সিলেটটুডে ডেস্ক

২০ মে, ২০১৯ ১২:০৩

সাগরে ৬৫ দিন মাছ ধরতে নিষেধাজ্ঞা

ইলিশের ভরা মৌসুমে বরগুনাসহ দেশের উপকূলীয় জেলার সাগরে ৬৫ দিন মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে।

সোমবার (২০ মে) থেকে এ নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়।

নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে মৎস্যজীবীরা মানববন্ধন, সভা সমাবেশ এবং প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপিও পেশ করেছিলেন।

কারণ নিষেধাজ্ঞা চলাকালে জেলেদের কোনও ধরনের সরকারি সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা আসেনি। ফলে এই সময়ে কর্মহীন হয়ে পড়া বরগুনার লক্ষাধিক মৎস্যজীবী জীবনযাপন নিয়ে শঙ্কায় আছেন।

২০১৫ সালে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মৎস্য-২ (আইন) অধিশাখা দেশের সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে বঙ্গোপসাগরে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এতদিন এই নিষেধাজ্ঞার বাস্তবায়ন ছিল না। তবে এ বছর মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে এই আইনের ওপর গুরুত্বারোপ করে তা বাস্তবায়নে নির্দেশনা দেওয়া হয়।

নির্দেশনায় ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে সব ধরনের মাছ আহরণের জন্য ব্যবহৃত যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক নৌযান চলাচলেও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। তবে স্থানীয় নদ-নদী এই নিষেধাজ্ঞা মুক্ত থাকবে।

বরগুনাসহ উপকূলীয় জেলেরা জানান, মৎস্য বিভাগের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ইলিশের ভরা মৌসুম হচ্ছে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু জুনের মাঝামাঝি সময় থেকে ইলিশের মৌসুম শুরু হয়। এই তিন/সাড়ে তিন মাসে বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন পয়েন্টে ইলিশ মাছ ধরেন তারা। প্রতিবছর যে পরিমাণ ইলিশ আহরণ করায় হয় তার দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি ইলিশ ধরা পড়বে এই সময়ের মধ্যে।

৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা ছাড়াও মা ইলিশের নিরাপদ প্রজননের জন্য সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ থাকে। ইলিশের বেড়ে ওঠা নিশ্চিত করতে ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন অর্থাৎ আট মাস জাটকা (৯ ইঞ্চির কম সাইজের ইলিশ) নিধনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এছাড়া একই সময়ের মধ্যে ইলিশের অভয়াশ্রমগুলোয় পর্যায়ক্রমে দুই মাস করে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়।

পাথরঘাটার পদ্মা গ্রামের জেলে আলম মোল্লা বলেন, ইলিশের ভরা মৌসুমে এই নিষেধাজ্ঞা দিলে আমাদের তো না খাইয়া মরতে হবে। সারাবছর মাছ পাই না। এই সময় যাও মাছ ধরমু তাও যদি নিষেধাজ্ঞা থাহে তাইলে মোরা খামু কি?

বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি আবদুল খালেক দফাদার জানান, ইলিশের ভরা মৌসুমে এই নিষেধাজ্ঞার কতটা যৌক্তিকতা আছে আমাদের বোধগম্য নয়। এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না করা হলে বরগুনাসহ উপকূলীয় জেলেদের না খেয়ে মরতে হবে।

নিষেধাজ্ঞার ফলে বরগুনার কমপক্ষে ৬০-৭০ হাজার জেলে বেকার হয়ে পড়বো আগামী দুই মাসের জন্য। শুধু বরগুনায় এই পেশা সংশ্লিষ্ট জেলে, আড়ৎদার, পাইকার ও শ্রমিকসহ লক্ষাধিক মানুষ কর্মহীন থাকবে এই সময়ে। বরগুনার ৬টি উপজেলা (বরগুনা সদর, আমতলী, তালতলী, পাথরঘাটা, বেতাগী ও বামনা) উপজেলায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৪৭ হাজার ৪৪০ জন। এছাড়াও আরও কমপক্ষে ২০-৩০ হাজার অনিবন্ধিত জেলে আছেন।

বরগুনা জেলা ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী জানান, ‘এই সময় ইলিশের পুরো মৌসুম শুরু হয়। তাই এখন নিষেধাজ্ঞা থাকলে উপকূলের জেলেদের না খেয়ে থাকতে হবে। পথে বসতে হবে জেলে পরিবারগুলোর।’

তিনি আরও বলেন, ‘ইলিশের প্রজনন মৌসুম, জাটকা মৌসুমসহ বিভিন্ন সময় ৮-৯ মাস জেলেদের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকে। এই সময়ে জেলেদের মাত্র ৪০ কেজি চাল দিয়ে সহায়তা করা হয়। তাও অনেক সময় বিতরণে থাকে অনিয়মের অভিযোগ। সর্বশেষ এই ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলো জেলেদের কোনও রকম সহায়তা না দিয়েই। এতে জেলেদের দুর্দিনের শেষ থাকবে না। ’

বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ২০১৫ সালে জারি হওয়া এই আইনটি বাস্তবায়নের জন্য মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে প্রচার চালানো হচ্ছে। এই আইন অমান্য করে মাছ ধরলে তাদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার যৌক্তিকতা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গবেষকরা মনে করেছেন মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধির জন্য এই সময়ে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া উচিত। আশা করি জেলেরা এই আইন মানলে আমাদের মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি তারা উপকৃত হবে।’

নিষেধাজ্ঞা চলাকালে জেলেদের কোনও সহায়তা দেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত সহায়তা দেওয়ার কোনও খবর আমাদের কাছে নেই।’

 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত