আজ বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

Advertise

যখনি জাগিবে তুমি

মুহম্মদ জাফর ইকবাল  

বাংলা নববর্ষ উদযাপন নিয়ে আমার সবসময়ই এক ধরনের অহংকার ছিল। আমি সুযোগ পেলেই সবাইকে বলে এসেছি, ইংরেজি বছরের শেষে যখন নতুন বছরের শুরু হয় তখন সেটা উদযাপন করা নিয়ে যেটা করা হয় সেটা রীতিমতো তাণ্ডব। সেই তুলনায় বাংলা নববর্ষ হচ্ছে খুবই কোমল এবং মধুর একটি ব্যাপার। মনে আছে, ৩১ ডিসেম্বর রাতে ঢাকা শহরেই আমি ইংরেজি নববর্ষের একটিা তাণ্ডবের মাঝখানে পড়ে রীতিমতো নাস্তানাবুদ হয়েছিলাম।



বাংলা নববর্ষের শুরুটা সম্পূর্ণ অন্যরকম - খুব ভোরে কোথাও বসে মধুর কিছু গান শুনতে শুনতে বছরটিকে বরণ করে নেওয়া। এর মাঝে যে আঘাত আসেনি তা নয়, ১৪ বছর আগে রমনার বটমূলে বোমা ফাটিয়ে বর্ষবরণ করতে আসা তরুণ-তরুণীদের হত্যা করা হয়েছিল কিন্তু তাতে বাঙালিদের ভয় দেখানো যায়নি। বরং দ্বিগুণ উৎসাহে এ দেশের মানুষ বাংলা নববর্ষ পালন করতে শুরু করেছে। প্রত্যেক বছর উৎসবটি পালন করা হচ্ছে আগের বছর থেকে আরও বেশি উৎসাহ নিয়ে। সত্যিকারের উৎসব বলতে যা বোঝায় বাংলা নববর্ষ হচ্ছে তার সবচেয়ে সুন্দর উদাহরণ। কোমল ও মধুর একটা উৎসব।



এ বছর কথাটি লিখতে গিয়ে এবার আমার হাত কেঁপে উঠল। নববর্ষের দিনই আমি খবরে দেখেছি, কিছু মানুষ মেয়েদের ওপর হামলা করে পুরো উৎসবের আনন্দটিকে লজ্জা-ক্ষোভ আর অপমানের গ্লানি স্পর্শ করিয়েছে। আমি খুব দুর্বল প্রকৃতির মানুষ, যখন এ ধরনের খবর দেখি, তাড়াতাড়ি চোখ ফিরিয়ে নিই। যেন চোখ ফিরিয়ে নিলেই এই খবরগুলো অদৃশ্য হয়ে যাবে। খবরগুলো অদৃশ্য হয়নি। দেশের ছেলেমেয়েরা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। আমার কাছে জানতে চেয়েছে কেমন করে এটি সম্ভব?



আমিও জানতে চাই কেমন করে এটি সম্ভব?




আমরা সবাই জানি, আমাদের আশপাশে অসুস্থ বিকারগ্রস্ত কিছু মানুষ থাকে। এরা ভিড়ের মাঝে সুযোগ বুঝে মেয়েদের শরীরে হাত দেয়। প্রায় প্রতি বছরই এ রকম একটি-দুটি বিকারগ্রস্ত মানুষের সঙ্গে আমার দেখা হয়। বইমেলায় আমি যখন বসে বসে অটোগ্রাফ দিই, তখন মাঝে মধ্যেই আশপাশে ছেলেমেয়েদের ভিড় জমে ওঠে এবং প্রতি বছরই সেখানে হঠাৎ করে একটি মেয়ে চিৎকার করে কোনো একজন মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, পায়ের জুতো খুলে মানুষটির মুখে মেরে বসতে দ্বিধা করে না - সেই মানুষগুলোর চেহারা দেখে বোঝার উপায় নেই তাদের ভেতরে এ রকম কদর্য একটা প্রাণী লুকিয়ে আছে। প্রায় সময়ই তারা কম বয়সী সুদর্শন তরুণ।



এই মানুষগুলো কিন্তু শুধু ভিড়ের সুযোগ নিয়ে গোপনে একটি মেয়ের শরীরে হাত দেওয়ার চেষ্টা করে। তারা ভীরু এবং কাপুরুষ - প্রকাশ্যে কিছু করার তাদের সাহস নেই। তাদেরকে যখন পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়, তারা কোনো প্রতিবাদ করে না, মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। এরা সমাজের এক ধরনের জঞ্জাল - শুধু আমাদের দেশে নয়, পৃথিবীর সব দেশে সব কালে এরা থাকে। এরা থাকবে।



এবার নববর্ষে যারা মেয়েদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে তাদের সঙ্গে কিন্তু এই ভীরু-কাপুরুষ-বিকারগ্রস্ত মানুষের একটা বড় পার্থক্য আছে - এই মানুষগুলো কিন্তু ভিড়ের মাঝে লুকিয়ে আসেনি। তারা এসেছে দলবেঁধে, প্রকাশ্যে সবার চোখের সামনে। এ দেশে পকেটমার ধরা পড়লে গণপিটুনিতে তার একেবারে মরে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। নববর্ষে যারা মেয়েদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে এসেছে, কোনো একটা বিস্ময়কর কারণে তারা জানে তাদের কোনো ভয় নেই, কেউ তাদের ধরবে না। একেবারে সবার সামনে তারা যা খুশি করতে পারবে, কেউ তাদের কিছু করার সাহস পাবে না। পুলিশ কিছু করবে না, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর তাদের বাধা দিতে আসবেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরও তাদের কাজকর্মের নিন্দা করবেন না। মহাশক্তিধর এই তরুণরা কারা? তাদের কী রাজনৈতিক পরিচয় আছে?



থাকলেও আমি একটু অবাক হবো না। বর্ষবরণের দিন অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনাটি ঘটিয়েছে ছাত্রলীগের নেতা। খবরের কাগজে পড়েছি, তাকে গণপিটুনি দেওয়া হয়েছে। তারপর পুলিশের হাতে দেওয়া হয়েছে কিনা জানি না। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে নাকি ছেড়ে দিয়েছে, সেটাও আমরা জানি না। একই দিনে আদিবাসী একটি মেয়েকে নিপীড়ন করার জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন-দু'জন নয়, আটজন ছাত্রলীগের কর্মী (অথবা নেতাকে) বহিষ্কার করা হয়েছে।



সেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাস্তি কিন্তু তারা যে অপরাধটি করেছে সেটি দেশের আইনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অপরাধ। আমার জানার খুবই কৌতূহল, পুলিশ তাদের গ্রেফতার করেছে কিনা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা নিয়ে সারাদেশে হৈচৈ শুরু হয়েছে কিন্তু আমি কিছুতেই বুঝতে পারি না, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনাটি নিয়ে কোনো প্রতিবাদ কেন নেই? ওই ঘটনাগুলো কি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা থেকে কোনো অংশে কম বীভৎস?



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বর্ষবরণের দিনের ঘটনাটি যারা ঘটিয়েছে নিশ্চিতভাবে তারা সবাই একটি দলের। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাতে এসে পুরোপুরি অপরিচিত কিছু তরুণ একে অন্যের সঙ্গে প্রথমবার পরিচিত হয়ে আলাপ-আলোচনা করে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নিয়ে আক্রমণ শুরু করেনি। আমাদের সবার প্রশ্ন, এই দলটি কাদের? নৈতিকতার ধারক-বাহক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য থেকে শুরু করে আইন-শৃঙ্খলার ধারক-বাহক প্রক্টর এবং পুলিশ বাহিনী এত আশ্চর্য রকম নীরব কেন?



ছোটখাটো ঘটনায় সোচ্চার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ এখন হঠাৎ করে এত চুপচাপ কেন? বিষয়টি কি তাদের কাছে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে না, নাকি আমাদের তার থেকেও গুরুতর কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হবে যে, সামাজিক মাধ্যমের অভিযোগে সত্যতা আছে। অর্থাৎ ছাত্রলীগের ছেলেরাই এই ঘটনাটি ঘটিয়েছে? পুলিশ বাহিনীর হাতে যে সিসি ক্যামেরায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফুটেজ আছে, সেগুলো কেন প্রকাশ করে সব সন্দেহ মিটিয়ে দেওয়া হচ্ছে না?



সেগুলো প্রকাশ করা হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীর কেউ না কেউ নিশ্চয়ই তাদের চিনতে পারবে। তার পরিচয় জানতে পারবে। আমরা চাই তাদের পরিচয় প্রকাশ করা হোক, তাদের বন্ধু-বান্ধব জানুক যে তাদের পরিচিত ছেলেটি আসলে একটি দানব। তার শিক্ষকরা জানুন যে, তারা তার ছাত্রটিকে মানুষ করতে পারেননি। তার ছোট ভাইবোন জানুক তার বড় ভাই একজন অমানুষ। তার বাবা-মা জানুন, তারা একটি পশু জন্ম দিয়েছেন। যদি তাদের রাজনৈতিক পরিচয় থাকে তাহলে তাদের নেতারা জানুন, তাদের সমস্ত অর্জন কারা চোখের পলকে ধুলায় মিশিয়ে দিচ্ছে।




যখন থেকে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান পালন করা শুরু হয়েছে, প্রায় ঠিক সেই সময় থেকেই কিছু মানুষ এটাকে ধর্মবিরোধী একটা কাজ বলে প্রচার করতে শুরু করেছে। পৃথিবীর অসংখ্য মানুষের নিজস্ব কালচারে নিজেদের ক্যালেন্ডার আছে। সেই ক্যালেন্ডারের হয়তো এখন আর সে রকম গুরুত্ব নেই। তারপরও সবাই খুব আনন্দোল্লাস করে তার নববর্ষ উদযাপন করে। সেই নববর্ষ উদযাপন নিয়ে কখনও কারও সমালোচনা করতে দেখা যায়নি। কিন্তু আমাদের বাংলাদেশের মানুষ যখন আমাদের বাংলা বছরের বর্ষবরণ করতে যাচ্ছি, তখন হঠাৎ করে সেটা কেমন করে ধর্মবিরোধী কাজ হয়ে গেল, সেটা বোঝার কোনো উপায় নেই। ১৪ বছর আগে বোমা মেরেও মানুষকে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান পালন করা থেকে সরিয়ে আনা যায়নি কিন্তু আমার মনে হয়, এবারের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় অনেক মানুষই এই উৎসব পালনের জন্য নিজের স্ত্রী বা কন্যাকে নিয়ে বের হওয়ার আগে একবার চিন্তা করবেন।



কিন্তু আমরা তো সেটা কখনোই চাই না। এ দেশের সবচেয়ে বড় সর্বজনীন উৎসবটি সবাই মিলে উদযাপন করা থেকে যদি পিছিয়ে আসে, তাহলে কেমন করে হবে? তাই যেভাবেই হোক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ঘটনা যারা ঘটিয়েছে তাদেরকে ধরতে হবে, শাস্তি দিতেই হবে। ভবিষ্যতে আর কখনও এ রকম ঘটনা ঘটবে না - এ ধরনের একটা বিশ্বাস তৈরি করতেই হবে। পুলিশের কাছে তথ্যের অভাব নেই, তারা যদি কাউকে ধরতে না পারে, বুঝতে হবে ইচ্ছা করে তারা এই মানুষগুলোকে ছেড়ে দিচ্ছে। এত কষ্ট করে ধীরে ধীরে আমরা যখন আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতির একটা ক্ষেত্র তৈরি করছি, তখন সেটাকে লণ্ডভণ্ড করে দেওয়াটি আমাদের কারও পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। কেউ মেনে নেবে না।




বর্ষবরণের দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় এই অসভ্য বর্বর ঘটনাটির খুঁটিনাটি খবর ধীরে ধীরে আমরা সবাই জানতে শুরু করেছি। দলবেঁধে অনেক তরুণ যখন কিছু মেয়ের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে, তখন বিশাল সংখ্যক মানুষ দর্শক হিসেবে সেটি দেখেছে - সাহায্যের জন্য এগিয়ে যায়নি। আমরা এটি বারবার ঘটতে দেখেছি। অভিজিৎকে হত্যা করার সময়ও একই ব্যাপার ঘটেছে। তার স্ত্রী সাহায্যের জন্য চিৎকার করছেন, অনেকেই ক্যামেরায় সেই ছবিটি তুলেছেন কিন্তু সাহায্যের জন্য এগিয়ে যাননি। বিষয়টা হয়তো নানাভাবে ব্যাখ্যা করা সম্ভব এবং কেন এটি ঘটেছে কিংবা কেন এটাই স্বাভাবিক সে রকম একটা যুক্তিতর্কও দাঁড় করানো সম্ভব কিন্তু তারপরও এটা গ্রহণ করা সম্ভব নয়।



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় ছাত্র ইউনিয়নের বেশ কিছু তরুণ সাহায্যের জন্য এগিয়ে গেছে এবং তাদের কেউ কেউ সাহায্য করতে গিয়ে আহতও হয়েছে। এই মুহূর্তে সেই কথাটি চিন্তা করে আমরা এক ধরনের শান্তি পাওয়ার চেষ্টা করছি যে, সবাই নীরব দর্শক হয়ে তাদের দায়িত্ব শেষ করে ফেলেনি। এ দেশের তরুণদের নিয়ে আমি সবসময়ই স্বপ্ন দেখি। আমি বিশ্বাস করি, আমরা যদি আমাদের দেশের তরুণদের ওপর বিশ্বাস রাখি, তাদেরকে দায়িত্ব দিই, তাহলে নিশ্চয়ই তারা এগিয়ে আসবে।



গণজাগরণ মঞ্চের প্রথম দিনগুলোর কথা মনে আছে? অসংখ্য ছেলেমেয়ে, নারী-পুরুষ পাশাপাশি শাহবাগে রাত কাটিয়েছে, কখনও কারও কাছ থেকে একটি অভিযোগ শুনতে পাইনি। ১৯৭১ সালে যখন পাকিস্তানি মিলিটারি হামলা করেছিল, লাখ লাখ মানুষ প্রাণের ভয়ে দেশের ভেতরে ছুটে বেড়িয়েছে। তখনও কিন্তু একেবারে সাধারণ মানুষ একজন আরেকজনকে সাহায্য করেছে। আমি নিজে তার সাক্ষী। মানুষের ভেতরে এক ধরনের শুভবোধ থাকে, সেটাকে জাগিয়ে তোলা যায়। আমাদের দেশেই অনেকবার সেটাকে জাগ্রত হতে দেখেছি, এখন কেন আবার পারব না?



যত দিন যাচ্ছে আমার ভেতরে ততই একটা ধারণা স্পষ্ট হতে শুরু করেছে সেটি হচ্ছে, আমাদের দেশটির প্রধান শক্তি হচ্ছে এ দেশের ছেলে এবং মেয়েদের পাশাপাশি কাজ করার শক্তি। আমাদের দেশে স্কুলে ছেলেরা আর মেয়েরা প্রায় সমান সমান। একটু বড় হলে বাবা-মায়েরা জোর করে মেয়েদের বিয়ে দেন। তখন তাদের সংখ্যা একটু কমে আসে। তারপরও আমাদের দেশে মেয়েরা অনেক বড় সংখ্যায় ছেলেদের পাশাপাশি এগিয়ে আসছে। সেই মেয়েদের যদি আমরা একজন মানুষ হিসেবে না দেখে শুধু মেয়ে হিসেবে দেখে তাদের অবমাননা করার চেষ্টা করি, তাহলে আমাদের স্বপ্ন দেখার থাকল কী?



আমি খুব আশাবাদী মানুষ। আমার ভেতরে বিষয়টি নিশ্চয়ই ঘটেছে ১৯৭১ সালে। যখন টিকে থাকা দূরে থাকুক বেঁচে থাকব কিনা সেটাই জানতাম না, তখনও আমরা ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেছি। সেই স্বপ্ন একদিন সত্যি হয়েছে। তখন আমরা আবার আরও নতুন স্বপ্ন দেখার সাহস পেয়েছি। যত দুঃসহ অবস্থাই হোক আমি স্বপ্ন দেখা থেকে পিছিয়ে আসিনি।



এই নববর্ষে আবার খুবই বড় ধরনের দুঃসময় আমাদের বিপর্যস্ত করেছে। আমি কিন্তু তার মাঝে আবার স্বপ্ন দেখছি। এ দেশের মানুষ ঘটনাটি নির্লিপ্তভাবে দেখেনি। পুরো দেশের মানুষ প্রতিবাদে মুখর হয়ে উঠেছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়েই দুটি বিশাল প্রতিবাদ মিছিল হয়েছে। ছাত্র-শিক্ষক তাদের বুকের ভেতরের ক্ষোভ সবার সামনে প্রকাশ করেছে। শুধু তাই নয়, আমি দেখেছি এ দেশের মেয়েরা মোটেও অসহায়-নির্যাতিত মেয়ে হিসেবে হতাশায় ক্রন্দন করেনি - তারাও গর্জন করে উঠেছে। আমি স্বপ্ন দেখছি, আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় শক্তি এই মেয়েরাও এ দেশে অসভ্য এবং বর্বর কিছু মানুষের এই কাপুরুষোচিত আচরণকে আর সহ্য করবে না। প্রয়োজনে তাদের ওপর পাল্টা আঘাত করবে আর এই ভীরু কাপুরুষগুলো গর্তের ভেতর ঢুকে যাবে।



হয়তো আমরা আমাদের দায়িত্বগুলো ঠিকভাবে পালন করিনি। আমরা হয়তো আমাদের সন্তানদের, আমাদের নতুন প্রজন্মকে কিছু মূল্যবোধ শেখাতে ভুলে গেছি। হয়তো পুরো বিষয়টি নিয়ে আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে। আমাদের সন্তানদের, ছাত্রছাত্রীদের, আমাদের নতুন প্রজন্মকে মূল্যবোধটি শিখিয়ে দিতে হবে। তাদেরকে বলে দিতে হবে, যারা অন্যায় করে তারা আসলে ভীরু এবং কাপুরুষ।



তাদেরকে হয়তো কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই দুটি লাইন বারবার মনে করিয়ে দিতে হবে:
যখনি জাগিবে তুমি সম্মুখে তাহার
তখনি সে ভীত কুক্কুরের মতো সংকোচে সত্রাসে যাবে মিশে!

 

 

মুহম্মদ জাফর ইকবাল, সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬২ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ১৯ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩০ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৮৯ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৫ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ