সিলেটটুডে ডেস্ক

১৩ ফেব্রুয়ারি , ২০১৮ ০৩:৩৬

‘অস্বীকার’ মহীউদ্দীন খান আলমগীরের

অনিয়মের মাধ্যমে ঋণ প্রদান, কমিশন নেয়া, লোকবল নিয়োগ ও পরিচালনায় অব্যবস্থাপনাসহ উত্থাপিত সব অভিযোগ অস্বীকার করে স্পিকারের প্রটেকশন চাইলেন ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান মহীউদ্দীন খান আলমগীর। একই সাথে তিনি দাবি করেন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে যদি অনিয়ম হয়ে থাকে তাহলে তা শাখা ব্যবস্থাপকদের কারণে হয়েছে।

সোমবার সংসদের বৈঠকে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর এসব কথা বলেন। এর আগে বিকেল সাড়ে ৪টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়।

অনিয়মের অভিযোগ ওঠার পরে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান পদ থেকে সরে যাওয়া সাবেক মন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর বলেন, 'তিনটি পত্রিকা অভিযোগ তুলেছে—ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে ব্যক্তিগতভাবে ঋণ বিতরণের আগে আমি কমিশন নিয়েছি। আমার ৭৭ বছর বয়সে এত বড় অসত্য কথার সম্মুখীন কখনও হইনি। শিল্প ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় ছিলাম; কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলাম। শিল্পঋণ সংস্থার সভাপতি ছিলাম। আমার কার্যকলাপ সম্পর্কে এ ধরনের কোনো উদাহরণ কেউ দিতে পারেননি।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ ও সংসদ সদস্য মহীউদ্দীন খান আলমগীর বর্তমান সংসদে সরকারি হিসাব কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গত সরকারে কিছু দিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বেও ছিলেন তিনি।

২০১৩ সালে আওয়ামী লীগ সরকার কয়েকটি ব্যাংক অনুমোদন দিলে তার একটি (ফারমার্স ব্যাংক) পান মহীউদ্দীন খান আলমগীর। তবে কয়েক মাস ধরে ঋণ কেলেঙ্কারির দায়ে বেশ সমালোচনার মুখে রয়েছেন তিনি। সম্প্রতি ঋণদানে কমিশন নিয়েছেন তিনি এমন প্রতিবেদনও প্রকাশ হয় গণমাধ্যমে।

ফারমার্স ব্যাংক নিয়ে অভিযোগের জবাব দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকে থাকা নিজের ব্যাংক হিসাবের ‘পুরো অংশ’ সংসদে নিয়ে আসেন মহীউদ্দীন খান।

তিনি বলেন, এই অংশে কোথাও কেউ প্রমাণ করতে পারবেন না যে কোনো ঋণ গ্রহীতার কাছ থেকে আমার এখানে কোনো অর্থ ঢুকেছে। এ প্রসঙ্গে বলা প্রয়োজন, পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী আমি ১৭ জুলাই ১৩ কেটি টাকা গ্রাহকের হিসাব থেকে আমার হিসাবে নিয়ে এসেছি। আমি এ হিসাবটি উপস্থাপন করতে চাই। এখানে ১৭ জুলাই থেকে পরবর্তী ৭ বা ১০ দিনের হিসাব আছে।

‘এ ধরনের অপরাধ সমাজে একটি সুস্থ পরিবেশ সৃষ্টি করার প্রতিকূল। সুস্থ সামাজিক পরিবেশ প্রতিষ্ঠার জন্য আপনার (স্পিকার) প্রত্যবেক্ষণ চাইব।’

তিনি বলেন, প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘আমি চেয়ারম্যান থাকতে অননুমোদিত বিল দিয়েছে। কোনো অনুমোদন বহির্ভূত ঋণ ফারমার্স ব্যাংক, আমরা প্রক্রিয়াজাত করিনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন পর্যবেক্ষক দু’বছর ধরে ছিল, তারাও এটা অবলোকন করেছেন।’

‘এ ধরনের অনুমানভিত্তিক প্রতিবেদন আর্থিক ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা রাখার প্রতিকূল। এক্ষেত্রেও আপনার প্রতিরক্ষণ চাই।’

‘একই প্রতিবেদনে বলেছেন, ফারমার্স ব্যাংক অনুমোদিত ঋণের চেয়ে বেশি অননুমোদিত ঋণ দিয়েছি। এই অভিযোগও অস্বীকার করছি। ঋণ দেওয়ার কর্তব্য ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। তারা অনুমোদনের বাইরে কোনো ঋণ যদি দিয়ে থাকেন, তা তাদের দায়িত্ব। আমার জানা মতে, যত দিন চেয়ারম্যান ছিলাম এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি।’

কর্মচারী নিয়োগেও কোনো অনিয়ম ঘটেনি বলে দাবি করেন মহীউদ্দীন খান।

তিনি বলেন, ‘তারা (সাংবাদিক) তথ্য পেয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে। বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার করার ক্ষেত্রে আমার কিঞ্চিৎ ভূমিকা ছিল। আপনি (স্পিকার) অনুশাসন দেবেন যাতে বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার মেনে চলে।’

শাখা ব্যবস্থাপকদের উপর দোষ চাপিয়ে মহীউদ্দীন খান বলেন, ‘অনুমোদিত ঋণের বিপরিতে টাকা দেওয়া বা সঞ্চালন করার এখতিয়ার ব্যাংকের ম্যানেজারসহ সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তাদের। তারা এক্ষেত্রে অনুমোদনের বাইরে যদি কোনো ঋণ দিয়ে থাকেন এটা তাদের দায়িত্ব। আমি যতদিন চেয়ারম্যান ছিলাম আমরা জানামতে এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি।’

রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদন পাওয়া ফারমার্স ব্যাংক ২০০৩ সালে যাত্রা শুরুর কয়েক বছরেই ধুকতে থাকে। ব্যাংকটিতে ঋণ বিতরণে শত শত কোটি টাকা অনিয়ম ধরা পড়ার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক পর্যবেক্ষকও বসিয়েছিল।

বিভিন্ন চাপের মুখে পড়ে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানের পদ থেকে মহীউদ্দীন খান আলমগীর গত ২৮ নভেম্বর পদত্যাগ করেন। একই দিন অডিট কমিটির চেয়ারম্যানের পদ ছাড়েন মাহবুবুল হক চিশতী। তিন সপ্তাহের মাথায় অপসারণ করা হয় ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম শামীমকেও।

গত ২১ ডিসেম্বর সিলেটে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ব্যাংকটির দুর্দশার জন্য এর প্রতিষ্ঠাতাদের দায়ী করেন। সেদিন তিনি বলেন, ‘এর প্রতিষ্ঠাতাই ব্যাংকটিকে লুটপাট করে শেষ করে দিয়েছে।’ গত ২৩ জানুয়ারি সংসদে পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ জানান. ফারমার্স ব্যাংকে জলবায়ু তহবিলের ৫০৮ কোটি টাকা রাখা হয়েছিল। কিন্তু তারল্য সংকটে থাকা ব্যাংকটি এখন সে টাকা ফেরত দিতে পারছে না

সম্প্রতি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে দেওয়া এক প্রতিবেদনে ফারমার্স ব্যাংককে দেশের আর্থিক খাতের জন্য ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

মহীউদ্দীন খান সরকারি চাকরি ছাড়ার পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য হন; পরে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী করা হয় তাকে। সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে দুর্নীতি মামলায় সাজা হয়েছিল তার। পরে উচ্চ আদালত তা বাতিল করে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত