সিলেটটুডে ডেস্ক

২০ জুলাই, ২০১৬ ২৩:৫১

গৃহস্থালিতে গ্যাসের দাম দুই চুলার জন্য ১২শ’ টাকা করার প্রস্তাব

গ্যাসের দাম গড়ে ৮৮ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে গ্যাস খাতের কোম্পানিগুলো। এর মধ্যে সর্বোচ্চ দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব রয়েছে গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত গ্যাসের— ১৪০ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৩০ শতাংশ দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে ক্যাপটিভ বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত গ্যাসের।

কোম্পানিগুলোর এসব প্রস্তাব নিয়ে আগামী ৭ আগস্ট গণশুনানি শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে জ্বালানি খাতের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। শুনানি চলবে ১৮ আগস্ট পর্যন্ত।

বিইআরসির তথ্য অনুযায়ী, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত (মিটারযুক্ত) প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম প্রস্তাব করা হয়েছে ১৬ টাকা ৮০ পয়সা। বর্তমানে এর দাম ৭ টাকা। এছাড়া গৃহস্থালি কাজে সিঙ্গেল বার্নারের (এক চুলা) দাম ৬০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ১০০ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। দুই চুলায় ব্যবহৃত গ্যাসের দাম প্রস্তাব করা হয়েছে ১ হাজার ২০০ টাকা। বর্তমানে দুই চুলার জন্য প্রতি মাসে পরিশোধ করতে হয় ৬৫০ টাকা।

গত বছর সেপ্টেম্বরে গৃহস্থালি কাজে ব্যবহুত গ্যাসের ক্ষেত্রে এক চুলার দাম ৪০০ থেকে বাড়িয়ে ৬০০ টাকা করা হয়। দুই চলার ক্ষেত্রে ৪৫০ টাকার স্থলে করা হয় ৬৫০ টাকা।

ক্যাপটিভ পাওয়ারে ব্যবহৃত প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম বিদ্যমান ৮ টাকা ৩৬ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৯ টাকা ২৬ পয়সা প্রস্তাব করা হয়েছে। এ হিসাবে ক্যাপটিভ বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম ১৩০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব এসেছে, যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

কোম্পানিগুলোর এ প্রস্তাব কার্যকর হলে পণ্য উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সহসভাপতি ফজলুল হক বলেন, বস্ত্র খাত সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। গত সেপ্টেম্বরে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। ক্যাপটিভে আবারো ১৩০ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। এমনটি হলে খাতটি মুখ থুবড়ে পড়বে। এমনিতেই দামের কারণে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছি না আমরা। গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে তাই শিল্পের সক্ষমতা বিবেচনায় নিতে হবে।

বিইআরসির তথ্য অনুযায়ী, সার উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম ২ টাকা ৫৮ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৪ টাকা ৪১ পয়সা প্রস্তাব করা হয়েছে। এ হিসাবে সার উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব এসেছে ৭১ শতাংশ। শিল্পে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম ৬২ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব রয়েছে। এ খাতে ব্যবহত গ্যাসের দাম বিদ্যমান ৬ টাকা ৭৪ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১০ টাকা ৯৫ পয়সা প্রস্তাব করা হয়েছে।

একইভাবে চা বাগানে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম ৬ টাকা ৪৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১০ টাকা ৫০ পয়সা প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবটি কার্যকর হলে চা বাগানে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম বাড়বে ৬৩ শতাংশ। এছাড়া বাণিজ্যিক খাতে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম ৭২ শতাংশ বাড়িয়ে প্রতি ঘনমিটার প্রস্তাব করা হয়েছে ১৯ টাকা ৫০ পয়সা। বর্তমানে এ খাতে ব্যবহৃত প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ১১ টাকা ৩৬ পয়সা। আর সিএনজি ও ফিড গ্যাসের দাম ২৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে প্রস্তাব করা হয়েছে ৪৯ টাকা ৫০ পয়সা। অর্থাৎ সিএনজি ও ফিড গ্যাসের দাম ৮৩ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব পেয়েছে বিইআরসি।

গ্যাসের আপস্ট্রিম খরচ, সঞ্চালন ও বিতরণ চার্জ এবং ভোক্তাপর্যায়ে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়ে গত ২৯ মার্চ থেকে ৩ এপ্রিল সময়ের মধ্যে আবেদন করে ছয়টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানি। ৩০ মার্চ গ্যাসের সঞ্চালন চার্জ পুনর্নির্ধারণের জন্যও আবেদন করে গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল)। প্রস্তাব যাচাই-বাছাই শেষে এ বিষয়ে গণশুনানির দিন ধার্য করেছে কমিশন।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ৭ আগস্ট জিটিসিএলের সঞ্চালন চার্জ নিয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এর পর ৮ আগস্ট বিতরণ ও ভোক্তাপর্যায়ে গ্যাসের মূল্য হার নিয়ে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের প্রস্তাব নিয়ে শুনানি হবে ১০ আগস্ট, বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের প্রস্তাব নিয়ে ১১ আগস্ট, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের প্রস্তাব নিয়ে ১৪ আগস্ট, জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেডের প্রস্তাব নিয়ে ১৬ আগস্ট ও সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানির প্রস্তাব নিয়ে ১৭ আগস্ট শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এছাড়া গ্যাসের বাল্ক মূল্যহার নিয়ে ১৮ আগস্ট পেট্রোবাংলা, বিজিএফসিএল, এসজিএফএল ও বাপেক্সের আবেদনের ওপর গণশুনানি অনুষ্ঠিত হবে।

বিইআরসির সচিব মো. ফয়জুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর আবেদন যাচাই-বাছাই করে প্রক্রিয়া অনুযায়ী গণশুনানির আয়োজন  করা হয়েছে। আগামী ৭ আগস্ট গণশুনানি শুরু হবে। শুনানিতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও ভোক্তা প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নিয়ম অনুযায়ী গণমাধ্যমে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে।
সূত্র : বণিক বার্তা

আপনার মন্তব্য

আলোচিত