সিলেটটুডে ডেস্ক

১০ অক্টোবর, ২০১৭ ১৭:০১

নিউ ইয়র্কে হেলাল শেখের সংবাদ সম্মেলন, আগামীতেও লড়াইয়ে থাকার প্রত্যয়

নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিল নির্বাচনে ডিস্ট্রিক্ট ৩২ এর ডেমোক্রেটিক প্রাইমারির প্রার্থী হেলাল এ শেখ নির্বাচন পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে তার ভোটারসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন। প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন আগামীতেও নির্বাচনী লড়াইয়ে থাকার।

রোববার (৮ অক্টোবর) দুপুরে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত ড. একে আবদুল মোমেন এবং হেলাল শেখের ক্যাম্পেইন ম্যানেজার টাইলার এল্ডরিচ।

লিখিত বক্তব্যে হেলাল আবু শেখ এ সংবাদ সম্মেলনকে ‘প্রীতি সম্মিলনী’ উল্লেখ করে বলেন, এই আয়োজনের একমাত্র উদ্দেশ্য আপনাদের ধন্যবাদ জানানো; একসাথে কিছুটা ভালো সময় কাটানো।

সংবাদ সম্মেলনে হেলাল শেখ বলেন, বাবা মায়ের হাত ধরে ১৭ বছর বয়সে, আমি যখন আমেরিকায় এসেছিলাম, তখন আমার দু’চোখ ভরা স্বপ্ন। সেই স্বপ্নের পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে আজ আপনাদের সামনে। আমি বিশ্বাস করি মানুষ তার আশার সমান বড়। তাই আশা নিয়েই আমার পথচলা।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ব্যক্তিগতভাবে আমি শিক্ষকতার মতো মহান একটি পেশায় যুক্ত ছিলাম। সিটি কাউন্সিল নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্যে আমাকে অসাধারণ এই কাজটি থেকে সরে আসতে হয়েছে।

শিক্ষা জীবনে আমি সিটি ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্কের সিটি কলেজ অব টেকনোলজি থেকে ব্যাচেলর ডিগ্রি শেষ করি। সেখান থেকে ২০০০ সালে কম্পিউটার ইনফরমেশন বিভাগে এই ডিগ্রি দেয়া হয় আমাকে। সাউথ ইস্ট এশিয়ান হিসেবে প্রথমবারের মতো এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্টুডেন্ট গভর্নমেন্ট এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হয়েছিলাম। ২০ হাজার ভোটের মধ্যে আমি পেয়েছিলাম ছয় হাজারের বেশি। এই পদটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ; অনেকটা বাংলাদেশের কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের ভিপি’র মতো।

এছাড়া কলেজের মুসলিম এসোসিয়েশন, স্প্যানিশ ক্লাব এবং এশিয়ান ক্লাবের সক্রিয় সদস্য ছিলাম। পরে ব্রুকলিন কলেজ থেকে এডোলেসেন্ট ম্যাথম্যাটিকস এডুকেশনের উপর মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করি।

সংবাদ সম্মেলনে হেলাল শেখ বলেন, লেখাপড়া শেষে নিউইয়র্ক সিটি বোর্ডের অধীনে একজন পাবলিক স্কুল টিচার হিসেবে কাজ শুরু করি। সবশেষে আমি ব্রুকলিনের ফ্রাঙ্কলিন কেলিন হাই স্কুলের শিক্ষক ছিলাম। পেশাগত উৎকর্ষ ও মননশীলতা নিয়ে, শিক্ষকতায় আমার আন্তরিক প্রচেষ্টা ছিল। আগামী দিনের নাগরিকদের সঠিকভাবে গড়ে ওঠার সুযোগ করে দিতে পেশার প্রতি গভীর ভালোবাসাও ছিল।

কিন্তু আমার সবসময়ই মনে হয়েছে, শিক্ষক হিসেবে হয়তো আমি শিক্ষার্থীদের জীবন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছি; তবে আরও বড় পরিসরে মানুষকে সেবা দেয়ার চেষ্টাও তো করা যেতে পারে। সবসময়ই মনে হয়েছে, আমার উচিত আমেরিকার মূলধারার রাজনীতিতে নিজেকে যুক্ত করা। অনাবিল সম্ভাবনার এই দেশে মূল ধারার রাজনীতিতে খুব বেশি সংখ্যক বাংলাদেশি আমেরিকানকে যুক্ত হতে দেখি না। অথচ প্রতিনিয়ত সংখ্যায় বেড়ে চলা বাংলাদেশিদের অসাধারণ সম্ভাবনা রয়েছে। চাইলে কি অনেক দূর যাওয়া সম্ভব নয়? এই প্রশ্ন যতই মনে বার বার ঘুরপাক খেয়েছে, ততই নিজেকে প্রস্তুত করেছি মনে মনে।

হেলাল শেখ তাকে সমর্থন ও সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশী কমিউনিটির প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, অনেক প্রত্যাশা নিয়ে চলতি বছর দ্বিতীয়বারের মতো আমি নিউইয়র্কের সিটি কাউন্সিল নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক প্রাইমারিতে ডিস্ট্রিক্ট ৩২ থেকে লড়াই করেছিলাম। আশা ছিল, ১২ সেপ্টেম্বরের সেই ডেমোক্রেটিক প্রাইমারিতে বিজয়ী হয়ে, ৭ নভেম্বরের চূড়ান্ত নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থীর মুখোমুখি হতে পারবো। জোড়ালোভাবে সেই সম্ভাবনা তৈরিও হয়েছিল। সেক্ষেত্রে হয়তো চূড়ান্ত জয়ের জন্যে ডেমোক্রেটিক প্রার্থী হিসেবে, ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লড়াই করা সম্ভব হতো। হয়তো তৈরি হতো নতুন ইতিহাস। হয়তো প্রথমবারের মতো অত্যন্ত মর্যাদার নিউইয়র্ক সিটির কাউন্সিলম্যান হিসেবে একজন বাংলাদেশি আমেরিকানকে দেখা যেত। এ সবক্ষেত্রেই আমি ‘হয়তো’ শব্দটি ব্যবহার করছি। কেননা আপনাদের সবার সর্বাত্মক সহায়তার পরও, ডেমোক্রেটিক প্রাইমারির বাধা আমার পক্ষে পেরুনো সম্ভব হয়নি। এজন্যে আমি আন্তরিকভাবে দু:খিত। তবে এটি আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, আমার চেষ্টার কোন কমতি ছিল না।

কিন্তু এই পরাজয়ের মধ্যেও রয়েছে অনেক আনন্দের উপলক্ষ, ভবিষ্যতে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা। তিন প্রার্থীর মধ্যে অন্য দু’জন ছিলেন ল্যাটিনো এবং ইতালিয়ান। নির্বাচনী এলাকা ডিস্ট্রিক্ট থার্টি টু’র মধ্যে রয়েছে বেলে হারবার, ব্রিজি পয়েন্ট, বোর্ড চ্যানেল, হেমিলটন বীচ, হাওয়ার্ড বীচ, লিন্ডেন উড, নেপনসিট, ওজন পার্ক, রকওয়ে বীচ, রকওয়ে পার্ক, সাউথ ওজনপার্ক, সাউথ রিচমন্ড হিল এবং উড হ্যাভেন।

তিনি বলেন, আমার এ নির্বাচনী এলাকা কিন্তু একেবারেই বাংলাদেশি অধ্যুষিত নয়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেখা যায়, এসব এলাকায় ৪৪ ভাগ সাদা, ৩৩ ভাগ ল্যাটিনো এবং ১১ ভাগ সাউথ এশিয়ান। বাংলাদেশি মাত্র ২ শতাংশ। তবুও এই এলাকায় নির্বাচনে অংশ নিয়ে আমি তিনজন প্রার্থীর মধ্যে ৩১ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলাম।

এখানে একটি কথা উল্লেখ করতে চাই, নির্বাচনের পরে বর্তমান কাউন্সিলম্যান ও রিপাবলিকান প্রার্থী এরিক উলরিচ আমাকে ফোন করেছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, তার বিশ্বাস ছিল আমিই বিজয়ী হবো। আর আমি বিজয়ী হলে, তার পক্ষে চূড়ান্ত নির্বাচনে জেতাটা এবার কঠিন হয়ে যেত বলেই তার ধারণা ছিল।

হেলাল শেখ বলেন, এই সমীহ থেকেও তো বোঝা যায়, আমার অংশগ্রহণ কতটা প্রভাব ফেলেছিল। এই সংবাদ সম্মেলন থেকে যারা আমাকে ভোট দিয়েছেন কিংবা যারা দিতে পারেননি, তাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

বাংলাদেশীসহ ইমিগ্র্যান্টদের পাশে থাকার অঙ্গীকার পুন:ব্যক্ত করে হেলাল শেখ বলেন, ভোট প্রাপ্তির পরিসংখ্যান ও অন্যান্য প্রতিক্রিয়া থেকে বোঝা যাচ্ছে, ভবিষ্যতের জন্যে আশা আছে। তাই সেই পথে এগিয়ে যেতে চাই। যেহেতু পথে নেমেছি, অনেক দূর হেঁটে যাওয়াই লক্ষ্য। অর্থাৎ আগামীতেও আমি লড়াইয়ে থাকবো। এই পথে সাংবাদিক বন্ধুদের সবসময় পাশে চাই। যেমন পাশে চাই, আমার এলাকার মানুষকে।

কমিউনিটির সেবায় নিজকে উৎসর্গ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে হেলাল শেখ বলেন, একজন নিবেদিত প্রাণ চিকিৎসকের স্বামী ও তিনটি ফুটফুটে সন্তানের বাবা হিসেবে পরিবারের প্রতি দায়িত্ববোধ আমি কখনোই ভুলে থাকিনি। তেমনি মমতা আর যত্ন নিয়ে কাজ করে যেতে চাই সমাজের জন্যে। একজন কমিউনিটি এডভোকেট হিসেবে এই দায়িত্ব আমি মাথায় তুলে নিয়েছি নিজে থেকেই।

তিনি বলেন, আমি নিশ্চিতভাবেই জানি আগেও আপনারা আমার সাথে ছিলেন, এখনো আছেন, ভবিষ্যতেও আপনাদের পাশে পাবো।

সংবাদ পাঠিকা শামছুন্নাহার নিম্মির সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে হেলাল শেখের কন্যা মাইশাও বক্তব্য রাখেন। এ সময় নির্বাচনী ক্যাম্পেইন টীমের কর্মকর্তারা ছাড়াও বাংলাদেশী কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত