স্যােশাল মিডিয়া ডেস্ক

২০ মে, ২০১৬ ২০:৩৮

‘পাক’ ‘নাপাক’ শব্দ হিন্দুরা ব্যবহার করেন না : আরিফ জেবতিক

লেখক-ব্লগার আরিফ জেবতিকের মতে, শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের 'না পাক' শব্দ ব্যবহার অসম্ভবের কাছাকাছি একটা ঘটনা।

শুক্রবার ফেসবুকে দেয়া একটা স্ট্যাটাসে আরিফ লিখেন' 'পাক' 'নাপাক' শব্দগুলো মুসলিম বাচনে থাকে, হিন্দুরা এটা ব্যবহার করেন না।'

শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি এক ছাত্রকে শাসন করতে গিয়ে 'তুই নাপাক, তাের আল্লাহ নাপাক' বলে কটুক্তি করেন। এই অভিযোগ সাংসদ সেলিম ওসমান লাঞ্ছিত করেন এই শিক্ষককে। যদিও শিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি কটুক্তির কোনো প্রমাণ পায়নি। তবে শুক্রবার হেফাজত ইসলামের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে শিক্ষক ধর্ম নিয়ে কটুক্তি করেছেন বলে ‌'প্রমাণ পেয়েছে' তারা।

এরপ্রেক্ষিতে শুক্রবার বিকেলে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন আরিফ জেবতিক। তাঁর স্ট্যাটাসটি হুবুহু তুলে ধরা হলো-

সেলিম ওসমানের খুরে খুরে পেন্নাম। এমন কার্ড খেলেছে যে এখন কান ধরাটরা সব লাটে উঠবে। যে ছাত্র দুইদিন আগেও বলেছে হেডমাস্টার ধর্ম নিয়ে কোনো কটাক্ষ করেনি, সে-ই এখন দিব্যি নতুন একটা পাঞ্জাবি পরে বলছে, স্যার আল্লাহকে গালি দিয়েছে। এর আগে এক হিন্দু দর্জি কয়েকমাস আগে কোপ খেয়ে মারা গেছে, শ্যামল কান্তি হেডমাস্টারের কল্লা ফেলে দিয়ে 'তাঁর নিরাপত্তাই মূখ্য উদ্দেশ্য ছিল'-এমনটা প্রমাণিত না করলেই আমি এই যাত্রা খুশি।

আমাদের দেশে মুসলিম এবং হিন্দু জনগোষ্ঠির বাচনের মধ্যে কিছু শব্দগত তফাৎ আছে। যেমন আমরা বলি পানি, হিন্দুরা বলেন জল; আমরা গোসল করি, তাঁরা স্নান করেন। এখন হেডমাস্টার মহাশয় নাকি 'না পাক' বলেছে; এটা অসম্ভবের কাছাকাছি একটা ঘটনা। 'পাক' 'নাপাক' শব্দগুলো মুসলিম বাচনে থাকে, হিন্দুরা এটা ব্যবহার করেন না।
যে ছাত্র আগে অস্বীকার করেছে তাঁকে দিয়ে নতুন করে কথাবার্তা কারা বলান সেটাও কমনসেন্সের অংশ।

এখন এমন না যে হেফাজতের নেতাদের কমনসেন্স আমার আপনার চাইতে কম-উনারারও এগুলো জানেন।

তবু তাঁরা আন্দোলনের হুমকি দিয়ে বাজার গরম করবেন। কারণ এই মিথ্যাচার তাঁরা ভালোই রপ্ত করেছেন।

শাপলা চত্ত্বরে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে বলে তাঁরা অভিযোগ করলেও পরবর্তীতে যখন দেখা গেল নিহতের হিসাব অর্ধশতও পার হবে কী না সন্দেহ, তখনও কিন্তু তাঁরা তাঁদের আগের বক্তব্য থেকে সরে আসেনি-প্রমাণও দেয়নি। 'সত্যের সৈনিক'দের কাছে তো মানুষ 'সত্য বক্তব্য' আশা করে।

আমরা যখন ২০১৩ সালে চট্টগ্রামে তাঁদের সঙ্গে বৈঠকে বসে প্রমাণ করতে চেয়েছিলাম যে গণজাগরণ মঞ্চের কোনো এজেন্ডা ধর্মের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, তাঁরা হুমকি দিয়ে বলেছিল যে তাঁরা বৈঠকে বসবে না। কারন তাঁরা জানেন যে বৈঠকে বসলেই সত্য প্রকাশিত হয়ে যাবে। তাদের সত্যের আকাংখা নেই, জামাত-বিএনপির পক্ষে মাঠ গরম করাটাই তাদের উদ্দেশ্য।

৩০ কোটি টাকার রেলের জমির বিনিময়ে চুপ হয়ে যাওয়ার যে কথা দুষ্টজনেরা বলে, সে ব্যাপারে হেফাজতের কোনো প্রতিক্রিয়া কোথাও দেখি না।

সেলিম ওসমান টেকাটুকাওয়ালা মানুষ, তার ভাষ্য অনুযায়ী সবাই তার 'ুটকি' মেরে যায়-সেটা বাঁচাতে এখন তিনি হেফা্জতকে মাঠে নামিয়েছেন। একজন শিক্ষকের নামে মিথ্যা অভিযোগ করতে এদের বাঁধবে না এখন।

হাওয়া খানিকটা গরম হবে।

তারপর সরকার মাইর দিয়া সোজা করে ফেলবে। আমাদেরকে বুঝাবে, 'দ্যাখ, আমরা ছাড়া তোদের ুটু রক্ষার কেউ নাই, নাইলে হেফাজতে তোদেরকে এক্কেরে আফগানিস্তানে নিয়া ফালাবে। সুতরাং লাইনে থাক।'

আর নেতারা হয়তো আরো কিছু রেলের জমি কি নৌপরিবহনের জমি গাপ করে চুপ হয়ে যাবে।

আমার মনটা খারাপ হয় যে এই পুরো রাজনীতির ব্যবসায় হয়রানি হবে কিছু অসহায় ধর্মপ্রান ছাত্র।

কমেন্টে একটা লিংক দিলাম। ঢাকা শহরে ভূয়া মসজিদ মাদ্রাসার কথা বলে একশ্রেনীর মানুষ প্রতিনিয়ত ধর্মপ্রান মানুষদেরকে প্রতারণা করে। আল্লাহর নাম নিয়ে প্রতারনা করতে এদের বুক কাঁপে না।

তবু এই জঘন্য লোকগুলোও একদিক দিয়ে ভালো। তারা অন্তত অন্যের জীবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলে টাকা রোজগার করে না।




আপনার মন্তব্য

আলোচিত