রাইআন কাব্য

১২ জুন, ২০১৫ ১৫:২৪

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিরোধে আইনের দাবিতে শনিবার ঢাকা-চট্টগ্রামে কর্মসূচি

নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার দাবিতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিবৃতিরোধে ঢাকার কর্মসূচির পাশাপাশি শনিবার বিকেলে চট্টগ্রামেও মানববন্ধন ও সমাবেশ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে ঢাকা-চট্টগ্রামের কর্মসূচির জন্যে ফেসবুকে দুইটি ইভেন্ট খোলা হয়েছে, চলছে ব্যাপক প্রচারণা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে বৃহস্পতিবার (৯ জুন) মানববন্ধন, সমাবেশ ও মিছিল কর্মসূচি পালিত হয়েছে। উপস্থিত সহস্রাধিক কণ্ঠে উচ্চারিত হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিরোধে Genocide Denial আইন চাই। ঢাকায় আগামিকাল বিকেল চারটায় অনুরূপ কর্মসূচি জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত হবে।

এদিকে চট্টগ্রামের কর্মসূচির জন্যে ফেসবুকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি রোধে Law Against Genocide Denial চাই (চট্টগ্রাম)’ শিরোনামে এক ইভেন্টের মাধ্যমে চট্টগ্রামের মানুষদের মধ্যে এ ব্যাপারে জনসচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা চালানো হচ্ছে। চট্টগ্রামের কর্মসূচির স্থান নির্ধারণ হয়েছে জামালখানস্থ জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণ, সময় বিকেল ৫:০০। 

ফেসবুক ইভেন্টের অন্যতম আয়োজক জালাল উদ্দিন রুমী জানান- আমাদের দাবী হলো এদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও তার ইতিহাসকে বিকৃত করে, এমন ব্যক্তি গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইন প্রণয়ন করা ও সে আইনের প্রয়োগ ।

তিনি আরও জানান- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে সমগ্র ইউরোপের ১৪টির অধিক দেশে গণহত্যা অস্বীকার করাকে দণ্ডনীয় অপরাধ ঘোষণা করা হয়েছে, এবং এই সম্পর্কিত স্বীকৃত ইতিহাসের যে কোন দৃষ্টিভঙ্গিতে অপব্যাখ্যার শাস্তি দিতে আইন প্রয়োগ করা হয়েছে । সে প্রেক্ষাপটে আমরা আমাদের ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ, আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাস এবং তিরিশ লক্ষ শহীদের মর্যাদা সমুন্নত রাখার স্বার্থে বাক স্বাধীনতার অপব্যবহার করে কথিত ‘ইতিহাসচর্চা’ রোধে কঠোর শাস্তিসহ আইন চাই। বর্তমান সময়ে যেখানে মুক্তিযুদ্ধবিরোধীরা নানা অজুহাতে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃতি মাধ্যমে অপপ্রচার চালাচ্ছে সেখানে এ ধরণের আইন প্রণয়ন প্রয়োজন।

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিরোধে আইনের দাবিতে ফেসবুকে খোলা ইভেন্টের বর্ণনায় বলা হয়েছে- ‘আমাদের বাংলাদেশ নিয়ে আমাদের গর্বের শেষ নেই।থাকবেই না বা কেন, বারবার ঘুরে দাঁড়ানো মানুষের দেশ এটা, দ্রোহ আর প্রেমের দেশ এটা। আমাদের কেউ দমিয়ে রাখতে পারেনি, পারবে না। রক্ত দিতে এদেশের মানুষ ভয় পায়নি কখনোই, বারবার মরে অধিকার আদায় করে নিয়েছে, নিজের ভাষার,নিজের সংস্কৃতির, নিজের ভূখণ্ডের, নিজের অস্তিত্বের।

এই দেশটার জন্যে, এই মানচিত্র আর পতাকাটার জন্যে বাংলা মায়ের সন্তানেরা অকাতরে জীবন দিয়েছে। এই দেশের মানুষেরা আনন্দে মনের কথা বলতে পারবে, শুধু এটুকু স্বপ্নের জন্যে শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত গুলি চালিয়ে গিয়েছে, আপন মনে হাসতে পারবে, খেলতে পারবে, পড়াশোনা করতে পারবে, ভালোবাসতে পারবে এইটুকু অধিকারের জন্যে বুকে মাইন বেঁধে ট্যাংক উড়িয়ে দিয়েছে। তাদের মৃত্যুকে আমরা বৃথা যেতে দিতে পারি না। যে মানুষগুলো আমাদের জন্যেনিজেদের জীবন দিয়ে দিলো, তাদের স্বপ্নগুলো আমাদের পুরণ করতে হবে।

তাদের অবদানকে অস্বীকার করে, তাদের স্বপ্নকে, তাদের অস্তিত্বকে অস্বীকার করে কেউ এদেশে থাকতে পারবে না। কথা বলার অধিকার এনে দিলো যে মানুষগুলো, বাকস্বাধীনতার অধিকার এনে দিলো যে মানুষগুলো, তাদের অস্বীকার করার অর্থ নিজের শেকড়কে অস্বীকার করা। নিজের অস্তিত্বকে অস্বীকার করা। এটা হতে দেয়া যাবে না। যারা এই দেশটাকেই স্বীকার করে না, যারা এই দেশের জন্মযুদ্ধের ইতিহাসটাই স্বীকার করে না, এই দেশের কোনো আইন তাদের জন্যে না, এই দেশের কোনো অধিকার- কোনো সুযোগসুবিধা তাদের জন্যে না; হতে পারে না

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধর সময় নাজি গণহত্যায় অসংখ্য মানুষ মারা যায়। ইউরোপের ১৪টি দেশে সেই গণহত্যাকে অস্বীকার করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এবছরেই ১১ ফেব্রুয়ারি ফরাসি ইতিহাসবিদ Vincent Reynouard কে দুবছরের জেল দেয়া হয়, Laws against Holocaust Denial এর মাধ্যমে। ইহুদীনিধন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন পুরো ইউরোপব্যাপী গণহত্যা, আর্মেনীয় গণহত্যাসহ সেসময়ের মানবতাবিরোধী অপরাধ সমর্থনের কারণে গত ১৬ বছরে উনিশজন প্রতিষ্ঠিত সুপরিচিত রাজনীতিবিদ, ঐতিহাসিক এবং ক্যাথলিক ধর্মগুরুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। জেল জরিমানা করা হয়েছে।

খোদ ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, যারা সবসময় আমাদের যুদ্ধাপরাধীর বিচারে নাক গলানোর চেষ্টা করে, তারাই ২০০৭ সালে Gayssot Act এর অনুরূপ আইন পাস করে, ন্যুরেমবার্গ ট্রায়ালকে স্বীকার করে অভিযুক্তকে অনধিক তিন বছরের সাজা দেয়ার পক্ষে সিদ্ধান্ত জানায়।

আমাদের দাবি খুব সাধারণ একটি দাবি।বাংলাদেশ Law against Genocide Denial চাই। এদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও তার ইতিহাসকে বিকৃত করে, এমন ব্যক্তি গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইন হোক, সে আইনের প্রয়োগ হোক। কেউ যেনো আর কখনোই আমাদের মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা, মুক্তিবাহিনীর কর্মকাণ্ড অথবা একাত্তরে পাকিস্তানী বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের কুকীর্তি সম্পর্কে অসত্য বক্তব্য না রাখতে পারে। এমন যেকোনো কিছুকে যেনো এদেশের আইনে বিচার করা হয়'।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত