সাব্বির খান

২৪ মার্চ, ২০১৭ ২০:০৫

জঙ্গিরা সোয়াট চায় কেন?

সিলেট মহানগরের দক্ষিণ সুরমা থানার শিববাড়ি এলাকায় ‘আতিয়া মহল’ একটি পাঁচতলা ভবন। জঙ্গিরা নীচ তলা দখল করে সেখানে অবস্থান নিয়েছে। উপরের যে বাকি চারতলা আছে, সেখানকার বসবাসকারীরা বাড়ি থেকে বের হতে পারছে না বা পুলিশ তাঁদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে ব্যর্থ হয়েছে। যদিও অত্র এলাকার আশেপাশের সব বাড়ির বসবাসকারীদের পুলিশ নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নিয়েছে।

জঙ্গিরা যদি প্রচণ্ড প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চায়, তাহলে তাঁদের উপর দিকের কোন তলায় চলে গিয়ে অবস্থান নেয়ার কথা, যেখান থেকে সোয়াটের সাথে যুদ্ধ করাটা তাঁদের জন্য সহজ হতো এবং তা তাঁরা খুব সহজেই পারে। কিন্তু তাঁরা নিচ তলায় থাকার সিদ্ধান্তই নিয়েছে। সোয়াটের মত একটা চৌকস বাহিনীর জন্য নীচ তলার জঙ্গিদের হত্যা করা উপর তলার চেয়ে অনেক বেশি সহজ। কিন্তু তা জেনেও কেন তাঁরা নীচ তলায় অবস্থান নিলো?

তাঁরা সংখ্যায় কতজন, তা নিরাপত্তাবাহিনী এখনো জানতে পারেনি। তাঁরা কি প্রতি তলার জন্য যথেষ্ট সংখ্যক আছে? অথবা সংখ্যায় খুবই কম সংখ্যক যারা নীচ তলায় আছে?

তাঁরা পুলিশকে পাত্তা না দিয়ে সোয়াট বাহিনীকে আসতে বলেছে। তাঁদের হাতে সময় খুব বেশি নাই বলে জানিয়েছে। আমরা জানি যে, এপর্যন্ত যত জঙ্গি মারা গিয়েছে, তাঁরা সবাই-ই সোয়াট বাহিনীর হাতেই মরেছে। সেক্ষেত্রে সোয়াট সদস্যদের হত্যা করার মাধ্যমেই তাঁরা প্রতিশোধ নিতে চাইবে, এটাই স্বাভাবিক। এর আগে র্যাাবের ক্ষেত্রে তাঁরা যেটা করেছি গত সপ্তাহে, সেটাও ছিল প্রতিশোধের অংশবিশেষ।

গত সপ্তাহে চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায় যে দুইটি জঙ্গি আস্তানায় হানা দিয়ে তাঁদের হত্যা করেছিল সোয়াট, দুই জায়গায়ই প্রচুর পরিমাণে বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছিল, যা দিয়ে শুধু দালান নয়, পুরো একটা এলাকা কয়েকবার ধ্বংস করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট।

যেহেতু তারা নীচ তলায় অবস্থান নিয়েছে, সেহেতু...

১) তাঁরা যদি খুব শক্তিশালি বিস্ফোরকের (বোমা) বিস্ফোরণ ঘটায়, তাহলে পাঁচতলা দালানটি ভেঙ্গে পড়বে।

২) পুরো পাঁচতলার অবস্থানরত সব বাসিন্দা মারা যাবে। এতো বেশি সংখ্যার মানুষ এর আগে কোন জঙ্গিহামলায় বাংলাদেশে নিহত হওয়ার নজির নাই।

৩) বিস্ফোরণ ঠিক তখনই ঘটবে যখন সোয়াট দালানটির খুব কাছাকাছি কোন জায়গায় অবস্থান নেবে। এমন কি হেলিকপ্টারের মাধ্যমে সোয়াটের কিছু সদস্য ছাদের উপরে অবস্থান নিলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। সেক্ষেত্রে সোয়াটের কিছু সদস্যও মারা পড়তে পারে, যা জঙ্গিদের উদ্দেশ্য।

৪) পাঁচতলায় অবস্থানরত বাসিন্দাদের জঙ্গিরা সরাসরি জিম্মি করেছে বলে এখনো জানা যায়নি। সেক্ষেত্রে তাঁদের মৃত্যুর জন্য সরকারকে দায়ী করা হবে এবং এর রাজনৈতিক সদ্ব্যবহার বিএনপি-জামায়াত করবে। আপামর জনগণকে সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলার জন্য 'টকার' এবং একশ্রেণীর সুশীল সমাজ তো মুখিয়েই আছে।

৫) তাঁদের হাতে বেশি সময় নাই বলে পুলিশকে তাড়াতাড়ি সোয়াটকে আসতে বলার আর একটা মাজেজা হতে পারে, পাঁচতলা বাড়ীর নীচতলায় খুব শক্তিশালি একটা বোমা স্থাপন করা হয়ে থাকতে পারে, যেখানে জঙ্গিরা অবস্থান নিয়েছে। বোমাটি বাইরে থেকেও বিস্ফোরণ ঘটানো হয়ত সম্ভব। সে চিন্তাও মাথায় রাখতে হবে। কারণ বাইরে উৎসুক জনতার যে ভিড় দেখা যাচ্ছে, সেই ভিড়ের মধ্যে একজন কেউ রিমোট নিয়ে অবস্থান নিলে তাঁকে সনাক্ত করা খুব সহজ হবে না।

৬) বাংলাদেশে 'সোয়াট'-এর মাত্র একটা টিম আছে। সেটাকেই বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়। যেহেতু জঙ্গিরা খুব তাড়াহুড়া করে সোয়াটকে ডেকে সিলেটে এনেছে, আমি অবাক হবো না যদি সিলেটের ঘটনা শেষ হওয়ার আগেই ঢাকায় বা দেশের অন্যকোন জায়গায় যদি সিলেটের মত একই ঘটনা ঘটে। সেক্ষেত্রে "আর্মি" নামানো ছাড়া কোন উপায় সরকারের হয়ত থাকবে না। কিন্তু জঙ্গিরা আর্মিকে কেন নামাতে চাইবে? তাঁরা কেন একটা সামরিক বাহিনীর মুখোমুখি হতে চাইবে? যদিও পাকিস্তানে এটা অনেক আগেই ঘটেছে।

  • সাব্বির খান: কলাম লেখক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত