সোশ্যাল মিডিয়া ডেস্ক

১১ জুলাই, ২০১৬ ১২:৫৮

‘পিসটিভি, জিটিভি, স্টার জলসা থাকা-না থাকায় কিছু যায় আসে না’

বিতর্কের মুখে বিতর্কিত ইসলামী বক্তা জাকির নায়েকের পিস টিভি বন্ধের সিদ্ধান্তের পর এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা এবং এরই সঙ্গে অন্যান্য ভারতীয় চ্যানেল বন্ধের দাবির মুখে এ সম্পর্কে নিজের ব্যক্তিগত বক্তব্য দিয়েছেন ড. কাবেরী গায়েন। কাবেরী গায়েন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক।

কাবেরী গায়েন লিখেন, পিসটিভি থাকা-না-থাকায় আমার কিছুই যায় আসে না। আসলে কোন ধর্মীয় চ্যানেলই থাকা-না-থাকায় কিছু যায় আসে না। সেটা কোন ত্রৈলোক্য স্বামীর হোক বা কোন পাদ্রী উইলিয়ামের হোক। কারণ হলো, ধর্মীয় নেতাদের দেখি খালি নিজের ধর্মের মানুষের মঙ্গল কামনা করেন, কার ধর্ম শ্রেষ্ঠ সেসব নিয়ে লড়াই করেন। জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক মর্মে কোন প্রার্থনা দেখি না। অতএব, আমার উৎসাহ নেই।

পিস টিভি বন্ধের পর অন্যান্য ভারতীয় চ্যানেল বন্ধের দাবি প্রসঙ্গে তিনি ফেসবুকে লিখেন, আমি শুধু একটুখানি আমোদিত যে, জিটিভি-স্টার জলসা বন্ধ করার সুতীব্র দাবিদাররাই পিসটিভি খোলা রাখতে চান মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে। আমার কাছে বরং সেইসব মানুষেরা অধিকতর শ্রদ্ধেয়, যাঁরা সরাসরি ধর্মের কারণেই পিসটিভি জারি রাখায় মত দিয়েছেন; অন্তত তাঁরা হিপোক্রিট নন।

কাবেরী গায়েনের ফেসবুক স্ট্যাটাসের বিস্তারিত-

যাঁরা স্টার জলসা, জিটিভি, ডোরেমন, এমনকি হিন্দি ভাষায় প্রচলিত যে কোন চ্যানেলকে বন্ধ করার জন্য বড় বড় প্রবন্ধ লিখেছেন, সেমিনার করেছেন, এমনকি অভিজিত রায়-রা খুন হলে তাদের লেখায় অন্যদের অনুভূতিতে আঘাত লাগে কি না সেটি নিয়ে বিস্তর ভেবে ইনিয়ে বিনিয়ে তাদের হত্যাকাণ্ডের জন্য তাদের লেখাকেই প্রকারান্তরে দায়ি করেছেন, সেইসব প্রাবন্ধিকরা আজ পিসটিভি বন্ধে সমালোচনা করছেন মত প্রকাশের স্বাধীনতায় আঘাত বলে।

আমি কোনদিন পিসটিভি দেখিনি। অন্য কোন ধর্মীয় চ্যানেলের, থেকে থাকলে, নামও জানি না।

পিসটিভি থাকা-না-থাকায় আমার কিছুই যায় আসে না। আসলে কোন ধর্মীয় চ্যানেলই থাকা-না-থাকায় কিছু যায় আসে না। সেটা কোন ত্রৈলোক্য স্বামীর হোক বা কোন পাদ্রী উইলিয়ামের হোক। কারণ হলো, ধর্মীয় নেতাদের দেখি খালি নিজের ধর্মের মানুষের মঙ্গল কামনা করেন, কার ধর্ম শ্রেষ্ঠ সেসব নিয়ে লড়াই করেন। জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক মর্মে কোন প্রার্থনা দেখি না। অতএব, আমার উৎসাহ নেই।

আমি বরং স্টার জলসা, জি-টিভি অনেক দেখেছি। বাংলাদেশের সিনেমার মতোই, কোটি দুর্বলতাসহই নানা ষড়যন্ত্র, বহু কাঠখড় পুড়িয়ে ভালোর জয় আর মন্দের পরাজয়- মোটাদাগে এই হলো এসব সিরিয়ালের বিষয়বস্তু। বিশেষ করে নারীরা বহু কূটনামি, ষড়যন্ত্র আর নির্যাতন পার হয়ে সতীত্ব আর পুরুষতান্ত্রিক মানদণ্ডে ভালো নারীর তকমা আদায় করে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হন। একুশ শতকের এই সময়েও, এতো গাঁজাখুরি প্লট আর দুর্বল নির্মাণ যে এসব দেখায় স্নায়ুর উপর চাপ পড়ে। কিন্তু অসতের জয়, বা সন্ত্রাসকে মহিমান্বিত করা, বা অন্যের ধর্মকে কালিমালিপ্ত করা- এসব হয় না। কেউ যদি এসব চ্যানেল বন্ধ করতে চান, বা বন্ধ করে দেয়া হয়, আমার কিছুই আসে যায় না। তবে কূটনামির অভিযোগে বা নারীকে হীন করে দেখানোর অভিযোগে এসব চ্যানেল বন্ধ করতে হলে আমাদের সাহিত্য-সংস্কৃতির বেশিরভাগ অংশই বাদ দিতে হবে, সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত।

পিসটিভি থাকা-না-থাকায় আমার কিছু যায় আসে না।
জিটিভি-স্টার জলসা থাকা-না-থাকায় কিছু যায় আসে না।

এসব চ্যানেলের কোনটিই আমার দেশের চ্যানেল না।

আমি শুধু একটুখানি আমোদিত যে, জিটিভি-স্টার জলসা বন্ধ করার সুতীব্র দাবিদাররাই পিসটিভি খোলা রাখতে চান মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে।

আমার কাছে বরং সেইসব মানুষেরা অধিকতর শ্রদ্ধেয়, যাঁরা সরাসরি ধর্মের কারণেই পিসটিভি জারি রাখায় মত দিয়েছেন; অন্তত তাঁরা হিপোক্রিট নন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত