সিলেটটুডে ডেস্ক

২৪ জুন, ২০১৬ ১৭:৪৯

‘এই সড়ক দিয়ে মহিলাদের যাতায়াত নিষেধ’

বরগুনা আমতলী উপজেলার আমড়াগাছিয়ায় সাইক্লোন শেল্টারের রাস্তায় নারীদের চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে স্থানীয় একটি খানকা শরিফ। কোনো নারী ওই রাস্তা দিয়ে যেতে চাইলে তাকে নানাভাবে হেনস্তা ও গালাগাল করা হয়। এ নিয়ে এলাকায় ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। দুর্যোগের সময় নারীরা কী করবেন- এমন প্রশ্নও উঠেছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ অধিকারকর্মীরা দ্রুত রাস্তাটি সবার জন্য উন্মুক্ত করার ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

আমড়াগাছিয়া গ্রামে ২০১৪ সালে ছালেহিয়া খানকা শরিফের কমপ্লেক্সের ভেতর কোস্টাল ক্লাইমেট চেঞ্জ রিজিলিয়েন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রজেক্টের (সিসিআরআইপি) মাধ্যমে এলজিইডির অর্থায়নে তিন কোটি ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ে দ্বিতল একটি সাইক্লোন শেল্টার ভবন নির্মাণ করা হয়। শেল্টারে যাতায়াতের জন্য ভবনটির দক্ষিণ পাশ দিয়ে ১ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার বাইপাস রাস্তাও করা হয়। এটি খানকার মূল ফটক দিয়ে আমতলী-পটুয়াখালী মহাসড়কের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। সম্প্রতি ওই রাস্তা দিয়ে নারীদের চলাচল নিষিদ্ধ করে সাইনবোর্ড টানিয়েছে খানকা কর্তৃপক্ষ। তাতে লেখা- 'এই সড়ক দিয়ে মহিলাদের যাতায়াত নিষেধ'।

আরও পড়ুন : পীরের ‘সম্মানে’ পুরো ইউনিয়নে টিভি দেখায় ‘নিষেধাজ্ঞা’

ভুক্তভোগী কয়েকজন নারী জানান, গেট দিয়ে কোনো নারী ঢুকতে দেখলেই প্রথমে বাঁশের লাঠি নিয়ে তাদের বাধা দেওয়া হয়। এর পর শুরু হয় অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল। কোনো নারী পাল্টা কথা বললে তাদের হেনস্তা করা হয়। এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে খানকা শরিফ পরিচালনায় থাকা মো. আবদুল মন্নান মৃধা জানান, পীরের নির্দেশে খানকা শরিফের সড়ক দিয়ে নারীদের চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর বেশি কিছু বলতে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন।

কুকুয়া ইউপি চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিন আহম্মেদ মাসুম তালুকদার বলেন, এ ধরনের অভিযোগ পেয়েছি। রাস্তাটি সবার জন্য খুলে দিতে আমি খানকা কর্তৃপক্ষের কাছে আহ্বান জানাই। কুকুয়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য ও ওয়ার্ড দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সভাপতি মো. সাঈদুর রহমান সোহাগ জানান, জনস্বার্থে ভবন এবং সড়ক সবসময় উন্মুক্ত রাখতে সম্মতি দিয়ে জমি দিয়েছিল খানকা কর্তৃপক্ষ। এখন কেন তারা সরকারি টাকায় নির্মিত সড়কে নারীদের চলাচলে বাধা দিচ্ছে এটা বোধগম্য নয়।

আমতলী উপজেলা উইমেন্স ক্লাবের সভাপতি ও আমতলী ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক রেহেনা মাহবুব ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নারীর প্রতি তারা এরকম আচরণ করতে পারে না। নারীর অধিকার নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংগঠন এনএসএসের নির্বাহী পরিচালক শাহাবুদ্দিন পাননা বলেন, সাইক্লোন শেল্টারে নারী-পুরুষের অবাধ প্রবেশগম্যতা রোধ করা যায় না। এটা সবার জন্য সবসময় উন্মুক্ত রাখা প্রয়োজন।

আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, সব জায়গায় সব নাগরিকের চলাচলের সমান অধিকার রয়েছে। খানকা শরিফের বিষয়টি সম্পর্কে আমি জানি না। তবে এরকম হয়ে থাকলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সূত্র : সমকাল

আপনার মন্তব্য

আলোচিত