নিজস্ব প্রতিবেদক

২৮ জানুয়ারি, ২০২২ ০১:১৯

ফুটবলে ‘ফরিদ’ লিখে টুর্নামেন্ট, অনলাইনে সমালোচনা

একদফা দাবিতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা উপাচার্য বিরোধী প্রীতি ফুটবল ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করে, যেখানে ফুটবলে গায়ে উপাচার্যের নাম লিখে তারা ম্যাচ খেলেছে।

বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের হ্যান্ডবল গ্রাউন্ডে এই টুর্নামেন্টের আয়োজন করে শিক্ষার্থীরা। ওই টুর্নামেন্টের ছবি ও সংবাদ সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোরসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশের পর অনলাইনে এর ব্যাপক সমালোচনা হয়।

অনেকেই এইধরনের আয়োজনকে শিক্ষার্থীদের বাড়াবাড়ি হিসেবে মন্তব্য করেছেন। একইসঙ্গে এটার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা অনেকের সহানুভূতি হারাবে বলে মন্তব্য করেন।

সংগঠক আব্দুল করিম কিম শিক্ষার্থীদের এই আয়োজনকে হটকারি হিসেবে মন্তব্য করে ফেসবুকে লেখেন, ‘ফুটব‌লে ফ‌রিদ লি‌খে লাথি দেয়াটা মানা গে‌লো না। সীমা অতিক্রম করার একটা সীমাও আছে। এ বস্তির কোন ঝগড়া নয়। একটি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী দ্বন্দ্ব। সারাদেশের মানুষ যে অহিংস আন্দোলনে সহমর্মিতা দেখিয়েছে, এই একটি হটকারি কাজ সবাইকে এই সিদ্ধান্তে নিয়ে যেতে পারে যে, ছেলেমেয়েগুলোতো আসলেই বেয়াদব।’

সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও ব্যাংকার এম আনোয়ার হোসেন রনি লেখেন, ‘প্রতিবাদের ভাষা এবং পথ যখন সীমা লঙ্ঘন করে তখন একটা ন্যায্য আন্দোলনও প্রশ্নবিদ্ধ হয়। এ অপ্রত্যাশিত, দুঃখজনক।’

খোন্দকার শাহিদুল হক ফেসবুকে মন্তব্য লিখেন, ‘এটাও চরম অপরাধ। তবে রক্ষিত তপন নামের একজন ফেসবুকে এর জবাবে লেখেন, আসল অপরাধীদের লজ্জাবোধ এর চেয়েও কম।’

ফুজেল আহমদ নামের এক প্রবাসী ফেসবুকে লেখেন, ‘একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের কাছে এমন প্রতিবাদ খুবই পুওর মেন্টালিটির পরিচয় বহন করে। এরাই আবার এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক হবে।’

এটা কি কোনো প্রতিবাদ হতে পারে, প্রশ্ন রাখেন শাহআলম সজীব।

সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম কামাল লেখেন, ‘আন্দোলন হোক সুস্থ ধারায়। একজন শিক্ষক খারাপ হতে পারেন, কিন্তু তাকে এভাবে প্রতীকী লাথি মারাও অনুচিত। বাড়াবাড়ি ঠিক না। শিক্ষার্থীদের মূল্যবোধের পরিচয় দিতে হবে।’

সংস্কৃতিকর্মী দেবজ্যোতি দেবু ফেসবুকে লেখেন, ‘এটা অনেকটাই বাড়াবাড়ি হয়ে গেল। হাজার হোক তিনি শিক্ষক এবং সাস্টের শিক্ষার্থীদের এখন পর্যন্ত পুরো আন্দোলনটাই মার্জিত ছিল। এভাবে বিতর্কের জন্ম দেওয়া উচিত হয়নি।’

এদিকে, এমন আয়োজন সম্পর্কে জানতে আয়োজকদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাদের কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি। 

উল্লেখ্য, উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীরা সাতদিনের বেশি সময় ধরে অনশন করে। একটি ছাত্রীহলের অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধানের দাবিতে শুরু হওয়া এই আন্দোলনের একটা পর্যায়ে পুলিশের হামলার পর আন্দোলন পরিণত হয় একদফা দাবিতে। দীর্ঘ তেরোদিনের আন্দোলনের একটা পর্যায়ে গত ১৯ জানুয়ারি থেকে শিক্ষার্থীরা আমরণ অনশনে যায়। উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রাখে তারা। অনশনরত শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগ অসুস্থ হয়ে পড়লেও উপাচার্য পদত্যাগ করেননি। গত বুধবার (২৬ জানুয়ারি) সকালে শিক্ষার্থীদের দেখতে আসেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। এদিন সকালে অনশনরত শিক্ষার্থীদের আশ্বাস দিয়ে তাদের অনশন ভাঙান। শিক্ষার্থীদের মৃত্যুপথযাত্রা সত্ত্বেও উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের চুপ হয়ে থাকায় বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ মুহম্মদ জাফর ইকবাল উপাচার্য ‘দানব’ বলেও মন্তব্য করেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত