সিলেটটুডে ডেস্ক

২০ ফেব্রুয়ারি , ২০১৯ ২৩:১২

একুশ শিখিয়েছে মাথানত না করা : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মর্যাদার সাথে দেশের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতিকে সুরক্ষা এবং চর্চার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, আসুন আমাদের মাতৃভূমিকে এমনভাবে গড়ে তুলি যেন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এর সুফল ভোগ করতে পারে এবং আমরা এক অনন্য মর্যাদায় চলতে পারি।

একুশের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ মাথা উঁচু করে চলবে কারণ একুশ আমাদের শিখিয়েছে মাথা নত না করা। একুশ আমাদের শিখিয়েছে কিভাবে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করা যায়। কিভাবে নিজের মাতৃভাষা, শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য সবকিছুকেই রক্ষা করা যায়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অমর একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় আয়োজিত একুশে পদক ২০১৯ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, 'আমাদের স্বাধীনতা, ভাষার অধিকার ও সংস্কৃতির সুরক্ষা ও চর্চার পাশাপাশি পরবর্তী প্রজন্মের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা আমাদের কর্তব্য।'

দেশ গড়তে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম; অনেক সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে আমাদের অর্জিত সুফলগুলো ভোগ করুক, যাতে করে তারা উন্নত জীবনযাপন করতে পারে।

বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ যেন পিছিয়ে দিতে না পারে এবং তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা আরও বলেন, একুশ (ভাষা আন্দোলন) আমাদের শিখিয়েছে মাথা নত না করা। একুশ আমাদের শিখিয়েছে কীভাবে নিজের অস্তিত্ব রক্ষা করা যায়, নিজের মাতৃভাষাকে রক্ষা করা যায়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকারের লক্ষ্যই হলো বাংলাদেশকে একটি মর্যাদার আসনে নিয়ে যাওয়া এবং বাঙালি জাতি হিসেবে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে থাকা। ‘আমরা এ লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।’

ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য যে একসময় তার অবদান ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা হয়েছিল।

জনগণ যদি জাতির পিতার জীবনীগ্রন্থ ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ পড়ে তাহলে জানতে পারবে কীভাবে ভাষা আন্দোলন শুরু হয়েছিল, যোগ করেন তিনি।

বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা জানান, পাকিস্তানি গোয়েন্দা শাখার (আইবি) ২৩ বছরের গোপন নথি থেকে ১৪টি খণ্ডে একটি বই প্রকাশ করা হচ্ছে। সেই গোপন নথি থেকে পর্যায়ক্রমে ১৯৪৮-১৯৫০ ও ১৯৫১-১৯৫২ সালের ঘটনাবলী নিয়ে ইতিমধ্যে দুটি খণ্ড প্রকাশ করা হয়েছে।

এসব গোপন নথি পড়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান সম্পর্কে জনগণ জানতে পারবে, যোগ করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা।

শেখ হাসিনা বলেন, দেশের স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দিয়েছিলেন। তা অনুসরণ করে পরবর্তীতে সরকার প্রধান হিসেবে তিনিও সেখানে বাংলায় ভাষণ দিয়েছেন।

১৯৯৬-২০০১ সালে তার সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের অবকাঠামো নির্মাণ শুরু হয়েছিল জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকার ক্ষমতায় এসে তা বন্ধ করে দিয়েছিল।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় এসে সে নির্মাণ কাজের শেষ করেছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

এর আগে নিজ নিজ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২১ বিশিষ্ট নাগরিকের মাঝে ‘একুশে পদক ২০১৯’ তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে পুরস্কার বিজয়ী অথবা তাদের পরিবারের সদস্যদের হাতে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মর্যাদাপূর্ণ বেসামরিক সম্মাননা- একুশে পদক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।

এ বছর যারা একুশে পদকে ভূষিত হয়েছেন :
ভাষা আন্দোলনে মরহুম অধ্যাপক হালিমা খাতুন (মরণোত্তর), এডভোকেট গোলাম আরিফ টিপু ও অধ্যাপক মনোয়ারা ইসলাম একুশে পদক ২০১৯ পেয়েছেন।

ভাষা ও সাহিত্যে একুশে পদক পেয়েছেন ছয়জন। তারা হলেন- রিজিয়া রহমান, ইমদাদুল হক মিলন, অসীম সাহা, আনোয়ারা সৈয়দ হক, মইনুল আহসান সাবের ও হরিশংকর জলদাস।

শিল্পকলায় সংগীত বিভাগে একুশে পদক পেয়েছেন তিনজন। তারা হলেন- সুবীর নন্দী, মরহুম আজম খান (মরণোত্তর) ও খায়রুল আনাম শাকিল।

শিল্পকলায় অভিনয় বিভাগে তিনজন একুশে পদক পেয়েছেন। তারা হলেন- লাকী ইনাম, সুবর্ণা মুস্তাফা ও লিয়াকত আলী লাকী।

এছাড়াও শিল্পকলায় আলোকচিত্র বিভাগে সাইদা খানম ও চারুকলা বিভাগে জামাল উদ্দিন আহমেদ একুশে পদক পেয়েছেন।

মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্য, গবেষণায় ডক্টর বিশ্বজিত ঘোষ ও ড. মাহবুবুল হক এবং শিক্ষায় ডক্টর প্রণব কুমার বড়ুয়া একুশে পদক পেয়েছেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত