নিজস্ব প্রতিবেদক

০৩ মার্চ, ২০১৫ ১৮:৫৬

হঠাৎ ঢাকায় কেন ফারাবী?

বাংলা অনলাইন ও ব্লগ মাধ্যমের সঙ্গে যাদেরই পরিচিতি আছে তারা জানেন ফারাবী শফিউর রহমান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতেন। তার গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া। অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের সময়ে ফারাবীর ঢাকায় অবস্থান আর হত্যাকাণ্ডের দুই দিনের মাথায় ঢাকা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা অনেকের মনে প্রশ্ন জন্ম দিচ্ছে।

অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডে নিজের সরাসরি সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার না করলেও র‍্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার হুমকি দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন বহুল আলোচিত-সমালোচিত ফারাবী শফিউর রহমান। স্বীকার সম্পর্কিত এ তথ্য জানিয়েছেন র‍্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান।

তিনি বলেন, অভিজিৎ হত্যকান্ডের দুই ঘন্টার মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে খুনের দায় স্বীকার করে নেয় আনছারুল্লাহ বাংলা সেভেন নামক একটি সংগঠন। নিহত অভিজিতের ফেসবুক পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, শফিউর রহমান ফারাবী নামক এক যুবক তাকে বিভিন্ন সময়ে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছিল।

এদিকে ফারাবীর ফেসবুক একাউন্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায় ২৫ ফেব্রুয়ারি ছিল তার দেওয়া লাস্ট স্ট্যাটাস যেখানে যথারীতি ধর্মের অপব্যাখ্যা ছিল এবং একইভাবে ছিল অন্য ধর্মের প্রতি উস্কানিমূলক কথাবার্তা। তদন্তকারী কর্মকর্তাগণ অনুমান করছেন, হত্যাকাণ্ডের সাথে সুগভীর ষড়যন্ত্র ছিল বিধায় ফারাবী অনলাইনের চাইতে অফলাইনেই বেশি সময় কাটিয়েছেন।  

এর আগে একাধিকবার ফারাবী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অনেকের বিরুদ্ধে হুমকি সম্বলিত স্ট্যাটাস ও কমেন্টের মাধ্যমে হুমকি দিয়েছেন। ২৩ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখ ফারাবী তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখে-... বাংলাদেশে আরেকটি ১৫ আগস্টের ঘটনা ঘটা এখন সময়ের দাবি'।

ফারাবী নিজেকে ঠাণ্ডা মাথার খুনি দাবি করতেন। এ প্রসঙ্গে গত বছরের জানুয়ারিতে তিনি লিখেন- “আমি একটা ঠাণ্ডা মাথার খুনী। আমার সাথে অনেক চক্রের যোগাযোগ আছে শুধু এটাই জেনে রাখ’।

অভিজিৎ খুন হওয়ার সঙ্গে ফারাবী জড়িত নন বলে নিজে দাবি করেছেন। এ প্রসঙ্গে ২৭ ফেব্রুয়ারি তার একটা স্ট্যাটাসের কমেন্টে তিনি লিখেন- ‘আমি অভিজিৎ রায়ের হত্যাকাণ্ডে কোনভাবেই জড়িত না। আমি ঢাকায় থাকি না। অভিজিৎ যখন খুন হইছে আমি তখন বাসায় বসে আমার পিসি চালাচ্ছি’।

অথচ সোমবার ২ মার্চ ফারাবী ঢাকা থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময়ে গ্রেফতার হন।

ফারাবী নিজেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিজবুত তাহরীরের সদস্য বলে দাবি করেন। ২০১৪ সালের ১০ জানুয়ারি তিনি লিখেন- ‘আমি ভাই হিযবুত তাহরীর করি। আর হিযবুত তাহরীর একটা চরম বুদ্ধিবৃত্তিক দল। আমি হিযবুত তাহরীরের আন্তর্জাতিক মানের সদস্য’।

অভিজিতের বাবা ড. অজয় রায়ও দাবী করেন যে দেড় বছর ধরে ফেসবুকে তার সন্তানকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল শফিউর রহমান ফারাবী। এক বছর পূর্বে ফারাবীর ফেসবুক স্ট্যাটাসে দেখা যায় যে, ফারাবী তার মান্নান রাহী নামক এক ফেসবুক ফ্রেন্ডকে বলে যে, " অভিজিৎ রায় আমেরিকা থাকে। তাকে এখন হত্যা করা সম্ভব না। তবে সে যখন দেশে আসবে তখন তাকে হত্যা করা হবে"।

এছাড়াও সে তার অন্য এক ফেসবুক ফ্রেন্ডকে অভিজিৎ রায়ের স্ত্রী ও কন্যাসহ একটি ছবি পোষ্ট করে তাদের পরিচয় করিয়ে দিয়ে লেখে যে, "এটাই হলো অভিজিৎ রায়, তার স্ত্রী বন্যা আহমেদ ও তার মেয়ের ছবি, এরা সবাই আমেরিকাতে থাকে। অভিজিৎ হত্যাকান্ডের পরপরই ফারাবীকে তার এক ফেসবুক ফ্রেন্ড অভিজিতের রক্তাক্ত ছবি পাঠিয়ে বলে যে, "ছবি পাইছেন কি" উত্তরে ফারাবী ছবি পেয়েছে বলে জানায়। এরপর ওই ফেসবুক ফ্রেন্ড ফারাবীর অনুভূতি জানতে চাইলে সে বলে যে, "আমি গ্রেপ্তার হবো কাল পরশুর মাঝে"। এতে প্রমাণিত হয় যে, ব্লগার শফিউর রহমান ফারাবী, অভিজিৎ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত।

র‍্যাবের ওই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তারকৃত ফারাবী একসময় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হলেও বিভিন্ন কারনে লেখা-পড়া সম্পন্ন করতে পারেননি। ফারাবী ২০১০ সালের দিকে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন হিযবুত তাহরীর এ যোগদান করে বিভিন্ন কর্মকান্ডে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহনের অপরাধে সিলেট থেকে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিকট গ্রেপ্তার হয়।

পরে জামিনে বের হয়ে অনলাইনে উগ্র মতাদার্শ প্রচারে লিপ্ত হন। বেকার ফারাবীর কর্মতৎপরতা ক্রমেই সীমা অতিক্রম করে। বিশেষ করে মুক্তমনা ব্লগারদের সঙ্গে ধর্ম বিষয়ক আলোচনা নিয়ে বিতর্ক তৈরী করেন এবং অনেককে প্রাণনাশের হুমকি দিতে থাকেন। ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মিরপুরের পল্লবীতে ব্লগার রাজীব হায়দার খুন হলে ২৪ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তর করা হয় ফারাবীকে। ওই সময় তিনি অন লাইনে স্ট্যাটাস দিয়ে রাজীবের জানাযায় ঈমামতি করার ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন। অভিজিৎ এর হত্যাকান্ডটি সম্পূর্ণ সুপরিকল্পিত বিধায় হত্যাকারীরা কৌশলে বিভিন্নস্থানে আত্মগোপন করে।

নিজে স্থায়ীভাবে ঢাকার বাসিন্দা না হলেও অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের সময়ে ঢাকা ছিলে ফারাবী এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে ঢাকা ছেড়ে আত্মগোপনে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন তিনি।

সোমবার ভোরে যাত্রাবাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করে র‍্যাব। পরবর্তিতে আদালতে নেওয়া হলে আদালত তার ১০ দিনের রিমাণ্ড মঞ্জুর করেন।

 

 

 

 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত