সিলেটটুডে ডেস্ক

০৭ এপ্রিল, ২০১৯ ১১:০৭

ওয়াশিংটনে বৈশাখী মেলা ও বলী খেলা

ওয়াশিংটন প্রবাসী বাংলাদেশীদের স্বতঃস্ফুর্ত উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হলো ফ্রেন্ডস এন্ড ফ্যামেলি (ডিএমভি) আয়োজিত বৈশাখী মেলা ১৪২৬।

শনিবার (৬ এপ্রিল) দুপুর প্রায় সাড়ে ১২টায় ভার্জিনিয়ার ম্যাশন ডিস্ট্রিক পার্কের খোলা আকাশের নিচে গ্রাম বাংলার চিরন্তন ঐতিহ্যবাহী খেলা লাটিম মার্বেল মোরগ লড়াই ও বলী খেলা অনুষ্ঠিত হয়।

মনির হোসেনের পরিচালনায় শুরু হওয়া খেলায় বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন অনুষ্ঠানের উপদেষ্টা ও অতিথি রেদওয়ান চৌধুরী, কবির পাটোয়ারী ও কাবাব কিং রেস্টুরেন্টের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ হোসেন।

প্রথমে লাটিম খেলা অনুষ্ঠিত হয়। লাটিক খেলায় প্রথম সালাউদ্দীন, দ্বিতীয় মামুন খান ও তৃতীয় হয় দেওয়ান আরশাদ আলী বিজয়। এরপর অনুষ্ঠিত হয় মহিলাদের মার্বেল প্রতিযোগিতা। এতে প্রথম হন রেহানা, দ্বিতীয় শিখা আহমেদ এবং তৃতীয় হন নীরা। এরপর শিশুদের নিয়ে শুরু মোরগ যুদ্ধ। মোরগ যুদ্ধে বিজয়ী হয় আইম ইয়াসির, তৌকির ও আরহাম।

এরপর শুরু হয় 'আকতারের বলী খেলা'। বলী খেলায় অংশগ্রহণ করেন সালাউদ্দীন বলী, মামুন বলী, রাজু বলী এবং বাবু বলী। চার রাউন্ডের খেলায় চার বলী মুখোমুখি হন একে অপরের। প্রথম রাউন্ডে সালাউদ্দীন বলী আর রাজু বলী একে পরের মুখোমুখি হয়। এতে জয়ী হয় সালাউদ্দীন বলী। দ্বিতীয় রাউন্ডে লড়াই করেন মামুন বলী ও বাবু বলী। দ্বিতীয় রাউন্ডে জয়ী হয় বাবু বলী।

প্রথম দুই রাউন্ডে পরাজিত মামুন বলী ও রাজু বলী তৃতীয় রাউন্ডে একে অপরের মুখোমুখি হন। এই লড়াই জয় লাভ করে তৃতীয় হয় মামুন বলী। চতুর্থ ও চূড়ান্ত রাউন্ডে বাবু বলী ও সালাউদ্দীন বলী একে অপরের মুখোমুখি হন।

উত্তেজনাপূর্ণ লড়াইয়ে প্রবাসের মটিতে প্রথমবারের মত অনুষ্ঠিত আকতারের বলী খেলায় বিজয়ী হন বাবু বলী এবং দ্বিতীয় হন সালাউদ্দীন বলী। এই সময় বলীর মাঠেই প্রথম বলী বিজয়ী বাবু বলী ও সালাউদ্দীন বলীকে তাদের বিজয়ের বেল্ট পড়িয়ে দেন অনুষ্ঠানের আয়োজক আকতার হোসেনসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা।

এ সময় খেলার বিচারক রেদওয়ান চৌধুরী, মোহাম্মদ হোসেন, ও কবির পাটোয়ারী, খেলার পরিচালক মনির হোসেনসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রবাসের মাটিতে এই প্রথমবারের মত 'আকতারের বলী' খেলার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তর ওয়াশিংটন জায়গা করে নিল ইতিহাসের পাতায়। বাংলা ভাষা ও বাংলা সংস্কৃতি প্রবাসের মাটিতে বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের মাছে ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে ২০০৮ সালে ফ্রেন্ডস এন্ড ফ্যামেলির জন্ম হয়েছিল বৃহত্তর ওয়াশিংটন। দীর্ঘ এক যুগের ধারাবাহিকতায় ফ্রেন্ডস এন্ড ফ্যামেলি এবার বৈশাখী মেলা ১৪২৬ এ বাংলার ঐতিহ্যবাহী 'আকতারের বলী' খেলা আয়োজনের মধ্য দিয়ে প্রবাসের মাটিতে বাংলা সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য ছড়িয়ে কাজে আরো একধাপ এগিয়ে গেল।

উল্লেখ্য, বলী খেলার আর্ন্তজাতিক স্বীকৃতি আদায়ের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যেই শুরু করেছে। খুব শীঘ্রই বাংলা সংস্কৃতির এই ঐতিহ্যবাহী খেলার আর্ন্তজাতিক স্বীকৃতি পাবে বলে আশা করছে সবাই।

আকতারের বলী খেলার পরপরই অনুষ্ঠানের মূল মঞ্চে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পালা। শতরূপা বড়ুয়া ও শিব্বীর আহমেদের সঞ্চালনায় সাংস্কৃতিক পর্বের শুরুতেই অনুষ্ঠিত হয় বৈশাখের দলীয় সঙ্গীত। ওয়াশিংটন প্রবাসের জনপ্রিয় সঙ্গীত সাধক ও শিক্ষক নাছের চৌধুরীর পরিচালনায় 'এসো হে বৈশাখ', 'সোনা বন্দে' ও 'তোরা সব জয়ধ্বনী কর' পরপর তিনটি দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে ওয়াশিংটনের স্থানীয় শিল্পীরা।

শিল্পীরা হলেন- ফাহমিদা হোসাইন শম্পা, শিখা আহমেদ, আসমা আহমেদ, শিমুল ঘোষ, হাওয়া খানম, বুলবুল আক্তার, মাসুমা মেরিন, লিপি হোসাইন, দোলন বৃষ্টি, উৎপল বড়ুয়া, দেওয়ান আরশাদ আলী বিজয়, ক্লেমন্ট গোমেজ স্বপনসহ আরো অনেকে। এ সময় তবলায় ছিলেন আশীষ বড়ুয়া, বাঁশিতে ছিলেন মোহাম্মদ মাজেদ, হারমোনিয়ামে নাছের চৌধুরী এবং মাটি ব্যান্ড।

এরপর মঞ্চে একে একে সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশন করেন আংকিতা বড়ুয়া, আনসার আহমেদ, বর্ণমালা, নীলাচল, নাসরিন আহমেদ, বুলবুল আকতার, ক্লেমন্ট গোমেজ স্বপন, উৎপল বড়ুয়া, শিমুল ঘোষ, বৃষ্টি দোলন, কালাচাঁদ সরকার, সীমা খান ও শাহিন খান।

এরপর ওয়াশিংটনের সাংস্কৃতিক সংগঠন হৃদয়বীনা পরিবেশন করে নৃত্যগীত ও হাস্যরসের উপর রচিত 'শশুরবাড়ী ড্রামার হাঁড়ি'। এই পর্বে অংশগ্রহণ করে সোমা বোস, প্রিয়াংকা বোস, রুমা ভৌমিক, ফাহমিদা শম্পা, হাসনাত সানী, নাছের চৌধুরী, আশীষ বড়ুয়া ও মোহাম্মদ মাজেদ।

অনুষ্ঠানের মূলমঞ্চে প্রথমে 'আকতারের বলী' খেলায় বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন কাবাব কিং এর স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ হোসেন। এ সময় অনুষ্ঠানের আয়োজক আকতার হোসেন, বুরহান আহমেদ ও রেদওয়ান চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। বলী খেলায় বিজয়ী বাবু বলী প্রথম হয়ে জিতে নেন আইফোন এবং দ্বিতীয় হয়ে সালাউদ্দীন বলী জিতে নেন আইপ্যাড এবং তৃতীয় হয়ে টেবলেট জিতে নেন মামুন বলী।

এরপর আয়োজকবৃন্দ কৃতজ্ঞতা স্বরূপ অ্যাওয়ার্ড প্রদান করেন। ফ্রেন্ডস এন্ড ফ্যামেলি অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করেন ফটোগ্রাফার রাজীব বড়ুয়া, কামরুল ইসলাম কামাল, শতরূপা বড়ুয়া, আকাশ রাইস, নাছের চৌধুরী, আশীষ বড়ুয়া ও মোহাম্মদ মাজেদ, রেদওয়ান চৌধুরৗ ও কবির পাটোয়ারী। স্পন্সর অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয় ই এন্ড আর হোম হেলথ কেয়ার প্রোভাডার, ডাটা এন টেক, ও কমনওয়েলথ মর্টগেজ কোম্পানীর স্বত্বধীকারীদের হাতে।

এরপরেই অনুষ্ঠানের মূল মঞ্চে শুরু হয় আমন্ত্রিত শিল্পীদের পর্ব। এই পর্বে একে একে অংশগ্রহণ নিউইয়র্কেও জনপ্রিয় শিল্পী কামারুজ্জামান বকুল, বাউল শিল্পী সায়েরা রেজা এবং জনপ্রিয় শিল্পী অভিনেতা তাহসান। দর্শকদের সাথে নেচে গেয়ে সেলফি তুলে আনন্দের মধ্য দিয়ে তাহসান রোদেলা দুপুর, ফিরে এসো, কাল্পনিক প্রেম, কে আঁকে অন্য ছবি, কেন হঠাৎ এলে, আছো হৃদয়ে, তুমি ছুঁয়ে দিলে মন, তুমি আছো তাই, কেউ না জানুক ইত্যাদি জনপ্রিয় গানগুলো একে একে গেয়ে শোনান।

তাহসানের গানের বিরতিতে অনুষ্ঠিত হয় র‌্যাফেল ড্র প্রতিযোগিতা। র‌্যাফেল ড্র এর মাধ্যমে দর্শকরা জিতে নেন টিভি, সোনার চেইন, ল্যাপটপ ও পদ্মার তাজা ইলিশ মাছ। একাত্তর ফাউন্ডেশনের সৌজন্যে টিভি, সোনিয়া জুয়েলার্সের সৌজন্যে সোনার চেইন, ইনসায়ের আইটি কোম্পানির সৌজন্যে ল্যাপটপ এবং এশিয়া হালার গ্রোসারির সৌজন্যে পাঁচটি ইলিশ মাছ র‌্যাফেল ড্র পুরস্কার হিসাবে প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানের আয়োজক আকতার হোসেন ২০২০ সালের ১৮ জানুয়ারি পিঠা উৎসব এবং ৪ এপ্রিল আবারো বৈশাখী মেলা পালনের ঘোষণা দিয়ে অনুষ্ঠানের সফল সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত