সিলেটটুডে ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক

২৫ ফেব্রুয়ারি , ২০১৬ ০৯:৪১

পৃথিবীর প্রাচীনতম গাছ

গাছের সঙ্গে মানুষের সখ্য সেই আদিকাল থেকেই। আমাদের নিঃশ্বাসের অক্সিজেন দেয় গাছ। এদের প্রতি মানুষের যতটা না ভালোবাসা রয়েছে, ততটাই রয়েছে আগ্রহ। আর প্রতিনিয়ত গাছের প্রতি জন্ম নেয়া মানুষেরর এ আগ্রহই গবেষকদের উদ্বুদ্ধ করেছে পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো আর বয়স্ক গাছ খুঁজে বের করতে। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত পৃথিবীর জলবায়ু ও পরিবেশ তৈরিতে প্রচণ্ড রকমের ভূমিকা রেখেছে গাছ।

গাছের কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্রহণ এবং অক্সিজেন ছাড়ার ক্ষমতা না থাকলে কোনো প্রাণীরই হয়তো পৃথিবীতে প্রথম পা রাখার কিংবা বেঁচে থাকার সুযোগ হতো না। সুতরাং এটা ধরে নেয়াই যায়, গাছেরাই ছিল পৃথিবীর প্রথম বাসিন্দা। তবে কোন গাছটা? ওয়াটিজা নামের প্রায় ৩৯৭ মিলিয়ন বছর পুরনো একটি গাছের সন্ধান পাওয়া গেছে যেটা বর্তমান গাছগুলোর সঙ্গে অনেকটাই সাদৃশ্যপূর্ণ। এদের সর্বোচ্চ বেড়ে ওঠার ক্ষমতা ছিল ১০ মিটার পর্যন্ত।

পৃথিবীতে এসেই নিজের বংশ সবখানে ছড়িয়ে দিতে শুরু করেছিল এ গাছ। ২০০৪ সালে নিউ ইয়র্কে ১৮০ কিলোগ্রামের ফসিল খুঁজে পাওয়া যায় ওয়াটিজাদের। কিন্তু সবচেয়ে পুরনো গাছ হলেও ওয়াটিজা বর্তমানে বিলুপ্ত। তাহলে বর্তমান পৃথিবীর বেঁচে থাকা সবচেয়ে পুরনো গাছ কোনটি? এ প্রশ্নের উত্তর রয়েছে মোট দুইটি।

যদি শেকড়ের কথা ধরা হয় তাহলে পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো আর বয়স্ক গাছ হিসেবে উল্লেখ করা যায় ২০০৪ সালে খুঁজে পাওয়া সুইডেনের ক্রিসমাস ট্রির কথা। এর শেকড় বরফ যুগের বলে মন্তব্য করেন অনুসন্ধানীরা। কিন্তু সুইডেনের মাটি যেখানে অনেকটা সময়ই বরফে ঢাকা থাকে সেখানে এতদিন পর্যন্ত গাছটি বাঁচল কী করে? খুব কঠিন এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে পাওয়া যায় এক অদ্ভুত বিষয়। আর সেটা হচ্ছে এই বয়স্ক গাছটির শেকড় মাটির নিচে গত ৯,৫৫০ বছর ধরে টিকে থাকলেও বাইরের চার মিটার অংশটি কিন্তু পাল্টেছে বহুবার। আর এর কারণ হচ্ছে গাছটির শেকড় থেকে জন্ম নেয়ার প্রবণতা। এক্ষেত্রে একটি গাছ মরে যাওয়ার সময়ই একই শেকড় থেকে আরেকটি গাছ জন্ম নেয়।

ফলে শেকড় হিসেবে বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে পুরোন গাছ সুইডেনের এই ক্রিসমাস ট্রি। আর যদি আগাগোড়া কোনো গাছকে এই আখ্যা দিতে চাওয়া হয় সেটার হিসেব গড়াবে হোয়াইট মাউন্টেন পর্যন্ত। লাইভসায়েন্স অনুসারে এ গাছটি আবিষ্কার করে প্রথম রকি মাউন্টেন ট্রি রিং গবেষণা দল। তারাই সবকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে খুঁজে পায় সাদা পাহাড়ের ওপর প্রায় ৫,০৬২ বছর ধরে দাঁড়িয়ে থাকা পি. লঙ্গাইভা গাছটিকে। এর আগে অবশ্য ২০১৩ সাল পর্যন্ত ৪,৮৪৫ বছর বয়সের মেথুসিলাহ ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো আর বয়স্ক গাছের তালিকায়।

প্রতিদিন মানুষ নিজেকে উন্নত করছে। উন্নত করে তুলছে তার প্রযুক্তিকে। আর তাই বর্তমানে অতীতের শেকড়কেও খুঁজে ফেলতে সক্ষম হয়েছে তারা। চমকে দিতে পেরেছে প্রকৃতিকে। কে জানে, সামনে হয়তো প্রকৃতিও আরও হাজার বছরের পুরনো কোনো গাছ উপহার দিয়ে আবার চমকে দেবে মানুষকে। সেই চমক পাওয়ার অপেক্ষাতেই আজ পর্যন্ত গাছের ওপর গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন গবেষকরা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত