নিউজ ডেস্ক

০৬ জানুয়ারি, ২০১৫ ২৩:৪৫

জার্মানিতে পেজিডা সমর্থকের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীদের অবস্থান


ধর্মীয় চরমপন্থা না উদার সমাজ, বর্ণবাদের পুনরুত্থান না সমতার সমাজ, উগ্র জাতীয়তাবাদ না বিশ্ব ভ্রাতৃত্ব, সোমবার রাতে যেন এ সব প্রশ্নের উত্তর মিললো জার্মানির রাজপথে।


কথিত ইসলাম ফোবিয়া বা ইসলামিজেশনের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে এদিন জার্মানির প্রধান প্রধান নগরীর রাজপথে নেমে আসেন হাজার হাজার সাধারণ জার্মান নাগরিক।


অভিবাসী ও ইসলামমুক্ত সমাজের দাবিতে জার্মানিতে গত কয়েক মাস ধরেই বিক্ষোভ  ও প্রচারণা চালিয়ে আসছিলো বেশ কিছু চরম রক্ষণশীল ও কট্টর ডানপন্থি গ্রুপ। গত বছরের অক্টোবর থেকেই নিয়মিতভাবেই এ ধরনের বিক্ষোভের আয়োজন করে আসছে প্যাট্রিয়টিক ইউরোপিয়ান এগেইন্সট দি ইসলামিজেশন অব দি ওয়েস্ট (পেজিডা) নামের চরম বর্ণবাদী সংগঠন। সংগঠনটির ব্যানারে সংগঠিত হয়েছে নব্য নাৎসীরা সহ ধর্মীয় উগ্রপন্থি,ফুটবল হুলিগানরা। এর অংশ হিসেবে সোমবারও জার্মানির বেশ কয়েকটি শহরে বিক্ষোভ দেখায় সংগঠনটির সমর্থকরা। 

তবে বিচ্ছিন্নভাবে  মাঝে মাঝে প্রতিবাদ চোখে পড়লেও এতদিন এর বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো প্রতিবাদ চোখে পড়েনি জার্মানিতে।


কিন্তু সোমবার যেন জেগে উঠলো পুরো জার্মানি। পেজিডার আয়োজনের জবাবে বার্লিন, স্টুটগার্ট, কোলন সহ জার্মানির সব প্রধান প্রধান নগরীতে নেমে এলেন উদারপন্থি ও শান্তিপ্রিয় জার্মান নাগরিকরা। রাজপথে নেমে তারা বুঝিয়ে দিলেন পেজিডার এসব তৎপরতার মুখ বুঝে মেনে নিচ্ছে না উদারপন্থি জার্মানরা। তাদের সমর্থনে এগিয়ে এসেছেন জার্মানির প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব, বুদ্ধিজীবী ও ব্যবসায়ীরাও। সোমবারের মিছিল ও সমাবেশে সমর্থন জানিয়ে ধর্মীয় চরমপন্থা এবং কট্টর মতবাদের বিরুদ্ধে নিজেদের সমর্থন ব্যক্ত করেন তারা।


বার্লিনে পুলিশ জানিয়েছে ৫ হাজার উদারপন্থি বিক্ষোভকারী কয়েকশত পেজিডা সমর্থকের মিছিলের পথরোধ করে। 


স্টুটগার্টে প্রায় ২২ হাজার পেজিডা বিরোধী বিক্ষোভকারী ‍রাজপথে নেমে আসেন। একই রকমের মিছিল হয় মিউসতার ও হামবুর্গে।


এদচরমপন্থার বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান ব্যক্ত করেছেন জার্মানির মূলধারার রাজনৈতিক দল, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও বক্তিবর্গ। পেজিডার এসব সাম্প্রদায়িক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে এবং উদারপন্থি জার্মানদের বিক্ষোভের সমর্থনে সোমবার রাতে কোলন নগরীর ঐতিহ্যবাহী ক্যাথেড্রালের আলো বন্ধ রাখেন চার্চটির কর্তৃপক্ষ। 

নিজের অবস্থান স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করে ক্যাথেড্রালের ডিন নরবার্ট ফেলডহোফ বলেন, আমরা চাই অনেক রক্ষণশীল খ্রিস্টান যারা পেজিডার সমর্থক তারা যেন বিষয়টি ভেবে দেখেন তারা কি করছেন। 


একই সঙ্গে সব মত ও পথের স্বাধীনতার স্বপক্ষে সংহতি জানিয়ে নগরীর প্রাণকেন্দ্রের অনেক ভবন এবং সেতুর আলোও নিভিয়ে দেয়া হয়। 

কোলনের মেয়র ‍জার্গেন রোটার্স বলেন, আজ সত্যিকারের গণতন্ত্রের বার্তা পৌঁছে দেয়া হয়েছে। কোলনের মানুষ তাদের মত প্রকাশ করেছেন।তারা জোর দিয়ে এটাই বলতে চান যে, কোলনের অধিবাসীদের সঙ্গে চরমপন্থা এবং উগ্র জাতীয়তাবাদের কোনো সম্পর্ক নেই।


এদিকে ড্রেসডেন নগরীতে জার্মানির বিশ্বখ্যাত গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ভোকসওয়াগন পেজিডা বিরোধী ৠালির সমর্থনে তাদের গাড়ি তৈরির কারখানাকে অন্ধকার করে রাখেন। এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছেন তাদের এ অবস্থান একটি মুক্ত, খোলা ও গণতান্ত্রিক সমাজের পক্ষে।


এদিকে পেজিডা সহ চরমপন্থিদের এ সব কার্যক্রমকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেছেন জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মের্কেল। নিজের নববর্ষের ভাষণে তিনি বলেন, এর নেতাদের হৃদয়ে রয়েছে ঘৃণা।


তবে উগ্রপন্থি পেজিডার অন্যতম প্রধান সংগঠক ক্যাথরিন অরটেল তাদের আন্দোলনের প্রতি জার্মান মূলধারার এই মনোভাবের তীব্র সমালোচনা করেছেন। 

তিনি বলেন, আমরা যখন জার্মানিতে যথাযথ অভিবাসী আইনের অনুপস্থিতির ব্যাপারে কথা বলছি, তখন মূলধারার রাজনৈতিক দল এবং মিডিয়ায় আমাদের নিউ নাজি এবং বর্ণবাদী হিসেবে আখ্যা দিচ্ছে।


এ ব্যাপারে জার্মান সাংবাদিক সিগরান রটম্যান বলেন, পেজিডার আহ্বানে সাড়া দিয়ে রাজপথে নামা বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ডানপন্থি এবং বর্ণবাদী গ্রুপগুলোর পাশাপাশি ফুটবল দাঙ্গাকারীরাও ছিলো।


এদিকে পেজিডা বিরোধীদের কোনো স্বতন্ত্র প্লাটফর্ম না থাকলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংগঠিত হয়ে রাজপথে নামেন তারা। আর তাদের এই আহ্বানকে বিপুলভাবে সাড়া দেন সাধারণ জার্মান নাগরিকরা।


সাংবাদিক নিকোলাস কাইজার ব্রিল বলেন, আজ রাতে জার্মানি ইউরোপকে দেখিয়ে দিয়েছে কিভাবে উগ্র জাতীয়তাবাদকে প্রত্যাখ্যান করতে হয়।

প্রতি বছর ইইউভুক্ত যে কোনো দেশের থেকে বেশি সংখ্যক শরণার্থী ও অভিবাসী গ্রহণ করে থাকে জার্মানি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত