রাজেশ পাল

২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:২৯

‘রিভেঞ্জ পর্ণোগ্রাফি’ এক মহামারি : এর অবসান হোক

“রিভেঞ্জ পর্ণোগ্রাফি” বা প্রতিহিংসামূলক যৌনছবি বর্তমানে একটি মারাত্মক মহামারির নাম। প্রেমিক প্রেমিকার জুটির মধ্যে ভাঙন ধরলেই এক শ্রেণীর কুরুচিপূর্ণ মানসিকতার লোক নিজেদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিওগুলো অবলীলায় ছড়িয়ে দিচ্ছে অনলাইনে। আর তা দেখে আদিম পরিতৃপ্তির ঢেকুর তুলে অনেকেই।

যেমনটি হচ্ছে সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সারাদিন ৮ মিনিটের ভিডিও নিয়ে ফেসবুকের ওয়ালে-ওয়ালে।

চায়না মোবাইল শুধু তৃতীয় শ্রেণীর কিছু “মুরাদ টাকলা” ফেসবুকারই উপহার দেয়নি। বাই প্রোডাক্ট হিসেবে উপহার দিয়েছে এই রিভেঞ্জ পর্ণ। যতটুকু মনে পড়ে আমাদের ছাত্রজীবনে “একটেল সুমন” নামের এক পার্ভাটের মাধ্যমেই এদেশে প্রথম জয়জয়কার শুরু হয় এই অসুস্থ ধারার। এখন তা পরিণত হয়েছে এক দুরারোগ্য ব্যাধিতে।

বাংলাদেশে “সিনেমাটোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন” অনুযায়ী পর্ণছবি তৈরি বা বাজারজাতকরণ শাস্তিযোগ্য অপরাধ হলেও তার প্রয়োগ আছে সামান্যই। প্রকাশ্য দিবালোকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখের সামনেই রাস্তার উপরে বিক্রি হচ্ছে উত্তেজক ছবিগুলো। আর এসব দোকানে রীতিমতো ভিড় করে এগুলো কিনছে উঠতি বয়সী কিশোর যুবকেরা। কারো কোন বিকার নেই সেদিকে, দেখেও দেখার ভান করে চলেছে সবাই।

আর ইন্টারনেটের সুবাদে এখন আর সিডি কেনার প্রয়োজনই হয়না। ১০/২০ টাকার এমবি কিনে এসবের পেছনে ওড়ানো হচ্ছে ‘গৌরীসেনের টাকা’।

কদিন আগে আমার মোবাইলের ডিসপ্লে ঠিক করাতে গিয়ে নিউমার্কেটের একটি দোকানে কিছুক্ষণ বসেছিলাম। এর মধ্যেই দুটি কিশোর ছেলে এসে দোকানদারকে জিজ্ঞেস করলো হিডেন ক্যামেরা বা রিয়েল রেইপ সিন আছে কিনা। আছে বলতেই পেনড্রাইভ ভরে সেসব নিয়ে গেলো মাত্র ৪০ টাকার বিনিময়ে!!! সবচেয়ে বেশী অবাক হয়েছি এবার গ্রামের বাড়িতে গিয়ে। যে গ্রামের ছেলেরা ফুটবল আর হাডুডু নিয়ে ব্যস্ত থাকতে দেখেছি আমাদের শৈশবে, তাদের হাতেহাতে চায়না স্মার্টফোন আর দলবেঁধে ঝোপঝাড়ে লুকিয়ে দেখে চলেছে এইসব “মজার” জিনিস। তারা হয়তো “মজা” পাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু জানতেও পারছে না কতজনের বুকফাটা কান্না আর দীর্ঘশ্বাস মিশে আছে সেই "মজার" জিনিসগুলোতে।

কিছুদিন আগে স্বস্তিকার একটি আর্ট ফিল্মে দেখেছি এই ভিডিওগুলোর কারণে কি ভয়াবহ পরিণতি নেমে এসেছিল এক অভিনেত্রীর জীবনে। সবাই পারেনা প্রভার মতো ঘুরে দাড়াতে অসীম সাহসে, বেশীরভাগই হারিয়ে যান বিস্মৃতির অতলে। কারণ আমাদের পুরুষতান্ত্রিক নোংরা মানসিকতা নির্ঝরদের হিরো বানালেও, তিন্নিদের বেশ্যা হিসেবেই গণ্য করে থাকে।

ভারতে পর্ণোগ্রাফিক সাইট নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব ওঠার পরে সেই দাবীটি এখানেও উঠেছিল। কিন্তু এক শ্রেণীর সুশীল সমাজ শুরু করে দিয়েছিলেন চিৎকার , কারণ তাদের মতে এতে নাকি মানুষের অধিকার (!) ক্ষুণ্ণ হয়!! কিন্তু বুঝিনা পর্ণোগ্রাফি কি অন্ন , বস্ত্র , বাসস্থানের মতোই কোন অত্যাবশ্যকীয় উপাদান যে তা নিষিদ্ধ করলে মানুষের মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়ে যাবে?

অদ্য ওয়ালে ওয়ালে যারা ৮ মিনিট, ৮ মিনিট করে উল্লাস প্রকাশ করে চলেছেন, তারা কি একবারও ভেবে দেখেছেন, কী ভয়াবহ ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করে আছে মেয়েটির জন্য। ছেলেটি তো আপনাদের কাছে হিরোই হবে তার “পারফরমেন্স” এর জন্য। যেমনটা হয়েছিল নির্ঝর বা সুমনরা। এমনটা তো আপনার বোন বা ভাবীর ক্ষেত্রেও ঘটতে পারে নাকি?

অবিলম্বে দেশের সকল পর্ণোগ্রাফিক সাইট বন্ধ করা হউক। মহামারির হোক অবসান!

  • রাজেশ পাল : আইনজীবী।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত