সিলেটটুডে ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক

৩০ জানুয়ারি, ২০১৬ ১০:৪৯

নারিকেল গাছ নাকি ঘাস! বিতর্ক তুঙ্গে ভারতের গোয়ায়

নারিকেল গাছ নাকি বৃক্ষ নয়, নেহাতই ঘাস! নারিকেলের জন্য বিখ্যাত ভারতের গোয়া রাজ্য সরকারের এমন ঘোষণার পর পুরো ভারত জুড়েই তৈরি হয়েছে বিতর্ক।

১৯৮৪ সালের বৃক্ষ সংরক্ষণ আইনটি সম্প্রতি সংশোধন করার প্রস্তাব দিয়েছে গোয়া সরকার। সংশোধনীতে বলা হয়েছে— যেহেতু নারকেল গাছের শুধু কাণ্ড রয়েছে, শাখা-উপশাখা নেই, এটিকে বৃক্ষ শ্রেণিতে ফেলা যাবে না। এটি ঘাস বিশেষ!

এর মানে, যে কেউ যখন তখন নারকেল গাছ কেটে ফেলতে পারবে। এর আগে একটি নারকেল গাছে কুঠার বসানোর আগে সরকারের বনসম্পদ বিভাগের অনুমতি নিতে হতো। এখন আর সে সবের কোনও বালাই রইল না।


তবে গোয়া সরকারের সাথে কোনভাবেই একমত হতে পারছেন না উদ্ভিদবিজ্ঞানীরা। তারা নারকেল গাছকে ঘাস বলাকে ‘ঘোর অবৈজ্ঞানিক’ বলেই আখ্যা দিচ্ছেন।

কলকাতার গুরুদাস কলেজের অবসরপ্রাপ্ত বর্ষীয়ান উদ্ভিদবিজ্ঞানের অধ্যাপক সুজিত দত্ত বলেন, ‘‘উদ্ভিদবিজ্ঞানের শ্রেণিবিন্যাসের আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসারে, তাল, নারকেল, সুপুরি, বটল পাম ইত্যাদি পামেসা পরিবারের গাছ। প্রাচীন কাল থেকেই আকার এবং উচ্চতার মাপ অনুযায়ী এই শ্রেণিবিন্যাস হয়ে এসেছে। একে গুল্ম শ্রেণিতে ফেলার প্রশ্ন ওঠে না।’’

গোয়ার বাসিন্দাদের সংস্কৃতি, আচার-অনুষ্ঠান, রন্ধনপ্রণালীর সঙ্গে জুড়ে রয়েছে নারকেল। কোঙ্কনি ভাষায় ‘নারকেল’-এর প্রায় ৫০টি প্রতিশব্দ রয়েছে! সেই নারকেল গাছ কেটে ফেলার রাস্তা কেন এ ভাবে প্রশস্ত করা হচ্ছে?

রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তের ঘোর বিরধীতা করেছে সেখানকার বিরোধী দল। তাদের বক্তব্য, নগরায়নের জন্য জমি প্রয়োজন তাই সরকার ভুল ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়ে নারিকেল গাছ নিধন করতে চায়। আবাসন প্রকল্পের একটি বড় লবি এই সিদ্ধান্তের পিছনে রয়েছে বলে সরব হয়েছে কংগ্রেসও।

গোয়ার বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী লক্ষ্মীকান্ত পারেস্কর অবশ্য তাঁর সিদ্ধান্তকে প্রতিষ্ঠিত করতে যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমি বিবেকের কাছে একশো শতাংশ পরিষ্কার। কথা দিচ্ছি গোয়ার সবুজ কোনও ভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। এটা বিরোধীদের মিথ্যা প্রচার যে, গোয়ায় নারকেল গাছ কমে যাচ্ছে।’’ বৃক্ষ সংরক্ষণ আইনকে কাজে লাগিয়ে রাজ্য সরকার বিল্ডার এবং কর্পোরেট সংস্থাগুলোকেই মদত করছে, বিরোধীদের এই সমালোচনাকে উড়িয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘সামনেই ভোট। তাই এ নিয়ে রাজনীতি হচ্ছে।’’

সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গোয়া জুড়ে পোস্টার মারা হচ্ছে, গড়ে উঠছে আন্দোলন। পরিবেশবিদরা গাছ জড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকছেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত