সোশ্যাল মিডিয়া ডেস্ক

০৩ জুন, ২০১৯ ২০:৫১

আড়ংয়ে অভিযান নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা

আড়ংয়ের রাজধানীর উত্তরা শাখায় সোমবার (৩ জুন) অভিযান চালায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। অভিযানে ৭০০ টাকার পাঞ্জাবি ১ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি করার দায়ে আড়ংয়ের ওই শোরুমকে সাড়ে চার লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটি সাময়িক বন্ধ করা হয়।

ঈদের আগ মূহূর্তে আড়ংয়ে এই অভিযান নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। অনেকেই এ ধরণের অভিযান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

এ প্রসঙ্গে সিনিয়র সাংবাদিক হাসান মামুন ফেসবুকে লিখেন-

আর যা-ই হোক, আড়ং আমাদের একটা ব্রান্ড। ব্যক্তিগতভাবে এর জিনিসপত্র কিনে প্রতারিত বোধ করেছি কমই। দামের ব্যাপারে বলব, আমরা তো বেশি দাম দিতে অভ্যস্ত- বোতলজাত পানি কেনার ক্ষেত্রেও। এর মধ্যে আড়ং-এর সাধারণ পণ্যের দাম চলমান বাজারে অস্বাভাবিক ঠেকেছে কমই। যে একটি ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে আজ ব্যবস্থা নেওয়া হলো, সেটি কোনো এক ভোক্তার সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের করণিক ভুলও দায়ী থাকতে পারে। ঈদের আগ দিয়ে পণ্যবাজার যখন চাঙা, ঠিক তখন এমন একটি ঘটনা আড়ংয়ের জন্য দুর্ভাগ্যজনক।

ভোক্তার অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা অবশ্য নেওয়াই প্রয়োজন আর সেটা নিরপেক্ষভাবে, কারও মুখের দিকে না তাকিয়ে। এক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বী বিজনেস হাউসগুলো অনেক সময় নাকি অভিযান পরিচালনাকারীদের 'মিসগাইড' করে। আড়ংয়ের ক্ষেত্রেও তা ঘটে থাকতে পারে, এমনটা চট করে বলা অবশ্য কঠিন। তবে মনে হয়, বিচ্ছিন্ন-বিক্ষিপ্তভাবে কিছু অভিযান পরিচালনা করে মানুষকে চমকে দেওয়ার বদলে এক্ষেত্রে একটা সুসমন্বিত কার্যক্রম হাতে নিলেই ভালো হতো। 'প্রতিযোগিতা কমিশন' বলে একটি প্রতিষ্ঠান কিন্তু রয়েছে আমাদের। ব্যবসায় মান ও দামদরের বিষয় খতিয়ে দেখায় তাদের একটা বড় ভূমিকা থাকতে পারে বা থাকা উচিত।

প্রসঙ্গত বলি, এবারের ঈদবাজারে বিপুল চাহিদাসম্পন্ন পণ্য পাঞ্জাবির মান ও দামদর নিয়ে একটা অরাজকতা চলছে বলে আমার পর্যবেক্ষণ। অনলাইনে 'স্মল স্কেলে' বাটপারিও চলছে অনেক ক্ষেত্রে। পণ্যের মান ও দামদর নিয়ে দেশে বড়রকম সমস্যা থাকায়, সংগে ঘুরেও আসা যায় বলে বহু লোক এ মুহূর্তে অবস্থান করছে কোলকাতায়। হোটেলগুলো বাংলাদেশি দিয়ে ঠাসা আর এ কারণে ওরাও নাকি রুম ভাড়া নিচ্ছে বেশি। প্রাইসিং ব্যাপারটা সত্যিই গোলমেলে। সুশাসন না থাকলে এটা ভোক্তার মাথায় চড়ে বসে সবখানেই। আড়ং প্রসঙ্গে ফিরে এসে বলব, তারা কর ছাড় সুবিধাও বোধকরি উপভোগ করে আর গ্রামীণ নারীদের কাজে লাগিয়ে পণ্য উঠিয়ে আনে স্টোরে। সেখানে সরকার ও ক্ষমতাহীন নারীদের ঠকানো হচ্ছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখা যেতে পারে। এ মুহূর্তে আড়ংকে ব্যবসা করতে দিয়ে চাইলে পরেও কাজটা করা যাবে। আদৌ করবেন কী?

লেখক ও সাংবাদিক আরিফ জেবতিক ফেসবুকে লিখেছেন-

শুরুতেই বলে রাখি, আমি বা আমার চৌদ্দগুষ্ঠির কেউ আড়ংয়ের সাথে সম্পৃক্ত নয়, সংযুক্ত নয়। আমি আড়ংয়ের প্রোডাক্ট ব্যবহার করি না এবং তাদের ফ্যান নই। আরো বলি যে, এই লেখাটা পড়ার পরে আপনারা হতাশ বিক্ষুব্দ এবং বিরক্ত হবেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে আমাদেরকে ফ্যাক্টস গুলোকে ফ্যাক্টস হিসেবেই ডিল করতে হবে। সো, এই দুই ডিসক্লেইমার দেয়ার পরে এখন বলি যে-

আড়ং এর ঘটনাটা আমার মাথায় ঢুকল না। তাঁদের একটা প্রোডাক্টের দাম ২৫ তারিখে ছিল ৭৩০ টাকা, ৩১ তারিখে হয়েছে ১৩৬০ টাকা। এই 'অপরাধ' এ তাঁদেরকে জরিমানা করা হয়েছে এবং স্টোরও নাকি ২৪ ঘন্টার জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

মানে দুনিয়ায় ব্যবসা বানিজ্য কীভাবে চলে, সে বিষয়ে আমাদের জ্ঞানের ঘাটতি সিরিয়াস পর্যায়ের আছে।
সরকার দেখবে যে ক্রেতারা যে প্রোডাক্ট কিনছে সেটা ভেজালমুক্ত কী না, যে মানের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা হয়েছে কী না, প্রোডাক্ট বদল করা কিংবা রিফান্ড নেয়ার অধিকার রক্ষিত হয়েছে কী না।

কিন্তু একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তাঁর পন্যের দাম কতো নির্ধারন করবে, সেখানে সরকার হস্তক্ষেপ করে কোন আইনে সেটা আমি সত্যিই বুঝিনি। জীবন রক্ষাকারী পণ্য যেমন খাবার, অষুধ এসব ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রন ও হস্তক্ষেপ হতে পারে কিন্তু বিলাস দ্রব্যের বেলায় এই হস্তক্ষেপ কেমনে হয়?

চাহিদা বাড়লে জিনিসের দাম বাড়াবে, সেটা রিটেইল সেলসের খুবই বেসিক বিষয়। আবার চাহিদা না থাকলে জিনিসের দাম কমিয়ে স্টক খালি করবে, সেটাও স্বাভাবিক বিষয়। অনেক সময় একটার ক্ষতি অন্যটা দিয়ে পোষানো হয়, এডজাস্ট করা হয়; কোনটাতে প্রফিট ম্যাক্সিমাইজেশন করা হয়। এগুলো কিন্তু দুনিয়া ব্যাপী খুব স্বাভাবিক সেলস এন্ড মার্কেটিং বিষয়।

এখন ৭শ টাকার পণ্য ১৪শ টাকায় পরের সপ্তাহে বিক্রি করায় যদি জরিমানা দিতে হয়, তাহলে যদি ১৪শ টাকার পণ্য মূল্যছাড় করে ৭শ টাকায় বিক্রি করলে কি সরকারের তরফ থেকে তাঁদেরকে ভর্তুকিও দেয়া হবে?

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এর আন্তরিকতা নিয়ে আমার বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। উনাদের উদ্যম ও উদ্যোগ যাতে কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেটা আমার একান্তই প্রত্যাশা। আমি জানি না উনাদের দলের মধ্যে বিজনেস গ্রাজুয়েট কেউ আছেন নাকি সবাই অন্যান্য ডিসিপ্লিনের। যদি বিজনেস গ্রাজুয়েট কেউ না থাকেন, তাহলে বিজনেস গ্রাজুয়েট কাউকে অন্তর্ভূক্ত করলে ভালো হবে। ব্যবসা বানিজ্যের কিছু স্বাভাবিক বিষয় তখন তাঁরা ইনসাইট দিতে পারবেন।

কারন ভালো উদ্যোগ অনেক সময় অতিরিক্ত উৎসাহে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত