চললে মাটি আজাব পায়। সুতরাং রেলগাড়ি হারাম। এখন তারা রেলগাড়িতে চড়েন না?

শুধু ভাষা দিয়ে গান হয় না। গানের মূল হচ্ছে সুর তাল লয়। তারা ফতোয়া দিয়েছিলো গান হারাম। এখন কিন্তু তারা শিল্পীগোষ্ঠী পর্যন্ত বানিয়েছে। যারা সুর তাল লয় ধরেই গান করে। সে যে গানই হোক না কেন। বাংলা ভাষায় সবচেয়ে বেশি ইসলামী গানের স্রষ্টা জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকেও তারা নাস্তিক ঘোষণা দিয়েছিলো।

ছবি তোলা হারাম, মাইকে আজান হারাম, রেডিও হারাম, ক্যামেরা হারাম, টিভি দেখা হারাম, ভিডিও হারাম, পুরুষ ডাক্তার দেখানো হারাম, জন্মনিয়ন্ত্রণ হারাম, গায়েহলুদ হারাম, জন্মদিন পালন হারাম, নববর্ষ পালন হারাম- ভাইজানরা হারাম ঘোষণা দিয়ে এখন এর সব কিছুই করেন।

তাদের এইরকম হারামের তালিকা টানা তিনদিন লিখলেও শেষ হবে না। সর্বশেষ সংযোজন সোশ্যাল মিডিয়া, ইউটিউব, ফেসবুক হারাম। ফতোয়া দিয়ে দেদারছে তারা এইসব ব্যবহার করছে। তাহলে ভাস্কর্য হারাম তাদের এই ফতোয়া আমরা কেন শুনবো। আমরা স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক। সংবিধান অনুযায়ী দেশ চলে, ফতোয়া দিয়ে কোন দেশ চলে না।

ঐতিহ্যগতভাবে এই দেশ সকলের। আউল, বাউল, লালনের এই দেশ। পীর, ফকির, আউলিয়াদের এই দেশ। তিতুমীর, সূর্যসেন, ক্ষুদিরাম, প্রীতিলতার এই দেশ। মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডার এই দেশ। এটা শেরেবাংলা, সোহরাওয়ার্দী, ভাসানী ও বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ। এইখানে সবার সমান অধিকার।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত