স্যোশাল মিডিয়া ডেস্ক

০৭ জুন, ২০১৬ ০১:২০

শার্লক হোমস দিয়ে শুরু, রবীন্দ্রনাথ দিয়ে শেষ

আলাচিত পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে সামাজিক যোগােযাগ মাধ্যমে। গত রোববার সকালে দুবৃত্তদের গুলিতে খুন হন জঙ্গি দমনে সাহসী ভূমকি রাখা এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। এরপর থেকেই বাবুলের একটি পুরণো স্ট্যাটাস ঘুরতে থাকে বিভিন্নজনের টাইমলাইনে। ফেসবুকে এই লেখাটি তিনি শুরু করেছেন শার্লক হোমস দিয়ে ও শেষ করেছেন রবীন্দ্রনাথের লাইন দিয়ে।

এনিয়ে লেখক স্বকৃত নোমান ফেসবুকে লিখেছেন-


পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তার শার্লক হোমস দিয়ে শুরু করেছেন, আর শেষ করেছেন রবীন্দ্রনাথ দিয়ে। তিনি স্ট্যাটাসে লিখেছেন, “কিশোর বয়সে পড়ার টেবিলে বসে চুরি করে শার্লক হোমস পড়তে পড়তে রহস্যের দুনিয়াতে হারিয়ে যেতাম। ভাবতাম কত সহজেই শার্লক হোমস রহস্যের জট খুলে ফেলে। কিশোর পেরিয়ে যৌবনে এসেছি সে মেলা দিন। পুলিশে এসেছি তাও ১০ বছর পেরিয়ে গেল। এখন বুঝি শার্লক হোমস হওয়া কত কষ্টের, কত সাধনার।...স্যার আর্থার কোনান ডয়েলের শার্লক হোমসের অভিযান শেষে ক্লান্তি এসে ভর করত কিনা জানি না তবে আমার মাঝে মাঝে ক্লান্তি আসে। তারপরও সবসময় বলি “ক্লান্তি আমায় ক্ষমা করো হে প্রভু।”

বাবুল আক্তারের মানস গঠন কিভাবে হয়েছে তা বোঝা যাচ্ছে তার স্ট্যাটাসটি পড়ে। আমি বিশ্বাস করি না তার মনোবল ভেঙে যাবে। শার্লক হোমস তাকে শক্তি যোগাবে, রবীন্দ্রনাথ তাকে শক্তি যোগাবে। তিনি পরাজিত হবেন না, আমি নিশ্চিত।


গত বছর ৭ অক্টোবর পাঁচ জঙ্গিকে গ্রেপ্তারের মিশন সফল করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন বাবুল আক্তার। যাতে তিনি পেশাগত কাজ করতে গিয়ে নানা বাধা বিপত্তির পাশাপাশি পরিবারকে সময় দিতে না পারার আক্ষেপ ছিল।

ওই সময় বন্দরনগরী চট্টগ্রামে কূলকিনারাহীন (ক্লু-লেস) পাঁচটি হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন এবং এই রহস্য উন্মোচন করতে গিয়ে সন্ধান করেছেন জঙ্গি আস্তানার।এই ক্লু-লেস হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করতে গিয়ে আত্মঘাতী গ্রেনেড হামলা থেকে অল্পের জন্য বেঁচে গিয়েছিলেন বাবুল। নিজের এবং সহকর্মীদের প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছেন পাঁচ জঙ্গিকে। উদ্ধার করেছেন বিপুলসংখ্যক হ্যান্ড গ্রেনেড, অস্ত্র, গুলি ও বিস্ফোরক। এজন্য তাকে চেষ্টা করতে হয়েছিল একমাস।

ফেসবুকে তার ওই সময়ের সেই বাবুল আক্তার লিখেছিলেন-


“কিশোর বয়সে পড়ার টেবিলে বসে চুরি করে শার্লক হোমস পড়তে পড়তে রহস্যের দুনিয়াতে হারিয়ে যেতাম। ভাবতাম কত সহজেই শার্লক হোমস রহস্যের জট খুলে ফেলে। কিশোর পেরিয়ে যৌবনে এসেছি সে মেলা দিন। পুলিশে এসেছি তাও ১০ বছর পেরিয়ে গেল। এখন বুঝি শার্লক হোমস হওয়া কত কষ্টের, কত সাধনার। একটা জটিল রহস্যের জট উন্মোচন করা হিমালয় ডিঙ্গানোর চেয়ে কম নয়।

বায়োজিদ থানা এলাকায় গত মাসের ল্যাংটা ফকির ও তার খাদেম খুন হওয়ার পর থেকে সেই যে ঘুম হারাম হল। এরই মধ্যে আবার সদরঘাট থানাতে ঈদের ১ দিন আগে ঘটে গেল তিন খুন!! পুরো চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ঘুম হারাম।

নানা সূত্র ধরে এগুতে এগুতে টানা পরিশ্রম করতে হয়েছে। রাতে বাসায় না ফিরে, সন্তানদেরকে নানা কথায় ভুলিয়ে নগরে, বন্দরে, গ্রামে, পাহাড়ে, অলি গলিতে হেঁটে, কাদাপানি মাড়িয়ে সবশেষ দেখা মিলল কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যের। আটক হল ৫ জঙ্গি। উদ্ধার হলো ৯টি হ্যান্ড গ্রেনেড, ১টি বিদেশি পিস্তল, ১২০ রাউন্ড তাজা কার্তুজ, বিপুল পরিমাণ বোমা তৈরির সরঞ্জামাদি ও জিহাদি বই, জঙ্গিদের ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ও বাইসাইকেল।

অল্পের জন্য জঙ্গিদের ছোড়া গ্রেনেড হতে বেঁচে গেলাম আমি, আমার টিমের পাঁচ সদস্য এবং বাড়িওয়ালার স্ত্রী। পেলাম নতুন জীবন, শুকরিয়া স্রষ্টার।

আটক জঙ্গিরা স্বীকার করলো উক্ত পাঁচ হত্যাকাণ্ডের কথা। তাদের কথামত উদ্ধার হলো ন্যাংটা ফকির ও তার খাদেম হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দা ও রক্তমাখা কাপড় চোপড় ও বাইসাইকেল। ছিনতাইয়ের সময় (ত্রিপল মার্ডার) ব্যবহৃত মোটরসাইকেল।

শেষ হলো একটি মাসের পরিশ্রম, উন্মেচিত হলো জমাট বাঁধা রহস্য, যে রহস্যের ছিল না কোনো কূল কিনারা ( ক্লু-লেস ক্রাইম)। যে রহস্যের শুরু হয়েছিল বায়োজিদে, সে রহস্য শত মাঠ ঘাট, শহর, বন্দর, পাহাড়, নদী পার হয়ে এসে শেষ হলো কর্ণফুলির খোয়াজনগরে।

স্যার আর্থার কোনান ডয়েলের শার্লক হোমসের অভিযান শেষে ক্লান্তি এসে ভর করত কিনা জানি না তবে আমার মাঝে মাঝে ক্লান্তি আসে। তারপরও সবসময় বলি  “ক্লান্তি আমায় ক্ষমা করো হে প্রভু”।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত