সিলেটটুডে ডেস্ক

০৫ জুলাই, ২০১৬ ১৯:০৩

বাংলাদেশ থেকে কার্যক্রম গুটিয়ে নিতে পারে জাইকা

গুলশানে সন্ত্রাসী হামলায় সাত জাপানি নাগরিক নিহত হওয়ার ঘটনায় বাংলাদেশ থেকে কার্যক্রম গুটিয়ে নিতে পারে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)।

সংস্থাটির একজন মুখপাত্রের বরাত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এ খবর জানিয়েছে। তবে ওই মুখপাত্রের নাম প্রকাশ করা হয়নি প্রতিবেদনে।

জাপানের সরকারি সংস্থা জাইকা উন্নয়নশীল দেশগুলোয় বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প পরিচালনা করে থাকে। বাংলাদেশেও সড়ক, সেতু, রেল এবং নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়নে বেশকিছু প্রকল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত জাইকা। মেট্রোরেল প্রকল্পেও ৭০ শতাংশের বেশি অর্থায়ন করার কথা সংস্থাটির। জাপানের অর্থায়ন প্রত্যাহার হলে এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন অনেকে।

গুলশানে সন্ত্রাসী হামলার পরিপ্রেক্ষিতে জাইকার ওই মুখপাত্র ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে বলেন, অতিসম্প্রতি বাংলাদেশে জাপানি নাগরিক হত্যার যে ঘটনা ঘটেছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে দেশটি থেকে কার্যক্রম গুটিয়ে নেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছে জাইকা।

তবে জাইকার বাংলাদেশ কার্যালয়ের কাছে এ ধরনের কোনো নির্দেশনা নেই বলে জানিয়েছেন ঢাকা কার্যালয়ের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার সায়েদুল আরেফিন। তিনি বলেন, এ-বিষয়ক কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই।

সাম্প্রতিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তাত্ক্ষণিক কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে সায়েদুল আরেফিন বলেন, গত বছর এক জাপানি নাগরিক হত্যার পর থেকে দ্বিতীয় ধাপের সতর্কতা এখনো জারি রয়েছে।

শুক্রবারের ওই সন্ত্রাসী হামলায় যে সাত জাপানি নাগরিক নিহত হয়েছেন, তার মধ্যে ওরিয়েন্টাল কনসালট্যান্টস গ্লোবাল কোম্পানির তিনজন প্রকৌশলী রয়েছেন। অন্যরা কাতাহিরা অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্টারন্যাশনালের কর্মী। এ দুটি প্রতিষ্ঠানই টোকিওভিত্তিক। প্রতিষ্ঠান দুটি বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পে পরামর্শক সেবা দিয়ে থাকে।

হত্যাকাণ্ডের পর গত রোববার জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে সাংবাদিকদের বলেন, যে সাত জাপানি নাগরিক নিহত হয়েছেন, তারা বাংলাদেশকে সহযোগিতার অংশ হিসেবে সেখানে অবস্থান করছিলেন। তাদের মৃত্যু গভীর অনুতাপের বিষয়।

জাইকার সবশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৪ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৫ সালের মার্চ পর্যন্ত অনুদানসহ বাংলাদেশকে মোট ৪৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার অর্থসহায়তা দিয়েছে সংস্থাটি। বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে এমন সব সহায়ক কর্মসূচি বাস্তবায়নের সঙ্গে যুক্ত জাপানের সাহায্য সংস্থাটি।

সম্প্রতি বাংলাদেশের ছয়টি প্রকল্পে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকার ঋণসহায়তা চুক্তি করেছে জাইকা। ঢাকা মাস র্যাপিড ট্রানজিট, যমুনা রেলসেতু নির্মাণ, আন্তঃসীমান্ত সড়ক যোগাযোগ উন্নয়ন, মাতারবাড়ী কয়লাবিদ্যুকন্দ্র, এনার্জি ইফিশিয়েন্সি অ্যান্ড কনজারভেশন প্রমোশন ফিন্যান্সিং ও ডিজাস্টার রিস্ক ম্যানেজমেন্ট এনহান্সমেন্ট প্রকল্পে এ অর্থ ব্যয় হওয়ার কথা রয়েছে।

রাজধানীর যানজট সমস্যা মোকাবেলায় ২০২১ সালের মধ্যে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেল নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। এতে মোট ব্যয় হবে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা, যার মধ্যে জাইকার ঋণ হিসেবে দেয়ার কথা ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা। যমুনা নদীর ওপর পৃথক রেলসেতু নির্মাণে ব্যয় হবে ১১ হাজার ১৫৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাপানের দেয়ার কথা ৮ হাজার ৮৩৬ কোটি টাকা। আন্তঃসীমান্ত সড়ক যোগাযোগ উন্নয়ন প্রকল্পটিতে ব্যয় হবে ২ হাজার ৮৭২ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাইকা দেবে ১ হাজার ৮৫১ কোটি টাকা। এছাড়া দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্পে প্রায় ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা, এনার্জি ইফিশিয়েন্সি অ্যান্ড কনজারভেশন প্রমোশন ফিন্যান্সিং প্রকল্পে ৯০০ কোটি টাকা ও মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুেকন্দ্র নির্মাণে প্রায় ২ হাজার ৯০০ কোটি টাকা ঋণ দেয়ার বিষয়ে চুক্তি করেছে জাইকা।

২০১৫-১৬ অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে জাপানি ঋণ মওকুফ তহবিলের সহায়তাপুষ্ট ১৩টি প্রকল্প ছিল। চলতি অর্থবছরের এডিপিতে এর সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। যেসব প্রকল্প ঋণ মওকুফের আওতায় রয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বালাইনাশক বিশ্লেষণ গবেষণাগারের গবেষণা সম্প্রসারণ ও চলমান রাখা, বৃহত্তর রংপুর চরাঞ্চলের জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে আখ চাষ, গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প, তাঁতবস্ত্র উন্নয়নে ফ্যাশন ডিজাইন, বেসিক সেন্টার ও প্রশিক্ষণকেন্দ্র স্থাপন। এছাড়া বাংলাদেশ রেলওয়ের পার্বতীপুর-কাঞ্চন-পঞ্চগড়, কাঞ্চন-বিরল মিটার গেজ সেকশনকে ডুয়াল গেজে ও বিরল-বিরল বর্ডার সেকশনকে ব্রড গেজে রূপান্তর এবং সৈয়দপুর রেলওয়ের ওয়ার্কশপ আধুনিকায়ন প্রকল্পও জাপানি ঋণ মওকুফ তহবিলের আওতাভুক্ত।
সূত্র : বণিক বার্তা

আপনার মন্তব্য

আলোচিত