সিলেটটুডে ডেস্ক

১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ১৮:২০

‘আমি আসব না’, আদালতকে খালেদার চিঠি

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির অভিযোগে দায়ের করা মামলা কারাগার চত্বরে স্থাপনের পর দ্বিতীয় দিনের কার্যক্রমে উপস্থিত হননি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বিশেষ এই আদালতের বিচারককে চিঠিতে জানিয়েছেন, তিনি আদালতে আর আসবেন না।

বুধবার দুপুরে পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগার চত্বরে বসানো আদালতে মামলার কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথম দিনের কার্যক্রমে বিএনপির চেয়ারপারসনের পক্ষের আইনজীবী আদালতে অনুপস্থিত থাকলেও বৃধবার দুজন আইনজীবী মামলার কার্যক্রমে অংশ নেন এবং খালেদা জিয়ার জামিন বৃদ্ধির জন্য আবেদন করেন।

আদালত খালেদা জিয়ার জামিন বৃদ্ধির ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য বৃহস্পতিবার দিন রেখেছেন। এ দিন খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে মামলার কার্যক্রম চলতে পারে কি না, সে বিষয়েও শুনানি হবে। আজ আদালত আরো জানিয়েছেন, এ মামলার আসামি জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খান জামিনে থাকবেন।

আদালত দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে শুরু হয়ে সোয়া ১টা পর্যন্ত চলে। মুলতবি ঘোষণার আগে বিচারক ড. মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘আমার কাছে একটি চিঠি এসেছে। এতে খালেদা জিয়া বলেছেন, তিনি আর আদালতে আসবেন না।’ এ অবস্থায় প্রধান আসামির অনুপস্থিতিতে মামলার কার্যক্রম চলতে পারে কি না, সে ব্যাপারে আইনগত ব্যাখ্যা হাজির করার জন্য আসামিপক্ষের আইনজীবীদের নির্দেশ দেন আদালত।

বুধবার সকাল থেকেই মামলার কার্যক্রমকে কেন্দ্র করে আদালতের বাইরে মোতায়েন করা হয় বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য। মামলায় খালেদা জিয়ার পক্ষে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া ও আমিনুল ইসলাম। দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষে ছিলেন মোশাররফ হোসেন কাজল। এই কারাগারেই জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে বন্দি আছেন বিএনপির চেয়ারপারসন।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় মোট আসামি চারজন। খালেদা জিয়া ছাড়া অপর তিন আসামি হলেন—খালেদা জিয়ার তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছেন মোট ৩২ জন। ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা করা হয়।

গত ৪ সেপ্টেম্বর আইন মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনে মামলার কার্যক্রম খালেদা জিয়া যেখানে বন্দি আছেন, সেই কারাগার চত্বরে আদালত বসানোর তথ্য জানানো হয়। পরদিন ৫ সেপ্টেম্বর মামলার কার্যক্রমে আইনজীবীরা না গেলেও খালেদা জিয়া হুইলচেয়ারে করে আদালতে আসেন।

সেদিন খালেদা জিয়া আদালতে ৩০ মিনিটের মতো ছিলেন। বিচারকের সামনে একটি হুইলচেয়ারে তিনি বসে থাকেন। এ সময় তাঁকে বিমর্ষ দেখাচ্ছিল। তার হাত-পা এবং মাথা কাঁপছিল। তাঁর সঙ্গে এ সময় তাঁর গৃহকর্মী ফাতেমা ছিলেন।  ফাতেমার হাতে ছিল একটি ছোট ব্যাগ।

এ সময় খালেদা জিয়া আদালতকে বলেন, ‘জজ সাহেবের কাছে কোনো কথা বা নিবেদন করা যায় না। উনি তারিখ দিয়ে উঠে চলে যান। আমাদের কারো কথা শুনেন না। সরকারের হুকুমে এবং নির্দেশে তিনি সব কিছু পরিচালনা করছেন। আমার পায়ে ব্যথা। ডাক্তার আমাকে পা সব সময় উঁচু করে রাখতে বলেছেন। হাতেও প্রচণ্ড ব্যথা। আমাকে জোর করে এখানে আনা হয়েছে। আমি খুবই অসুস্থ। আমি ঘন ঘন কোনো হাজিরা দিতে পারব না। রায় তো লেখাই আছে। আমার হাত-পা প্যারালাইজড হয়ে যাচ্ছে। আপনাদের যা ইচ্ছা রায় দেন, যত খুশি সাজা দিয়ে দেন।’

আজ ছিল কারাগার চত্বরে বসানো আদালতে মামলার কার্যক্রমের দ্বিতীয় দিন। এ দিন শুরুতেই বিএনপির চেয়ারপারসনের আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া কারাগারে আদালত বসিয়ে বিচারের আইনগত বৈধতা নিয়ে চ্যালেঞ্জ করেন। এ ধরনের আদালত সংবিধানসম্মত নয় উল্লেখ করে এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে আবেদন করা হবে বলেও জানান সানাউল্লাহ মিয়া।

খালেদা জিয়ার আইনজীবী আরো বলেন, ‘কারাগার চত্বরে আদালত চলতে পারে না। এটা সংবিধান পরিপন্থী। এখানে আদালত চালানোর মতো কোনো পরিবেশ নেই। তাই এখানে মামলার কার্যক্রম চলতে পারে না।’ এ সময় তিনি আদালতের স্থান অন্যত্র নির্ধারণেরও দাবি জানান।

একপর্যায়ে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা খালেদা জিয়ার জামিন বৃদ্ধির বিষয়ে আদালতে আবেদন করেন।

দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল আদালতে বলেন, ‘আসামিপক্ষের আইনজীবীরা একই সঙ্গে কারাগার চত্বরে বসানো আদালতকে সংবিধান পরিপন্থী বলছেন, আবার একই আদালতে খালেদা জিয়ার জামিন বাড়ানোর আবেদনও করেছেন। যদি ওই আদালত অসাংবিধানিক হয়, তাহলে কেন এখানে জামিন বাড়ানোর আবেদন করেছেন?’ তিনি মামলার যুক্তিতর্ক শুরুর জন্য আদালতের প্রতি আহ্বান জানান।

পরে আদালত থেকে বেরিয়ে গণমাধ্যমের কাছে মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘খালেদা জিয়া বর্তমানে কাস্টডিতে আছেন। কাস্টডিতে থাকা অবস্থায় তাঁকে আদালতে হাজির করার দায়িত্ব জেল কর্তৃপক্ষের। জেল কর্তৃপক্ষ তাঁকে হাজির করবেন, মাননীয় আদালত তাঁর বিচার করবেন। সে ক্ষেত্রে খালেদা জিয়া যদি না আসেন, তিনি যদি অনিচ্ছা প্রকাশ করেন, আমরা বলেছি, তাঁর অনুপস্থিতিকে উপস্থিতি হিসেবে ধরে নিয়ে মামলার আইনগত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য।’

অপরদিকে আদালত চত্বরে বিএনপির চেয়ারপারসনের আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, ‘খালেদা জিয়ার জামিন বাড়ানো বা তাঁর অনুপস্থিতিতে মামলার কার্যক্রমের ব্যাপারে আগামীকাল আমরা আইনগত ব্যাখ্যা দিয়ে শুনানি করব।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত