সােশ্যাল মিডিয়া ডেস্ক

২৪ জুন, ২০১৬ ১৮:১২

রবীন্দ্রনাথ যদি সচিবালয়ে আসেন, তাকে কি বলবেন?

রবীন্দ্রনাথ যদি সচিবালয়ে আসেন, তাকে কি বলবেন? কিংবা জীবননান্দ দাশ আসলে?- সচিব ও লেখক রনজিৎ বিশ্বাসকে একদিন এসব প্রশ্ন করেছিলেন কবি টোকন ঠাকুর।

ক্রীড়া ও রম্যলেখক রণজিৎ কুমার বিশ্বাস বৃহস্পতিবার মারা গেছেন। শুক্রবার ফেসবুকে 'রণজিৎ বিশ্বাস, স্মরণেষু' শিরোনামে একটি লেখায় অগ্রজ এই লেখককে নিয়ে নিজের বিভিন্ন স্মৃতির কথা তুলে ধরেছেন টোকন ঠাকুর।

ফেসবুকে কবি টোকন ঠাকুর লিখেন-

রণজিৎ বিশ্বাস যে রসে রম্য গল্প লিখতেন, সাধারণত ওই টোনের রসের লেখক সচরাচর নয়, যে রস স্যার মুজতবা আলীতে মেলে। রস রচনা, কিন্তু নির্মাণ টোন উচুতে। সুতরাং নায়ক-নায়িকা নির্ভর গল্প-উপন্যাস যারা পড়ে আরাম পান, তারা ততটা সিলেটি-বিলেতি আলীতে মজতে পারে না। যারা বা এর বাইরের পাঠক, একটু 'পড়ুয়া ধরনের পাঠক', সেরকম কিছু পাঠক ছিল 'চুপচাপ ধরনের' লেখক রণজিৎ বিশ্বাসের। ২৩ জুন তিনি চলে গেলেন।

রম্যরসের গল্পলেখক। আমি ডাকতাম, রণজিৎ দা। একদিন বললেন, 'কিন্তু জীবন আমাকে দুটো ট্র্যাজেডি দিয়েছে। এক, বাবার মৃত্যু, দুই, আমার উনিশ বছরের ছেলেটির মৃত্যু।'

তার চাকরির চেয়ারে বসে, একদিন অনেক কথা বললেন। আমি বললাম, 'রণজিৎ দা, এই অভাগা-গরিব বাংলায় যেখানে একটা সরকারি চাকরি মানেই বিরাট ব্যাপার, সেখানে সরকারের একজন পূর্ণ দাপ্তরিক সচিব, আপনার একটা সাক্ষরের অনেক ক্ষমতা, আপনার রুমে ঢুকতেও কত পাশ-সিকিউরিটি, এসব কি?'
'দায়িত্ব'

বললাম, 'ধরেন জীবনানন্দ দাশ আপনার রুমে ঢুকে পড়েছেন, আপনার কি দায়িত্ব তখন?'
'বলব, আপনাকে যদি একটা রবীন্দ্র সঙ্গীত শোনানোর ব্যবস্থা করি, আপনি কি বিরক্ত হবেন?'

বললাম, 'রবীন্দ্রনাথ যদি সচিবালয়ে আসেন, তাকে কি বলবেন?'
রণজিৎ দা সিরিয়াসলি বললেন, 'কিন্তু রবীন্দ্রনাথ কি সচিবালয়ে আসবেন? চা ঠাণ্ডা হচ্ছে, আপনার জন্যে কি 'কোশেশ' করতে পারি, বলুন?'

১৯৯৮ বা ৯৯ সালের দিকে, রণজিৎ দা তখন হয়তবা কোন এক জেলার প্রশাসক, তখন তার ষোল বছর বয়সি ছেলেটি একদিন হারিয়ে যায়। টিএসসি'র রেলিং এ বসে, সেদিন সঙ্গে বউদিও ছিলেন, তখন তাদের খুব খারাপ সময়, অনেকটা সময় নিয়ে আমাকে অনেক কথা বলেছিলেন। কীভাবে ছেলেটি হারিয়ে গেল? কীভাবে কয়েক মাস পর এক আস্তানায় ছেলেটিকে পাওয়া গেল, পাওয়া গেল বটে, ছেলে বাবা-মা'কে অস্বীকার করে বসল, ছেলেটিকে 'ব্রেইন ওয়াশ' করা হয়েছিল, ব্যাপারটা আদালতেও গড়াল...
তারপর কত কী করে সেই ছেলে পরবর্তী বছরই মারা যায়।

দেখা হলে, তিনি নিজেই এত বিনয়ী হয়ে কথা বলতেন, এটা তার ব্যক্তি চরিত্র, চাকরি দিয়ে তিনি নিজের চরিত্র নষ্ট করেননি, এটা এই অভাগা-বাংলায় বিরল। একদিন শহীদুল জহিরকে নিয়ে অনেক কথা হল, জহির রণজিৎ দা'র চাকরির সহকর্মী ছিলেন, একত্রে চাকরিতে ঢুকেছিলেন ইত্যাদি

রণজিৎ বিশ্বাস উঁচুমানের রম্যগল্পের লেখক। আজ, এ মুহূর্তে ওই কথাটি আমার আবার মনে পড়ছে, 'কিন্তু আমাকে মুড়ে আছে দু'দুটো ট্র্যাজেডি '

আপনার মন্তব্য

আলোচিত