ড. শাখাওয়াৎ নয়ন, সিডনি থেকে

২৬ এপ্রিল, ২০১৮ ১৩:৫৫

প্রধানমন্ত্রীর অস্ট্রেলিয়া সফর: আওয়ামী লীগ ব্যস্ত আয়োজনে, বিএনপি প্রতিবাদে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন অস্ট্রেলিয়া সফর উপলক্ষে সিডনিসহ অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন শহরে, আওয়ামী লীগ ঘরানার বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। একই সাথে বিএনপি-জামায়াত ইসলামীর নেতা-কর্মীদের মধ্যেও প্রতিবাদ, প্রতিরোধের প্রস্তুতির খবর পাওয়া যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী তিনদিনের সরকারি সফরে শুক্রবার সকালে (২৭ এপ্রিল) থাই এয়ারওয়েজের একটি বিমানে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে এসে পৌছাবেন। তিনি সিডনিতে ‘গ্লোবাল সামিট অন উইমেন’ সম্মেলনে যোগ দেবেন।

যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক ‘গ্লোবাল সামিট অব উইমেন’ বাংলাদেশে নারী শিক্ষার প্রসার এবং নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে অগ্রণী ভূমিকা পালনের স্বীকৃতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রীকে সম্মাননা দিচ্ছে।

শুক্রবার তিনি সিডনির আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠেয় এক অনুষ্ঠানে ভিয়েতনামের ভাইস প্রেসিডেন্ট থাই নগক থিন এবং কসোভোর সাবেক প্রেসিডেন্ট অ্যাতিফেত জাহজাগার সাথে গ্লোবাল উইমেন’স লিডারশীপ অ্যাওয়ার্ড-২০১৮ গ্রহণ করবেন। এই সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন এবং জাতীয় উন্নয়নের মূলধারায় নারীদের সম্পৃক্তকরণে তার সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরবেন।

শনিবার (২৮ এপ্রিল) অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুলের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী। অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলি বিশপ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন বলেও জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রী ইউনিভার্সিটি অফ ওয়েস্টার্ন সিডনিতে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ ভাস্কর্যে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন এবং ২৮ এপ্রিল সন্ধ্যায় হোটেল সোফিটেল-এ একটি নাগরিক সংবর্ধনায় যোগ দেবেন।

প্রায় দীর্ঘ ১৯ বছর পর শেখ হাসিনার সিডনি সফরকে কেন্দ্র করে আওয়ামী ঘরানার সকল সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এত বড় একটি নাগরিক সংবর্ধনায় সোফিটেল হোটেলের হলরুমের ৮০০ আসনও যথেষ্ট মনে হচ্ছে না। কারণ হাজার হাজার নেতা-কর্মীরা প্রিয় নেত্রীকে একনজর দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। আসন সংখ্যার সীমাবদ্ধতার কারণে কাকে প্রবেশপত্র দেয়া হবে আর কাকে দেয়া হবে না- এই সমস্যায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা হর-হামেশা বাক-বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ছেন।

নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য শেখ শামিমুল হকের নেতৃত্ব সাত সদস্য বিশিষ্ট একটি স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। স্টিয়ারিং কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন ব্যারিস্টার সিরাজুল হক, ড. আবুল হাসনাৎ মিল্টন, ড. মাসুদুল হক, ড. শামস রহমান, ডা. আয়াজ চৌধুরী এবং প্রদ্যোত সিং চুন্নু। এ স্টিয়ারিং কমিটি নিয়ে শুরুতে বিভিন্ন রকম জোরালো আপত্তি উত্থাপিত হলেও, আস্তে আস্তে প্রতিবাদের ঝড় দুর্বল হয়ে পড়েছে।

রদিকে, নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের খরচাপাতির কারণ দেখিয়ে আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগও পাওয়া গেছে। প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দেয়ার সুযোগ, প্রধানমন্ত্রীর সাথে ছবি তোলার সুযোগ পাইয়ে দেয়ার বিনিময়ে বেশুমার টাকা-পয়সা লেনদেনের খবর সিডনির বাঙালিপাড়া খ্যাত লাকেম্বায় মুখরোচক গল্পের বিষয়ে পরিণত হয়েছে।

চাঁদাবাজি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শেখ শামীমুল হক বলেন, সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের ব্যয় হবে একুশ হাজার ডলার। তাই সাত সদস্য বিশিষ্ট স্টিয়ারিং কমিটির প্রত্যেকে তিন হাজার ডলার করে কন্ট্রিবিউট করবে। স্টিয়ারিং কমিটির মিটিং-এ আমরা স্পষ্টভাবে বলেছি, এখানে কোনো ধরনের চাঁদাবাজির সুযোগ নেই।

ব্যারিস্টার সিরাজুল হক বলেন, ‘এসব কথা কাল্পনিক। ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার জন্য এসব কথা প্রচার করা হয়ে থাকে। তাছাড়া রাজনৈতিক দল সব সময়ই কর্মীদের চাঁদার টাকায়ই চলে। সেটা যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী কন্ট্রিবিউট করে, কোনো ধরনের জোর-জবরদস্তি নেই’।

আওয়ামী লীগের মধ্যে বিভক্তি কিংবা মতানৈক্য প্রসঙ্গে ড. আবুল হাসনাৎ মিল্টন বলেন, ‘আমাদের নিজেদের মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব যা-ই থাকুক না কেন, নেত্রীর প্রশ্নে কোনো বিভেদ নেই। সন্তানদের মধ্যে মনমালিন্য থাকতেই পারে, কিন্তু মায়ের ব্যাপারে কোনো দ্বন্দ্ব নেই, আমরা ঐক্যবদ্ধ’।

অন্যদিকে, বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীরা প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে কয়েকটি স্থানে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে। তম্মধ্যে প্রধানমন্ত্রী (১) যে হোটেলে থাকবেন তার সামনে (২) সিডনির আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে এবং (৩) যেখানে নাগরিক সংবর্ধনা দেয়া হবে সেখানে।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, অস্ট্রেলিয়ার সহ সভাপতি ফজলুল হক শফিক বলেন, ‘বর্তমান সরকারের দুর্নীতি এবং স্বৈরাচারী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আমরা জনগণকে সাথে নিয়ে নিয়মতান্ত্রিকভাবে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবো। বিক্ষোভ কর্মসূচিতে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে কিংবা কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাহায্য চাওয়া হবে’।

বিএনপি’র কেন্দ্রীয় ফরেন এফেয়ার্স কমিটির সদস্য মোহাম্মদ রাশেদুল হক বলেন, ‘বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দল। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে। অস্ট্রেলিয়ান আইন-কানুনের কোনো ধরনের ব্যত্যয় ঘটে, এমন কোনো কিছুই করবে না’।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির একজন নেতা জানান, অস্ট্রেলিয়ার একটি প্রভাবশালী টিভি চ্যানেলের সাথে তারা লিয়াজো করার চেষ্টা করছেন; যাতে এ চ্যানেলের কোনো একজন ডাকসাইটে সাংবাদিককে দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করা হয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত