সিলেটটুডে ডেস্ক

০৫ জুলাই, ২০১৬ ০২:৩৬

জঙ্গি সম্পৃক্ততায় চার বছর আগেই হাসনাতকে অব্যাহতি দেয় নর্থসাউথ

নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীরের পৃষ্ঠপোষকতার কারণে হাসনাত রেজা করিম নর্থ সাউথ ইউনির্ভাসিটি থেকে চাকরিচ্যুত হয়েছিলেন। ২০১২ সালে তাকেসহ চার জন শিক্ষককে এই কারণে অব্যাহতি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিসান বেকারি রেস্টুরেন্টের হামলার ঘটনায় জিম্মিদের মধ্যে জীবিত উদ্ধার হয়ে আসা নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক এই শিক্ষককে নিয়েও প্রশ্ন ওঠেছে। রোববার কে এই ‘জিম্মি’ শিরোনামে সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকম-এ একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

২০১২ সালের জুনের শেষ ভাগেই নর্থ সাউথ ইউনির্ভাসিটি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় হাসনাতকে। সেসময় গণমাধ্যমে তাকে নিয়ে সংবাদও প্রকাশ হয়। ২০১২ সালের ২৬ জুন তাকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে ইত্তেফাক। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, তিনিসহ চার শিক্ষক নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে দীর্ঘদিন ধরে হিযবুত তাহরীরের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন। এ ঘটনায়  ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি করে। কমিটির রিপোর্টের প্রেক্ষিতে ওই চার শিক্ষককে অব্যাহতি দেয়া হয়।

সে সময়ে অভিযোগের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করে। সেই কমিটির রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতেই অব্যাহতি দেয়া হয় হাসনাত রেজা করিমসহ চারজনকে।

বিশ্ববিদ্যালয়টির বিজনেস ফ্যাকাল্টির শিক্ষক ছিলেন হাসনাত করিম, ওই বিভাগেরই শিক্ষার্থী ছিলেন গুলশানের হোলি আর্টিসান বেকারিতে হামলাকারীদের একজন নিবরাস ইসলাম। ধারণা করা হচ্ছে, তখন থেকেই নিবরাসের সঙ্গে হাসনাত রেজা করিমের যোগাযোগ ছিলো। ২০১২ সালের মে মাসে প্রকাশিত বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কোর্সের নম্বরপত্রে নিবরাসের নামও পাওয়া গেছে। আর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হাসনাত রেজা করিম চাকরিচ্যুত হন ২০১২ সালেরই জুন মাসে।

মূলত হাসনাত করিমকে নিয়ে সন্দেহ হয় দক্ষিণ কোরীয় নাগরিক ডিকে হোয়াংয়ের মোবাইলে ধারণ করা ভিডিও ফুটেজ থেকে। ফুটেজে হাসনাত করিম নামের ওই জিম্মির সন্দেহজনক আচরণ লক্ষ্য করা গেছে।

সন্ত্রাসীদের হাতে ওই রেস্টুরেন্টে বিদেশিসহ মোট ৩৩ জন জিম্মি হন। এসময় পাশের একটি ভবন থেকে ওই কোরীয় জিম্মিকালীন পরিস্থিতি এবং যৌথ অভিযানের কিছু দৃশ্য ভিডিও করেন।

শনিবার সকালে সেনা কমান্ডোর নেতৃত্বে পরিচালিত যৌথ অভিযানে যে ১৩ জন জিম্মিকে জীবিত উদ্ধার করা হয় তাদের মধ্যে আছেন এই হাসনাত করিম এবং তার স্ত্রী ও দুই সন্তান।

কোরীয় নাগরিক ডি কে হোয়াং এর প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজে, ন্যাড়া মাথার চেক গেঞ্জি ও ‍জিন্স পরা এক ব্যক্তিকে একাধিক স্থানে সন্ত্রাসীদের সহযোগিতার করার মতো সন্দেহজনক আচরণ করতে দেখা যায়। হলি আর্টিসান রেস্টুরেন্টের কাচের তৈরি মূল ফটকটিতে তাকে বেশ কয়েকবার এসে ঘুরে যেতে দেখা যায়। দুই অস্ত্রধারীর সঙ্গে ছাদেও দেখা গেছে তাকে।

এই লোকটি সাথে হাসনাত করিমের চেহারার অনেক মিল পাওয়া যাচ্ছে। পরিবার থেকে জানানো হয়, তিনি সেদিন ছেলে রাইয়ানের জন্মদিন উদযাপনে সপরিবারে হলি আর্টিসান বেকারিতে গিয়েছিলেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাসনাত করিম ২০ বছর দেশের বাইরে ছিলেন। ইংল্যান্ডে প্রকৌশল পড়াশোনার পর যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে এমবিএ করেন। দেড় বছর আগে দেশে ফিরে আসেন তিনি। হাসনাত করিম নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ও ফ্যাকাল্টি বলেও জানা যায়।

হাসনাত রেজা করিম বেশ কিছুদিন আগে কাতার সফরও করেছেন। জিম্মি ঘটনার রাতে ও সকালে তাকে যে টি-শার্ট ও ন্যাড়া মাথায় হোলি আর্টিসানে দেখা গেছে একই টি-শার্ট পরা তার একটি ছবি রয়েছে ওই সফরের সময়েরও।

ছেলের বিষয়ে জানতে চাইলে রোববার রাত ১১টার দিকে বাবা রেজাউল করিম বলেন, ‘এখনও সে (হাসনাত করিম) বাসায় ফেরেনি। স্ত্রী, ছেলেমেয়েও রয়েছে ডিবি অফিসে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি ছেলের সাথে দেখা করতে ডিবি অফিসে যাইনি। তবে আমার ছোট ভাই গিয়েছিল। ডিবি অফিস থেকে তাকে বলা হয়েছে, রাতে নাতি ও নাতনিকে পাঠিয়ে দেয়া হবে। এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে পারবো না। নিষেধ আছে।’ বলেই ফোনের লাইন কেটে দেন তিনি।

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করেন কি না জানতে চাইলে রেজাউল করিম বলেন, ‘এখন নয়, অনেক আগে সেখানে শিক্ষকতা করতো।’

উল্লেখ্য, শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে গুলশান ২ নম্বরের হলি আর্টিসান রেস্টুরেন্টে একদল অস্ত্রধারী ঢুকে বিদেশিসহ বেশ কয়েকজনকে জিম্মি করে। সকালে সেনাবাহিনির নেতৃত্বে যৌথ অভিযান পরিচালনা করে ওই রেস্টুরেন্টের নিয়ন্ত্রণ নেয় নিরাপত্তাবাহিনী।

এ সময় ১৩ জন জিম্মিকে জীবিত উদ্ধারের পাশাপাশি এই ২০ জনের মৃতদেহ এবং ৬ জঙ্গির মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত