আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহার : একটি প্রতিক্রিয়া

মুহম্মদ জাফর ইকবাল  

আজকাল সব পত্রপত্রিকারই একটা নেট সংস্করণ থাকে, সেই সংস্করণে সব লেখালেখির পিছনেই পাঠকদের মন্তব্য লেখার সুযোগ থাকে। আমি অবশ্য আমার জীবনে কখনোই আমার লেখালেখির পিছনের মন্তব্যগুলো পড়ে দেখিনি, কারণ আমার ধারণা আমি তাহলে নিজের অজান্তেই এমনভাবে লেখালেখি শুরু করব যেন পাঠকদের কাছ থেকে ভালো ভালো মন্তব্য পেতে পারি!

গত সপ্তাহে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে “জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহার” নামে আমার একটা লেখা ছাপা হয়েছে। আমার পরিচিত একজন বলেছেন এই লেখাটির পর অনেক পাঠক অনেক ধরনের প্রশ্ন এবং মন্তব্য করেছেন, আমার সেই প্রশ্ন এবং মন্তব্যের উত্তর দেওয়া উচিৎ। তিনি সেই প্রশ্ন এবং মন্তব্যগুলো আমাকে লিখে দিয়েছেন, আমি যেগুলো পারি সেগুলোর উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করি।

প্রশ্ন: সব পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস হয়, এই পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস কীভাবে ঠেকানো হবে?
উত্তর: প্রশ্ন ফাঁস হতে দেওয়া হয় বলে প্রশ্ন ফাঁস হয়- সেই সুযোগ তৈরি করে দিতে হয় না। আমি আমার নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশাল সংখ্যক প্রশ্ন ছাপিয়ে বিতরণ করেছি কখনো প্রশ্ন ফাঁস হয়নি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাও আমরা কোনো সমস্যা ছাড়া প্রক্রিয়া করেছি। মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ হওয়ার পর তারা আমাদের কয়েকজনকে পুরো প্রক্রিয়াটি পর্যবেক্ষণ করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তারা অসাধারণ নৈপুণ্যে প্রশ্ন তৈরি করেছেন এবং বিতরণ করেছেন এবং প্রশ্ন ফাঁস হয়নি কারণ সেখানে ফাঁস হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

উদাহরণ দেয়ার জন্যে বলা যায়- প্রশ্ন ছাপানোর জন্যে যাদের প্রেসে ঢোকানো হয় তারা পরীক্ষা শেষ হবার পর ছাপাখানা থেকে বের হয়! এর আগে সেখানেই খাওয়া এবং ঘুম! শুধু তাই নয় জ্যামার দিয়ে মোবাইল নেটওয়ার্ক পর্যন্ত বন্ধ করে রাখা হয়, প্রশ্নটা ফাঁস হবে কীভাবে?

এছাড়া যে ট্রাংকে করে প্রশ্ন বিভিন্ন সেন্টারে পাঠানো হয় সেগুলো কন্ট্রোল রুম থেকে মনিটর করা হয় এবং সেই ট্রাংক খোলা হলেই তার সিগন্যাল কন্ট্রোল রুমে চলে আসে।

এক কথায় বলা যায় চাইলেই প্রশ্ন ফাঁস বন্ধ করা যায়। যদি দেখা যায় যে প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে ধরে নিতে হবে তারা প্রশ্ন ফাঁস বন্ধ করার জন্যে প্রয়োজনীয় পরিশ্রমটুকু করতে রাজী নন।

প্রশ্ন: হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পরীক্ষা দিতে না পারলে ছাত্র বা ছাত্রীটির জীবন ধ্বংস হয়ে যাবে, তখন কী হবে?
উত্তর: ব্যাপারটি তো এখনো ঘটছে, এস.এস.সি বা এইচ.এস.সি পরীক্ষার বেলাতেও তো হঠাৎ করে অসুস্থ হওয়া বা কোনো একটি দুর্ঘটনায় পড়ে পরীক্ষা দিতে না পারার ঘটনা ঘটতে পারে। আমরা তো সেটা মেনে নিয়েছি। ধরে নিয়েছি ছাত্র বা ছাত্রীটির একটি বছর নষ্ট হয়েছে। সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার বেলাতেও তাই ঘটবে। ছাত্র বা ছাত্রীটি পরের বছর পরীক্ষা দেবে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই পরপর দুই বছর ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ দেয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদিতে পড়ার সুযোগ তো আছেই।

তাছাড়া যারা সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার দায়িত্বে থাকবেন, তারা চাইলেই একটি পরীক্ষার বদলে দুটি পরীক্ষাও নিতে পারবেন- যেখানে ত্রিশটি থেকে বেশী ভর্তি পরীক্ষা হতো সেখানে দুটি পরীক্ষা নেওয়া এমন কিছু কঠিন ব্যাপার নয়।

প্রশ্ন: “অভিজাত” বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কি তাদের আভিজাত্য বজায় রেখে এই ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবে?
অবশ্যই পারবে। প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ভর্তি নির্দেশিকার সমস্ত নিয়ম-কানুন মেনে ছাত্র ছাত্রী ভর্তি করতে পারবে। তারা শুধু ভর্তি পরীক্ষার নম্বরটি ব্যবহার করবে অন্য সব কিছু তারা আগের মতোই মেনে চলবে।

প্রশ্ন: সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা যদি একটি মিনি এইচ.এস.সি. পরীক্ষাই হবে তাহলে সরাসরি এইচ.এস.সি. এর পরীক্ষার ফলাফল ব্যবহার করে ভর্তি করা হয় না কেন?
উত্তর: কারণ মনে করা হয় যে, এইচ.এস.সি পরীক্ষা এখনো যথেষ্ট মানসম্পন্ন হয়নি, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আরও ভালোভাবে ছাত্র ছাত্রীদের যাচাই করা হয়।

মূল কারণ হচ্ছে, যেহেতু সব পরীক্ষায় গ্রেড দেয়া হয়- এই পরীক্ষার ফলাফল দিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের আলাদা করা যায় না। সবাই যেহেতু গোল্ডেন ফাইভ পাচ্ছে- আমরা তাদের পার্থক্য করব কেমন করে?

এখানে আরেকটি বিষয় সবাইকে মনে করিয়ে দেয়া যায়। গ্রেড পদ্ধতিটি শুরু করা হয়েছিল কারণ পরীক্ষায় পাওয়া নম্বরটি কখনো সঠিক পরিমাপ নয়, কাছাকাছি নম্বর। এটি কারো জানার কথা নয়, শুধুমাত্র গ্রেডটি জানার কথা। কিন্তু আমি এক সময়ে জানতে পারলাম ছাত্রছাত্রীদের মূল্যায়ন করার জন্য মূল নম্বরটি ব্যবহার করা হচ্ছে। একই গ্রেড পাওয়া একজন বৃত্তি পাচ্ছে অন্যজন পাচ্ছে না কারণ একজনের নম্বর বেশী অন্যজনের কম। যেহেতু এর মাঝে স্বচ্ছতা নেই তাই হাইকোর্ট থেকে সবাইকেই তার নম্বর জানার অধিকার দিয়ে দিয়েছে। অর্থাৎ এখন এই দেশে গ্রেড পদ্ধতি একটি রসিকতা ছাড়া আর কিছু নয়।

মজার কথা হলো এই রসিকতাটুকু কেউ এখনো ধরতে পারছেন বলে মনে হয় না!

উপরের প্রশ্নগুলো ছাড়াও আরও অনেক প্রশ্ন থাকতে পারে। যারা এই সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষাটি পরিচালনা করবেন তারা সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর আরও ভালোভাবে দিতে পারবেন। আমরা এখনো জানি না সেরকম সমস্যাও হঠাৎ করে চলে আসতে পারে, আমি নিশ্চিত তার সমাধানও বের হয়ে যাবে। একটি সমস্যার সমাধান যে মাত্র একটি তাও তো নয়- অনেক ভিন্ন ভিন্ন সমাধান হতে পারে।

পুরো জাতির সাথে আমিও এই অতি চমৎকার উদ্যোগটির শুরুটি দেখার জন্য আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করে আছি।

মুহম্মদ জাফর ইকবাল, সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ